শাসকদলের প্রতীকটাই বদলেছে, বক্তব্য একই: বিক্ষিপ্ত হিংসা ছাড়া ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ

কতগুলো লাশ পড়লে তাকে সন্ত্রাস বলা যায়, এখন প্রশ্ন সেটাই

 |  3-minute read |   14-05-2018
  • Total Shares

শুধু মুখগুলো বদলে গেছে। শাসকদল বলেছে নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ। কয়েকটা জায়গায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে, নিহতের সিংহভাগই শাসকদলের কর্মী। সেই দাবিতে গলা মিলিয়েছে পুলিশও। আর বিরোধীরা বলেছে শাসকদলের সন্ত্রাসে এই নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হোক। বছর পঁচিশ ধরে একই কথা, শুধু শেষ দু’টি ভোটে শাসকের আসনের পিছনে প্রতীকটা বদলেছে। বদলেছে বিরোধী দলের প্রতীকও।

কতগুলো লাশ পড়তে তাকে সন্ত্রাস বলা যায়? নাকি লাশ না পড়লে তাকে সন্ত্রাস বলা যায় না? গভীর রাতে নামখানার বুধাখালিতে আগুনে পুড়ে দম্পতির মৃত্যু হয়েছে। তারপরে অন্ধকারে টর্চের আলোয় তার ছবি করা হয়েছে, নেপথ্যে অকথ্য শব্দ। সংবাদমাধ্যম ছাড়া সেই ভয়ানক করা ভিডিয়ো দেখার দুর্ভাগ্য সম্ভবত খুব কম লোকেরই হয়েছে।

body2_051418090259.jpgসন্ত্রাসের হিসাবও কি ঘটনা ও বুথের শতাংশের হিসাবে কষা যায়?

এ রাজ্যে ভোটের বলি ১৩, যদিও সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল ছয়। বোমাবাজি, বুথদখল, ছাপ্পা, বুথজ্যামের রুটিন অভিযোগ বাদ দেওয়া যাক। এ বারে ভোটে জনগণ স্বতস্ফূর্ত ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, শাসকদল তার বিরোধিতা করেছে বলেও হইচই শোনা যাচ্ছে না। তা হলে কি অবরোধ সত্যিই হয়েছে? লোকে কি উন্নয়নের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না? প্রশ্নটা সেটাও নয়। প্রশ্ন হল, ভোটেই ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি ভাবে যেটুকু স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, সেই মৃত্যুর দায় কে নেবে? ভোটগ্রহণের আগে পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কর্তারা একে অপরকে কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। প্রশ্ন হল, কেউ যদি ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে কার উপরে সেই দায় বর্তাবে?

পঞ্চায়েত ভোটে নিহতের তালিকায় চোখ বোলানো যাক। অবশ্যই বেসরকারি তালিকা। এই সব ক্ষেত্রে ঠিকঠাক তালিকা পাওয়া মুশকিল।

ভোটে কাদের মৃত্যু হয়েছে? কাকদ্বীপে ঘরে বন্ধ করে পুড়িয়ে মারা হয়েছে দুই সিপিএম কর্মী দেবু দাস ও তাঁর স্ত্রী ঊষা দাস। আমডাঙায় সিপিএম কর্মী তৈবু গাইনের মৃত্যু হয়েছে বোমার আঘাতে। বেলডাঙায় বিজেপি কর্মী তপন মণ্ডলের মৃত্যু হয়েছে। কুলতলিতে গুলিতে খুন আরিফ আলি গাজি নামে এক তৃণমূল কর্মী। শান্তিপুরে বুথদখলে গিয়ে গণপিটুনিতে মৃত্যু সঞ্জিত প্রামাণিকের। মুর্শিদাবাদের নওদাতে তৃণমূলের গুলিতে খুন নির্দল সমর্থক শাহিন শেখের মৃত্যু হয়েছে। নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় গুলিতে মৃত তৃণমূল কর্মী ভোলা দফাদার। নন্দীগ্রাম ২নম্বর ব্লকে এক নির্দল ও এক সিপিএম সমর্থক খুন হয়েছেন। তাঁদের নাম যথাক্রমে অপু মান্না ৩০ ও যোগেশ্বর ঘোষ(৬৫)। কোচবিহারের খামারটারিতে খুন দুলাল ভৌমিক নামে এক ব্যক্তি। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে ভোটের আগের দিন বোমা বাঁধতে গিয়ে বোমা ফেটে মারা যায় মহিউদ্দিন মহালত, অভিযোগ সে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী।

body3_051418090321.jpgআটচল্লিশ হাজারের উপরে যেখানে যেখানে বুথ, সেখানে এই সংখ্যাই বা কতটুকু?

আচ্ছা, ভোটে সন্ত্রাসের মাপকাঠি বিচার হবে কী দিয়ে? সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, বিরোধীদের অভিযোগ নাকি শাসক দলের পরিসংখ্যান ও পুলিশের হিসাব দিয়ে? এই প্রশ্নের উত্তরও এখনও অজানা।

আটচল্লিশ হাজারের উপরে যেখানে যেখানে বুথ, সেখানে এই সংখ্যাই বা কতটুকু? শতাংশের হিসাবে আসে কি? এমন সংঘর্ষ বিক্ষিপ্ত নয়তো কী?

আড়াই দশক বা তারও আগের একটা ঘটনা। ধর্ষণের পরে যখন সংবাদমাধ্যম উত্তাল, তখন এক বর্ষীয়ান নেতা নাকি প্রশ্ন করেছিলেন, রাজ্যে যত মহিলা আছে তার শতাংশ হিসাব করলে কী দাঁড়ায়! সন্ত্রাসের হিসাবও কি ঘটনা ও বুথের শতাংশের হিসাবে কষা যায়?

জ্যের সাধারণ মানুষের কোনও ক্ষমতাই নেই, বাসে ভাড়ার তালিকা নেই, হলুদ ট্যাক্সি বাড়তি ভাড়া চায়, সাদা ট্যাক্সি ঘুরপথে বাড়তি ভাড়া নেয়, থানা অভিযোগ নিতে চায় না বলে অভিযোগ ওঠে, ট্রেন-বাসে গুঁতোগুঁতি, অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে মার, ডাক্তারখানায় গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়, হাসপাতালে বেড নেই, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির সামর্থ্য নেই... আর বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রে মূল্যবান ভোটটা দেওয়ার জো নেই। যদিও ভোট পড়ে কোথাও একশো শতাংশের কাছাকাছি। কার কত ভোট ব্যালটবক্সে ঢুকেছে, সেটা অবশ্য বুঝতে অপেক্ষা করতে হবে এখনও কয়েকটা দিন। আর আগে একটা ছোট গল্প।

কদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা চুটকি ঘুরছে। এক বয়স্ক ভোটার সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে জানতে চাইলেন তাঁর স্ত্রী ভোট দিয়ে গেছেন কিনা। উত্তর এল হ্যাঁ। তখন ভদ্রলোক আফশোস করে বললেন, আরেকটু আগে এলেই স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়ে যেত, কারণ তিনি তিন বছর হল গত হয়েছেন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment