স্বৈরতন্ত্রের অন্ধকার ঘুচিয়ে গণতন্ত্রের আলো নিয়ে এলেন মালদ্বীপের মানুষ

জোট বেঁধেছিল সব বিরোধী দল, বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় ইব্রাহিম মহম্মদ সোলি

 |  2-minute read |   27-09-2018
  • Total Shares

কয়েকদিন আগেই আমরা পার করে এসেছি বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস। সম্প্রতি, দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্ট্যান্স বিশ্বে গণতন্ত্র নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষায় ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের উপর মানুষের আস্থা কমছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে।

এশিয়ার গণতান্ত্রিক মানচিত্রে কালো বিন্দু হল কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ। গত ২৩ সেপ্টেম্বর মালদ্বীপে সাধারণ নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে মালদ্বীপে ফের গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে সেখানকার মানুষ ওই দ্বীপরাষ্ট্র থেকে স্বৈরত্বন্ত্রের কালো দাগ মুছে ফেলেছে।

মাত্র ১০ বছর আগে মালদ্বীপে নতুন সংবিধান অনুযায়ী বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়। এই দ্বীপরাষ্ট্রে প্রথম গনতান্ত্রিক নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মহম্মদ নাশিদ। কয়েকবছর পার হতেই মাথা তোলেন আব্দুল্লা ইয়েমিন। ঘোর স্বৈরাচারী ইয়েমিনের উত্থানে দেশ ছেড়ে পালতে হয়েছিল নাশিদকে। সমস্ত গণতান্ত্রিক রীতিনীতিকে বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতা বাড়াতে থাকেন ইয়েমিন।

body1_092718061920.jpgস্বৈরাচারী শাসন ভেঙে পড়ল মালদ্বীপে [ছবি: এপি]

গণতন্ত্র বিদায় নিয়ে মালদ্বীপে ছায়া বিস্তার করে স্বৈরাচার। সারা বিশ্বেই মালদ্বীপে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে হৈচৈ শুরু হয়। এই অবস্থায় মালদ্বীপ উন্নত দেশগুলোর রক্তচক্ষুর সামনে পড়ে।

তবে স্বৈরাচারী শাসক আব্দুল্লা ইয়েমিন তাঁর কৌশল বদলান। তিনি মনে করেন নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলে মানুষকে বোকা বানানো যাবে। তাই ২০১৩ সালে মালদ্বীপে নির্বাচন হয়। সংবিধান বহির্ভূত ভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করে সেই নির্বাচনে জিতে যান ইয়েমিন। যদিও মাত্র ৬,০০০ ভোটে জিতে ছিলেন তিনি। তার পরেই ভারত মহাসাগরে ৪ লক্ষ জনসংখ্যার এই দ্বীপরাষ্ট্রে পুরপুরি স্বৈরতান্ত্রিক শাসন কায়েম হয়।

ইয়েমিনের আমলে গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকার শব্দ দুটি উধাও হয়ে যায়। এবারের নির্বাচনেও একই ভাবে জিতে যাবেন বলে আশা ছিল ইয়েমিনের। সেই কারণে একে একে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের গারদে পোরা এবং ভয় দেখানো শুরু হয়। শুধু বিরোধীরাই নয়, বাদ পড়েননি নিজের জোট সরকারের শরিক দলের নেতারাও।

এক সময়ে সংসদও বন্ধ করে দিয়ে ছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারও কেড়ে নিয়ে ছিলেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলায় ন'জন ইয়েমিনের বিরোধী দলের নেতাকে খালাস করে। এর পরেই, সংবিধান অগ্রাহ্য করে জরুরি অবস্থা জারি করেন ইয়েমিন। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশনকেও প্রহসনে পরিণত করেন তিনি। নির্বাচন কমিশনার পদে বসান নিজের বিশ্বস্ত লোককে। এমনকি, ইয়েমিনের নির্বাচনী প্রচারেও নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের পা মেলানোর দৃশ্যও দেখা যায়।

body_092718061955.jpgএবার গণতন্ত্রের জয়গান দ্বীপরাষ্ট্রে [ছবি: এপি]

নির্বাচন কভার করতে এলে বিদেশি সাংবাদিকদের শুধু ভিসা নয় মালদ্বীপ পুলিশের কাছ থেকে চারিত্রিক সংসাপত্রের ছাড়পত্রও পেতে হবে বলে নির্দেশিকা জারি করা হয়।

এই অবস্থায় ইয়েমিনের নির্বাচনে জেতা নিয়ে কারও কোনও সংশয় ছিল না। এই কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘ মালদ্বীপের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে অস্বীকার করেন। কারণ, ওই দুই সংস্থার ভয় ছিল নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে জিতে গেলে তাদের পর্যবেক্ষক থাকার কারণে সেই নির্বাচন আইনি স্বীকৃতি পেয়ে যাবে।

তবে স্বৈরাচারী শাসক এবং গোটা বিশ্বের সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে দিলেন মালদ্বীপের গণতান্ত্রিক মানুষ। স্বৈরতন্ত্রের অন্ধকার ঘুচিয়ে গণতন্ত্রের আলো নিয়ে এলেন মালদ্বীপের মানুষ।

নির্বাচন শেষে ফলাফল বেরোতে দেখা গেল পরাজিত হয়েছেন স্বৈরতন্ত্রী আব্দুল্লা ইয়েমিন। ৩৮,৪৮৪ ভোটে জিতেছেন ইব্রাহিম মহম্মদ সোলি।

ইয়েমিনকে হারাতে জোট বেঁধেছিল মালদ্বীপের সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল। ভোটে তাদের উপরই আস্থা রেখেছেন সাধারণ মানুষ।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

BISWAJIT BHATTACHARYA BISWAJIT BHATTACHARYA

Veteran journalist. Left critic. Political commentator.

Comment