কাশ্মীর রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া: আশঙ্কায় রয়েছে পুরোনো খেলোয়াড়রা
সন্ত্রাসবাদ নয়, উন্নত জীবনধারা চান রাজ্যের সাধারণ জনগণ
- Total Shares
জঙ্গি হুমকি তো ছিলই। সঙ্গে রাজ্যের মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলো ও মৌল্যবাদীরা নির্বাচন বয়কট করেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, অবাধ শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচন সংগঠিত হল জম্মু ও কাশ্মীরে। স্থানীয় প্রশাসন গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ও ত্রিস্তরীয় প্রশাসন ব্যবস্থার অন্যতম গুরত্বপূর্ন স্তর। এই নির্বাচনে ভোটদান হয়ত অনেকটাই কম হয়েছে। কিন্তু যাঁরা প্রার্থী হওয়ার সাহস দেখিয়ে ছিলেন বা যাঁরা সাহস করে ভোট দিয়েছেন তাঁদের সাহসকে তো কুর্নিশ জানাতেই হবে।
আতঙ্কের সৃষ্টি করা হয়। আপনার মনের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ভয়কে জয় করাকেই সাহস বলে।
স্থানীয় সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর রূপায়ণের কথা মাথায় রেখেই জনগণ পথে নেমে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন।
কিন্তু রাজ্যের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিডিপি কিন্তু নির্বাচন বয়কটের রাস্তায় হাঁটলো। এর ফল অবশ্য আগামী বছর ভোগ করতে হবে কারণ তাঁদের এবারের পরিকল্পনা কিন্তু ফলপ্রসূ হয়নি। দুটি দল ভেবেছিল যে ভোট বয়কট করে বিধানসভা নির্বাচনের ফায়দা তুলতে পারবে। এই নির্বাচনে তাই তারা গোজ প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু সবকটা গোজ প্রার্থীই গো-হারান হেরেছে।
২০ অক্টোবর পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আর, কাশ্মীরের ভোটাররা যে এনসি ও পিডিপিকে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে তা এই ফলাফলে পরিষ্কার ফুটে উঠছে।
ইয়ুথ আলিয়ান্স বা পিপলস কনফারেন্স-এর মতো নতুন নতুন মুখের এবার উদয় হয়েছে। কংগ্রেস লাদাখ জয় করেছে। বিজেপি জম্মু দখলের পাশাপাশি কাশ্মীর উপত্যকাতেও ভালো ফল করেছে।
পিপলস কনফারেন্স উত্তর কাশ্মীরে বিপুল ভোট পকেটে পুড়েছে। এমনকি শ্রীনগরের পিসির মেয়র পদপ্রার্থীও জয়লাভ করেছে। জুনাইদ আজিম মাট্টু সম্প্রতি ন্যাশনাল কনফারেন্স থেকে পদত্যাগ করেছেন। তাঁকেই শ্রীনগরে মেয়র পদপ্রার্থী করেছিল পিসি।
আসলে ন্যাশনাল কনফারেন্স বা পিডিপি বয়কট খেলা খেলতে বেশি পছন্দ করে। তাই মাট্টু তাদের ডাকে সারা দেননি। এদিকে এনসি বা পিডিপি না চাইলেও উত্তর কাশ্মীরে রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পিপলস কনফারেন্স। তার মানে এবার কাশ্মীর রাজনীতিতে তৃতীয় ফ্রন্টের উদয় হচ্ছে। আর সেই তৃতীয় ফ্রন্টে যোগ দিচ্ছেন মাট্টু, ইমরান রেজা আনসারি ও পিডিপির অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত বিক্ষুব্ধ নেতারা।
একটা বিবাদের যে সৃষ্টি হয়েছে তা কিন্তু পরিষ্কার।
জঙ্গি হুমকি সত্ত্বেও অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে কাশ্মীরে [ছবি: পিটিআই]
সম্প্রতি এক ইন্টারভিউতে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি জানিয়েছেন যাঁরা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাঁরা 'দুর্বৃত' ভিন্ন আর কিছুই নয়। একজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই কথা শোভা পায়না কারণ এর ফলে নির্বাচনের উপর আস্থা হারাতে পারে সাধারণ মানুষ। যে দলটি নিজেই সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন করে চলে সেই দলের নেত্রীর মুখে দুর্বৃত কথাটি শোভা পায়না।
কাশ্মীরে মাথা তুলছে তৃতীয় ফ্রন্ট [ছবি: ডেইলি ও]
মেহবুবা এখন বলছেন তৃণমূল স্তরের নির্বাচন অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু উপত্যকাতে যখন জঙ্গি কার্যকলাপ তুঙ্গে ছিল তখন কিন্তু মুফতির দলই সেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিল। তাই তাঁর মুখে এই ধরণের মন্তব্য মানায় না। এই ধরণের মন্তব্য করা মানে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থলে অসম্মান জানানো।
মেহবুবা মুফতির বক্তব্য যুক্তিহীন [ছবি: পিটিআই]
তাঁর দল পঞ্চায়েত নির্বাচন বাতিল করেছে। কিন্তু নতুন করে বিধানসভা নির্বাচনের দাবি করছে। এটা কী ধরণের দ্বিচারিতা? মুফতিটি বক্তব্য কোনও মতেই মেনে নেওয়া যায় না।
অন্যদিকে কুলগামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করার পর তাঁর দল হটাৎ করেই ঘটনাটি নিয়ে রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে মুফতির দল। দলীয় সমর্থকদের মনে রাখা উচিত যে পিডিপির শাসনকালে দক্ষিণ কাশ্মীর কী ভাবে জঙ্গি কার্যকলাপের পীঠস্থান হয়ে উঠে ছিল
এই মুহূর্তে আমাদের বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। রাজনীতির চোরা স্রোত নয়।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে