পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাক ক্রিকেটারদের একজনই পছন্দের, দেশের বিশ্বজয়ী অধিনায়ক
জাভেদ মিয়াঁদাদ থেকে ওয়াসিম আক্রম সকলেই দেশের মসনদে ইমরান খানকে দেখতে চান
- Total Shares
গত সপ্তাহে পাকিস্তানের ওপেনার ফকহার জামান যখন কয়েক হাজার মাইল দূরে জিম্বাবুয়ের মাটিতে ক্রিকেট ইতিহাস রচনা করে যাচ্ছিলেন তখন পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো সেই ইতিহাসের খবর প্রকাশে তীব্র বিতৃষ্ণা দেখিয়েছিল। সাধারণত এই দৃশ্য দেখা যায় না। বরঞ্চ পাকিস্তানের এই বা-হাতি ব্যাটসম্যানটিকে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত উন্মাদনাই স্বাভাবিক ছিল।
এই মুহূর্তে অবশ্য ক্রিকেট নিয়ে 'বাড়তি' উন্মাদনা দেখানোর সময় নেই পাকিস্তানে।
বর্তমানে অন্য ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাকিস্তান। আর সেই ইতিহাসের খাতায় শুধু একজন ক্রিকেটারের নামই জ্বলজ্বল করছে, যিনি পাকিস্তানের ক্রিকেট মহলে 'কাপ্তান' বলেই পরিচিত। তাঁর নাম ইমরান খান। হ্যাসট্যাগ যুগে পাকিস্তানে এখন #FakharEPakistan নয়, #VoteForKaptan ও #BehindYouSkipper -এর মতো হ্যাসট্যাগের জ্বরে ভুগছে। হাজার হোক, আজ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন।
ক্রিকইনফো অবধি ইমরান খানকে ব্যাখ্যা করেছে এইভাবে, "সেরা হার্টথ্রব। মার্জিত, রুচিশীল জ্ঞানী। সর্বোপরি অসামান্য প্রতিভাবান। সত্তর ও আশির দশকে উপমহাদেশের একমাত্র সেক্স অ্যাপিল।"
এবার রাজনীতির ময়দানেও তাঁর সুইং দেখতে পারবেন কি? [ছবি: ফেসবুক]
খুব কম জনই আছেন যাঁরা এই কথায় সম্মতি দেবেন না।
'প্লেবয় ক্রিকেটার' আখ্যা পাওয়া ইমরান খানের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতেছিল। এবার সেই ইমরান খানই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তান সরকারের মসনদে বসার অন্যতম দাবিদার।
দেশের প্রাক্তন অধিনায়ক জাভেদ মিয়াঁদাদ ডেইলি ও-কে বললেন, "ইমরান এখন অনেকটাই বদলে গেছেন। ক্রিকেট জীবনের ইমরান ও আজকের ইমরানের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। শেষ ২০ বছর ধরে ইমরান নিজেকে সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানের জনগণের জন্যে উজাড় করে দিয়েছেন।"
৯২ সালে বিশ্বজয়ী অধিনায়ক কি ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন?
এর সঙ্গে মিয়াঁদাদ যোগ করলেন, "ইমরান একজন জাত নেতা। তাই তো এখন সকলেই ইমরানের কথা বলছে। তাঁর নেতৃত্বের প্রমান আমার ক্রিকেট মাঠে পেয়েছি। এবার রাজনীতির বাইশ গজেও তিনি তা প্রমান করে চলেছেন। ক্রিকেট আপনাকে অনেক কিছুই শিক্ষা দেয়। ক্রিকেট আপনাকে রাজনীতিও শেখায়। কী ভাবে আপনি ফিল্ডিং সাজাবেন বা বোলারদের ব্যবহার করবেন সেও তো রাজনীতিরই অঙ্গ।"
সেই সত্তর দশক থেকেই মিয়াঁদাদ ইমরানকে চেনেন। তখন তাঁরা একসঙ্গে পাকিস্তানের ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলো খেলতেন। ১৯৭৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে থেকে শুরু করে পরবর্তী দশকগুলোতে তাঁদের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে। মায়ের মৃত্যুর পর ইমরান যখন লাহৌরে প্রথম ক্যান্সার হাসপাতাল খুলবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন, তখন সর্বপ্রথম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মিয়াঁদাদ।
মিয়াঁদাদের সঙ্গে সম্পর্ক শুরু সেই সত্তরের দশকে
"শুধু তাঁর নেতৃত্বের গুনের জন্য নয় ইমরানকে সকলেই শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ও পছন্দ করেন। অক্সফোর্ডে পড়াশুনা করেছেন ইমরান এবং ক্রিকেট ছাড়ার পরেও তিনি সহজেই একটি অনবদ্য জীবন জাপন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন দেশকে পরিবর্তন করতে। তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় অবদান এই ক্যান্সার হাসপাতাল। আমার এখনও মনে এই ক্যান্সার হাসপাতালের অর্থ সংগ্রহের জন্য আমি আর ইমরান দেশের আদ্যোপান্ত ঘুরে বেরিয়েছিলাম। সত্যি, ইমরান আর ইধি সাহেবের (আব্দুল সাত্তার ইধি) লোক আজকাল খুব বেশি চোখে পড়ে না।"
ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিস সহ ইমরানের প্রাক্তন সহকর্মীরাও জনসমক্ষে ইমরানকে সমর্থন করেছেন। "আপনার নেতৃত্বেই ১৯৯২ সালের আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আপনার নেতৃত্বেই দেশে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হোক। আসুন, নয়া পাকিস্তান গড়ার লক্ষ্যে আমরা কাপ্তানকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করি।" - কিছুদিন আগে নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে টুইট করেছিলেন ওয়াসিম আক্রম।
লাহৌরে ইমরান খানের ক্যান্সার হাসপাতাল [ছবি: ফেসবুক]
পাকিস্তান সুপার লিগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দল পেশওয়ার জালমির মালিক জাভেদ আফ্রিদি সর্বদাই পিএসএল ও আইপিএলের সেরা দলগুলোর মধ্যে একটি টুর্নামেন্ট চেয়ে এসেছেন। তিনিও আশাবাদী যে পাকিস্তানের পরবর্তী ওয়াজির-এ আলম হোক ইমরান খান।
আফ্রিদি ডেইলি ওকে জানালেন, "ইমরান খান সর্বদাই চান যে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ব্যক্তিটিও যেন সত্যিকারের স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারেন। তাই তো আমরা ইমরানের পক্ষে। ইমরান চান পাকিস্তান দুর্নীতিমুক্ত হয়ে উঠুক আর সবুজ পাসপোর্টের মর্যাদা যেন সমগ্র বিশ্বে বৃদ্ধি পায়।"
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

