বিরক্ত সিদ্দিকুল্লা, এ বার কি মুসলিম ভোট কমবে মমতার?

লোকসভা নির্বাচনের আগে পুরোনো কথা মনে করিয়ে মমতাকে চাপ দিচ্ছেন সিদ্দিকুল্লা

 |  3-minute read |   18-04-2018
  • Total Shares

মৌলবাদীদের বিশ্বাস অর্জন করা ও তাদের হাতে রাখার জন্যই অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ফ্রন্টের (এইইউডিএফ) নেতা তথা জামিয়াত উলেমা-ই-হিন্দের সভাপতি সিদিকুল্লা চৌধুরীকে মন্ত্রিসভায় সামিল করার সিদ্ধান্ত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই সিদিকুল্লা চৌধুরীই এখন বেশ ক্ষুব্ধ।

জনসমক্ষে বেশ দৃঢ়ভাবেই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদেশ্যে বলছেন যে নন্দীগ্রামের ভূমি আন্দোলনে জামিয়াতের অবদান ভুলে গেলে চলবে না। মন্ত্রিসভার কোনও সদস্য এর আগে এতটা সাহস দেখাননি। এই ঘটনার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তড়িঘড়ি সিদিকুল্লার কাছে ছুটে যান এবং জনসমক্ষে হুমকি না দিয়ে দলের অভ্যন্তরেই সব মনোমালিন্য মিটিয়ে নিতে অনুরোধ তাঁকে অনুরোধ করেন।

কিন্তু এমন কী ঘটল যে সিদিকুল্লা চৌধুরী ক্ষুব্ধ হলেন? ওঁর রেগে যাওয়ার প্রধান কারণ হল তৃণমূল কংগ্রেসের হিন্দু ভোটারদের তোষণ।

হিন্দুত্বের উপরে বিজেপি যে ভাবে দাদাগিরি চালাচ্ছে সেটাই বানচাল করতে ও হিন্দু ভোটারদের নিজের দিকে আকর্ষণ করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে মরিয়া হয়ে উঠেছেন, সেটা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন নেতার পছন্দ নয়। জনরোষ সৃষ্টি না হলেও, রাজ্যের নানা প্রান্তে বারবার সাম্প্রদায়িকতার স্ফূলিঙ্গ দেখা গিয়েছে।

২০১৭ সালে বসিরহাট দাঙ্গার পরে মমতা বন্দোপাধ্যায় মৌলবাদীদের, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েগুলির উদেশ্যে সাবধানবাণী দিয়ে বলেন যে, তাঁর নীরবতাকে কেউ যেন তাঁর দুর্বলতা বলে ভুল না করেন। এই কথার মধ্য দিয়ে তিনি মেনে নেন যে মৌলবাদীদের তিনি পায়ের তলার জমি দিয়েছিলেন, আর তারা তার ফায়দা নিয়েছে।

বসিরহাট-সহ উত্তর ২৪ পরগনার কয়েকটি সীমান্তবর্তী এলাকায় হিন্দু ভোটের মেরুকরণকে হাতিয়ার করে বিজেপি তার ফায়দা তুলেছে। তাই চাপে পড়ে, ২০১০ সালের দেগঙ্গা দাঙ্গায় মদত দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় তৃণমূল নেতা ও বসিরহাটের প্রাক্তন সাংসদ হাজি নুরুলকে ওখানকার আসন ছেড়ে মুর্শিদাবাদে যেতে বাধ্য করা হয়। নুরুল ভোটে হেরে গেলে, ২০১৬ সালে সান্ত্বনা-স্বরূপ তাঁকে উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া থেকে জিতিয়ে বিধায়ক করা হয়।

ঠিক এ ভাবেই কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসাধারণের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন পাশাপাশি বিজেপির খেলাতেই তাদের কিস্তিমাত করে দিতে চেয়েছেন। মননের বিচারে পশ্চিমবঙ্গ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজ্য, এখানকার মানুষ রাজনীতির ব্যাপারে মনের কথা শোনেন ধর্মের নয়। তাই নির্দিষ্ট কোনও একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে সমস্ত হিন্দু ভোট পাওয়াটা অসম্ভব। এই কথা অনুভব করেই মমতা বন্দোপাধ্যায় হিন্দু ভোট নিজের দিকে টেনে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাতে তাঁর দল এই ভোটের বড় একটা অংশ পায়। তাই ধর্মের ভিত্তিতে কার্যত আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যাওয়া রুখে কিছুটা হিন্দুত্বের দিকে ঝুঁকে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

romita_body_041818011232.jpg

নির্দষ্ট একটি রাজনৈতিক প্রচারের পর যেই তিনি বুঝতে পারলেন যে মানুষ হয়ত মনে করবেন যে মমতা বন্দোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন, ঠিক তখনই ব্রাহ্মণ পরিবারে বেড়ে উঠেছেন দাবি করে তিনি তাঁর পরের প্রচারসভায় সংস্কৃত শ্লোক ও গায়ত্রীমন্ত্র আওড়াতে শুরু করলেন।

এ ধরণের কার্যকলাম মুসলমানদের একাংশ ঠিক মেনে নিতে পারছেন না, যে সাত শতাংশ মুসলিম ভোট পক্ষে চলে আসায় ৩৪ বছরের বামশাসনের অবসান ঘটাতে পেরেছিলেন মমতা, এবার আশঙ্কার কারণ তারাই। তাই তাদের দাবিগুলোকে যদি ক্ষমতাসীন সরকার অচিরেই না মেনে নেয়, তা হলে পাশা ওল্টাতে সময় লাগবে না।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন জানালেন যে এবার তাঁর দল রামনবমী ও হনুমানজয়ন্তী পালন করবে, তখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আরও ক্ষুণ্ণ হয়। গত বছর, বিজেপি রামনবমী পালন করার পরেই তারা এখানকার অবাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু যতদিনে তৃণমূল নড়েচড়ে বসল ততদিনে খেলা অনেকটাই এগিয়ে এগিয়েছে।

শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে এ বছর তৃণমূল কংগ্রেসের সমস্ত বড় নেতা মিলিত হয়ে ঘাসফুল চিহ্ন নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য পথযাত্রার আয়োজন করেছিল। তৃণমূলের পদযাত্রার সামনে বিজেপির তলোয়ার নিয়ে পদযাত্রা একটু ম্লানই হয়ে পড়েছিল।তৃণমূলের এক নেতা ও জামিয়ত-ই-হিন্দের মতে বিজেপিকে নকল করছে তৃণমূল। সিদিকুল্লা তাঁর দলে শীর্ষ নেতাদের জানাতে বাধ্য হন যে দলের সাম্প্রতিক ভাবমূর্তি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাঙ্গন ধরিয়েছে। কিন্তু তাঁর কথায় তখন কেউ কর্ণপাত করেননি।

তিনি ভেবেছিলেন যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে তাঁর ৩৪ জন অনুগামীকে মনোনয়নপত্র দেওয়া হবে, কিন্তু সে ব্যাপারে তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নজর কাড়তে পারেননে। তাই তাঁকে খুব দ্রুত কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি হল, মমতাকে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি যখন একমাত্র তৃণমূল সাংসদ হয়ে বামেদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তখন মুষ্টিমেয় কয়েকটি গোষ্ঠী, যারা মমতার পাশে ছিল, তাদের মধ্যে সিদ্দিকুল্লাও ছিলেন।

দল এখন সিদিকুল্লার সঙ্গে মিটমাট করে নেওয়ার চেষ্টা করলেও তাঁর সঙ্গীদের জন্য দল কিছু করতে পারবে না। পঞ্চায়েত ভোট শেষ না হওয়া অবধি কোনও রকম পদক্ষেপ না করলেও উনি কিন্তু চুপ থাকবেন না। মৌলবাদী হিসেবে মানুষকে সম্মোহিত করার যে বিশেষ গুণ সিদিকুল্লার রয়েছে সেটা একদম অস্বীকার করা যাবে না।

(সৌজন্যে মেল টুডে) 

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ROMITA DATTA ROMITA DATTA

The writer is Associate Editor, India Today.

Comment