পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতি কম কেন

এবার বিজেপি কি তারকা প্রচারককে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করতে ভয় পাচ্ছে?

 |  4-minute read |   30-11-2018
  • Total Shares

নির্বাচনের শেষবেলার প্রচারে বিভিন্ন কেন্দ্রে সভা করে নির্বাচনের ফলাফল বিজেপির অনুকূলে করতে সিদ্ধহস্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচন এবং পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনগুলোতে দেশের মানুষ এই বিষয়টি লক্ষ্য করেছিলেন। এই নির্বাচনগুলোতে মোদী হাওয়া পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল।

এই মুহূর্তে চিত্রটা অবশ্য অন্যরকম মনে হচ্ছে।

মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীশগড়, রাজস্থান, তেলঙ্গনা ও মিজোরাম - এই পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে। এই রাজ্যগুলোর মধ্যে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীশগড় ও রাজস্থানে বহুদিন ধরেই বিজেপি শাসিত সরকার রয়েছে। তেলঙ্গনা ও মিজোরামের শেষে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি অবশ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।

এবার মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড় ও রাজস্থানে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। এই তিনটি রাজ্যেই দু'টি দলই সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দেবে বলে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোদী হাওয়া বিজেপির অন্দরমহলে গোষ্ঠীদ্বন্ধ আটকাতে অনেকটাই সাহায্য করতে পারত।

কিন্তু নির্বাচনী প্রচারে রাজনৈতিক জনসভা বা সমাবেশের যদি হিসেবে কষা যায় তাহলে দেখা যাবে যে এ বার মোদীর উপস্থিতির হার অনেকটাই কম। নেহাতই নগণ্য।

body_113018031846.jpgনির্বাচনী প্রচারে এ বার মোদীর উপস্থিতি অনেকটাই কম [ছবি: পিটিআই]

তেলঙ্গনা ছাড়া বাকি রাজ্যগুলোতে শেষ বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল ২০১৩ সালে। সেই সময়ে ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে, নির্বাচনী প্রচারে মোদীকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছিল বিজেপি।

এবার ২০১৮ সালের কথায় আসা যাক।

ছত্তিশগড়ে দু'দফায় নভেম্বরের ১২ ও ২০ তারিখে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। এই রাজ্যের নির্বাচনী প্রচারে মোদী মাত্র চারটি জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। এবার এর সঙ্গে ২০১৪ সালের হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের তুলনা করে দেখুন। ছত্তিসগড় ও হরিয়ানা, দুটি রাজ্যেই, ১০টি লোকসভা ও ৯০টি বিধানসভা আসন রয়েছে। এ বছর ছত্তিশগড়ে মোদী মাত্র চারটি জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। উল্টোদিকে, হরিয়ানার ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে মোদীকে মোট ১০টি জনসভায় উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছিল। সে বছর বিজেপি বিপুল পরিমাণ ভোট পেয়ে হরিয়ানায় সরকার গঠন করেছিল। এবছর কিন্তু ছত্তিশগড়ে ক্ষমতা হারাবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বিজেপির।

একই অবস্থা মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে।

মধ্যপ্রদেশে ২৮ নভেম্বর ভোট হয়েছে। এই রাজ্যে মোদী মোট ১০টি জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। রাজস্থানেও তাঁর ১০টি জনসভায় উপস্থিত থাকার কথা। সেই রাজ্যে ৭ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হবে।

body1_113018031605.jpgমিজোরামে মাত্র একটি জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী [ ছবি: পিটিআই]

কংগ্রেসের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টক্করের সম্ভাবনা থাকলেও বিজেপি এবার দলের তারকা প্রচারককে খুব একটা ব্যবহার করছে না।

তেলঙ্গনাতে নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে এনে ৭ ডিসেম্বরে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এই রাজ্যে মোদী মাত্র তিনটি জনসভায় উপস্থিত থাকবেন। এই রাজ্যে বিজেপির শক্তি বেশ ক্ষীণ। তা সত্ত্বেও মোদীকে এই রাজ্যে প্রচারে এনে বিজেপি নিজেদের অস্তিত্বের বার্তা দিতে চাইছে।

২৮ নভেম্বর নির্বাচন হল মিজোরামে। এই রাজ্যে ২৩ নভেম্বর নরেন্দ্র মোদী একটি মাত্র জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। উত্তর পূর্ব ভারতে ইতিমধ্যেই বিজেপি নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে। শুধুমাত্র মিজোরামই এখন কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। উত্তরপূর্বের বাকি রাজ্যগুলোতে এক হয় বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে বা বিজেপির জোট শরিকদের সরকার শাসনক্ষমতায় রয়েছে। এ বার যদি মিজোরামকে কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে তাহলে তার জন্যে নিঃসন্দেহে মোদীর 'ক্যারিশমা' কৃতিত্ব দাবি করতে পারে।

যাই হোক, নির্বাচনী প্রচারে মোদীকে যে ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা থেকে একটা প্রশ্ন উঠছে। মোদীর উপস্থিতি কি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে?

body2_113018031700.jpgগুজরাটে মোদীর উপস্থিতি কোনও কাজ দেয়নি, আসন সংখ্যা বেড়েছে কংগ্রেসের [ছবি: পিটিআই]

সাম্প্রতিক অতীতের দিকে চোখ রাখলে বোঝা যাবে যে এমন একটি সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।

গুজরাটে মোদী ৩৪টি জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। বিজেপি সরকার গঠন করলেও মাত্র ৯৯টি আসন জিততে পেরেছিল - ১৯৯৫ সাল থেকে যা সবচেয়ে কম। নির্বাচনের আগে অমিত শাহ জানিয়েছিলেন যে গুজরাটে তাঁরা ১৫০টি আসন পাবেন। অন্যদিকে, সেই নির্বাচনে ৭৭টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। ৯৫ সাল থেকে গুজরাট বিধানসভা এত বেশি আসন কংগ্রেস কোনও দিনও পায়নি। সে বছর ৪৫টি আসন জিতেছিল কংগ্রেস।

বিজেপি কংগ্রেসের থেকে ঢের বেশি ভোট পেয়েছে এই কথা বলেও নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে পারছে না বিজেপি।

body3_113018031740.jpgকর্নাটকে শেষ রক্ষা করতে পারেনি বিজেপি [ছবি: পিটিআই]

গুজরাটে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার ৪৯.১ শতাংশ। ২০১২ সালে যা ৪৭.৯ শতাংশ ছিল। যা কংগ্রেসের থেকে আট শতাংশ বেশি। কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার ৪১.৪ শতাংশ। কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটও অবশ্য ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার অবশ্য ২০১৪ লোকসভা নির্বাচন থেকে অনেকখানি কম। ২০১৪ সালে বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৫৯.১ শতাংশ। তাই মোদীর জনপ্রিয়তা যে হ্রাস পেয়েছে তা মেনে নিতে হচ্ছেই।

এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কর্নাটক বিধানসভার ফলাফল।

এ বছর কংগ্রেস সরকারকে সরিয়ে নিজেরা সরকার গঠন করতে চেয়েছিল বিজেপি। মোট ২১টি জনসভায় উপস্থিত ছিলেন মোদী। নির্বাচনী প্রচর শুরু হওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে মোদীর জনসভার সংখ্যা ১৫টি থেকে ২১টি করার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি। তা সত্ত্বেও শেষরক্ষা হয়নি। গেরুয়া শিবিরের ইয়েদ্যুরাপ্পা সরকার গঠনের মরিয়া চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত হার মানতে বাধ্য হন।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SANTOSH CHAUBEY SANTOSH CHAUBEY @santoshchaubeyy

The writer is a journalist working with India Today TV.

Comment