বিজেপি কি বাংলা ও কেরল দখল করতে পারবে? পারলেও তা কি রক্তপাতহীন হবে?

বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে এই লড়াই কোনও মতেই সহজ হবে না

 |  3-minute read |   23-03-2018
  • Total Shares

সবে মাত্র রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সান্ধ্য বৈঠক শেষ করে একটা দুধের দোকানে ঢুকেছিলেন রাজেশ। তাঁর কাঁধে একটা আলতো টোকা পড়ল। এই টোকার পরণতি যে এত ভয়ানক হতে পারে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজেশ ভর্তি হলেন নিকটবর্তী এক হাসপাতালে। তাঁর গোটা শরীর জুড়ে তখন উননব্বইটা ক্ষতচিহ্ন। ইতিমধ্যেই, কাটা পড়েছে ডানহাত। রাজেশ বাঁচেননি। রাজ্যের বামপন্থী সমর্থকদের নির্মম অত্যাচারের শিকার হলেন গেরুয়া সমর্থক এই যুবক। ঘটনাস্থল কেরলের তিরুঅন্তপুরম।

এবার আসা যাক ২৫০০ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত শহর বসিরহাটে। ২০১৭-র জুলাই মাসের শুরুতে এক তরুণের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা বাঁধল বসিরহাটে। সেই দাঙ্গা চলাকালীন বাংলার আরএসএস নেতা কার্তিক ঘোষকে নির্মমভাবে হত্যা করল উত্তেজিত জনতা। দুই রাজ্যের কী মিল, দূরত্ব যেন এখানে কোনও বাধাই মানে না!

মোরা দুই ভাই

এমনিতেই, কেরল ও বাংলা - এই দুই রাজ্যের মধ্যে রয়েছে প্রভূত মিল। এই দুই রাজ্যেই বুদ্ধিজীবীদের প্রাধান্য চোখে পড়ার মতো। এই দুই রাজ্যই ফুটবল ভালোবাসে। এবং, এই দুই রাজ্যেই রয়েছে বাম রাজনীতির সুদীর্ঘ ইতিহাস। কেরল এখনও বামপন্থীদের দখলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য বামেদের হারিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মসনদ দখল করেছে। কিন্তু তৃণমূল শাসনেও তো বাংলায় বাম রাজনীতির ছায়া চোখে পড়ার মতো। দুটি রাজ্যই 'ক্যাডার-বেস' রাজনীতির উপর নির্ভলশীল। অর্থাৎ, দলীয় কর্মীদের দিয়ে সমাজের সব কিছুর উপর প্রভাব বিস্তার করাটাই এখানে রেওয়াজ।

দুটি রাজ্যেই নৃশংস রাজনৈতিক হানাহানি হয়ে উঠেছে রাজনীতির মূল অস্ত্র। এ হেন পরিস্থিতিতে বাংলা ও কেরল দখলে নেমেছে বিজেপি। কেন্দ্রে রীতিমতো ঝড় তুলে ক্ষমতা দখল করেছিল বিজেপি। তারপর হেলায় জয় করেছে একের পর এক রাজ্য। কিন্তু বাংলা ও কেরল যে বিনা রক্তপাতে পাওয়া যাবে না, তা বলাই বাহুল্য। তাহলে কী নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ হাল ছেড়ে দেবেন? মনে তো হয় না। লক্ষ্য যতই কঠিন হোক, মোদী ও শাহ শেষ দেখেই ছাড়বেন।

বাংলায় ক্ষমতা বিস্তার

বিজেপির দোসর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ইতিমধ্যেই অনলাইন সদস্য নবিকরণ শুরু করে দিয়েছে তাদের ওয়েব সাইট, টুইটার, ফেসবুক ও ইউটিউব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। আশ্চর্য্য হলেও সত্যি, শুরুর মাত্র দশ দিনেই ৩,২০০ মতো বঙ্গবাসী সদস্য পদের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।

body_032318124852.jpgবিজেপির বাংলা ও কেরল দখল খুব সহজ নয়

এঁদের মধ্যে আবার ১,২০০ মতো বজরং দলের সদস্য হতে আগ্রহী ছিলেন। ৪০০ জন মহিলা দুর্গা বাহিনীর সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। সদস্য পদের জন্য সবচেয়ে বেশি আগ্রহ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের মতো সীমান্ত জেলাগুলির মধ্যেই। এই প্রত্যেকটি জেলাতেই প্রচুর বাংলাদেশি মুসলমান উদ্বাস্তুর বাস। এই জেলাগুলিতে মুসলমানরা হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ, না হলে সংখ্যা গরিষ্ঠ হওয়ার পথে। ভিএইচপি ও বজরং দল এই জেলাগুলির প্রতিটি ব্লকে বিশাল ভাবে জন্মাষ্টমী পালন করা শুরু করে দিয়েছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, সঙ্ঘ পরিবার পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলের বিভিন্ন ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক গুরুদের সামনে রেখে প্রচারে নামতে চলেছে। এদের মধ্যে শ্রীচৈতন্য দেব, সাধক বামাখ্যাপা, রামকৃষ্ণদেব, ঋষি অরবিন্দ, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। কেরলে যেমন আদি শঙ্করাচার্য, শ্রী নারায়ণ গুরু, শ্রী চাতম্বী স্বামীকাল ও স্বামী চিন্ময়ানন্দ।

কেরল চল

গত ২০ মাসে কেরলে ১৪ জন মতো আরএসএস সদস্য খুন হয়েছেন। বামেরা স্বভাবতই ভীত। দক্ষিণ কেরলে তো গেরুয়া বাহিনী অনেকটাই প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। শেষ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোটের হার ৭ থেকে ৯ শতাংশ বেড়ে প্রায় ১৬ শতাংশ হয়েছে। কেরলের বাম নেতারা তাদের মুসলমান ভোটব্যাঙ্ক শক্ত করতে বদ্ধপরিকর ছিল। কিন্তু এখানেও বিধি বাম। গোটাদেশে এনআইএ যে ৭৪ জন মতো তরুণকে আইসিস সন্দেহে আটক করেছে তাদের মধ্যেই ২৪ জন কেরল থেকে।

বাম ভোটব্যাঙ্কে যে এর প্রভাব পড়েছে তা বলাই বাহুল্য। সুতরাং একটা কথা বলাই যায় যে, বিজেপির বাংলা ও কেরল দখল খুব সহজ নয়, রক্ত বইবেই। এখন দেখার বিষয়, গেরুয়া সূর্যোদয় হয় কিনা।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Abhijit Majumder Abhijit Majumder @abhijitmajumder

Journalist. Managing editor, Mail Today.

Comment