প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কি বেনারস থেকে প্রার্থী হয়ে নরেদ্র মোদীকে হারাতে পারবেন?
কাজটা বেশ কঠিন, তাও অঙ্ক কষে প্রিয়াঙ্কার জয়ের সম্ভাবনা দেখে নেওয়া যাক
- Total Shares
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কংগ্রেসের পূর্ব উত্তরপ্রদেশ সাধারণ সচিব হওয়ার পর জোর আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে - তিনি নাকি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রায় বেরেলি আসনটি থেকে প্রার্থী হতে পারেন। মা সোনিয়ার শরীর ইদানিং খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। তাই তিনি মায়ের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন। সোনিয়া পর পর পাঁচবছর এই আসনটির থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। তাই, যদি লড়তেই হয়, তাহলে প্রিয়াঙ্কার কাছে এই আসনটির থেকে নিরাপদ আসন আর কোনওটাই হতে পারে না।
এর মধ্যেই, বেনারসে পোস্টারের মাধ্যমে প্রিয়াঙ্কাকে আর্জি জানানো হয়েছে তিনি যেন লোকসভা নির্বাচনে বেনারস থেকে লড়াই করেন। এই আসনটির বর্তমান সাংসদ কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নীরেন্দ্র মোদী।
হিন্দিতে লেখা এই পোস্টারগুলোতে বলা হয়ে, "কাশী ক্যা জনতা করে পুকার, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী হো সাংসদ হামার।"
কংগ্রেসের আঞ্চলিক নেতৃত্ব চান প্রিয়াঙ্কা বেনারস থেকে প্রার্থী হোক। যদিও প্রিয়াঙ্কার কাছে লড়াইটা শক্ত হবে, কিন্তু প্রিয়াঙ্কাকে এই আসনটি থেকে প্রার্থী করতে পারলে গোটা রাজ্যের তথা প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর ভোটারদের কাছে একটি বার্তা পাঠানো যাবে - মোদীকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানোর সাহস রয়েছে কংগ্রেসের।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী যদি বেনারস থেকে নির্বাচনে লড়েন, তাহলে তাঁর লড়াইটা ঠিক কতটা কঠিন হবে?
মোদীকে হারাতে হলে বিজেপির ব্রাহ্মণ ও ভূমিহার ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাতে হবে প্রিয়াঙ্কাকে [ছবি: রয়টার্স]
ফলাফলের আভাস পেতে হলে আসনটির ভোটারদের জাত বিন্যাসের উপর একবার চোখ বুলিয়ে নিতে হবে। হাজার হোক, পূর্ব উত্তরপ্রদেশে জাত বিন্যাস কিন্তু নির্বাচনের ভাগ্য গড়ে দিয়ে থাকে।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী যদি বেনারস থেকে প্রার্থী হন তাহলে বহুজন সমাজ পার্টি ও সমাজবাদী পার্টি তাঁকে সমর্থন করবে বলেই ধরে নেওয়া যায়। অন্তত সেই সম্ভাবনাই বেশি।
যদিও দুটি দলই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধতে অস্বীকার করেছে, দুটি দলই কিন্তু জানিয়ে দিয়েছে যে সোনিয়ার রায় বেরেলি ও রাহুলের আমেঠি আসন দু'টিতে তারা প্রার্থী দেবে না। পাশাপাশি, মোদীর বিরুদ্ধে যদি কোনও শক্তিশালী প্রার্থী দেওয়া হয় তাহলে তারা তাঁকেও সমর্থন করবে।
বেনারস লোকসভা কেন্দ্রে প্রায় ৩লক্ষ মুসলমান রয়েছে। ধরে নেওয়াই যায় তারা কিন্তু বিএসপি-এসপি সমর্থিত প্রিয়াঙ্কাকেই ভোট দেবে।
একই ভাবে এই আসনে দেড় লক্ষ মতো যাদব ভোটার রয়েছে। চিরাচরিত তারা এসপিকে ভোট দিয়ে এসেছে। কেন্দ্রের ৮০,০০০ দলিত ভোটাররা বিজেপিকেও ভোট দিয়ে থাকে আবার কংগ্রেসকেও ভোট দেয়।
এদের ভোটসংখ্যা যোগ করলেন ৫.৩০ লক্ষ ভোট প্রিয়াঙ্কার পাওয়ার কথা।
তার মানে ভোটব্যাঙ্কের শুরুটা কিন্তু প্রিয়াঙ্কার ভালোই হবে। এর পর প্রিয়াঙ্কাকে ব্রাহ্মণদের ও ভূমিহারদের খুশি করতে হবে। এই কেন্দ্রে প্রায় আড়াই লক্ষ ব্রাহ্মণ ভোট রয়েছে ও দেড় লক্ষ ভূমিহার ভোট রয়েছে।
একটা সময় এই ব্রাহ্মণ ও ভূমিহাররা কিন্তু কংগ্রেস সমর্থক ছিল। সম্প্রতি, মন্দির মসজিদ রাজনীতির পর তারা বিজেপিকে সমর্থন করতে শুরু করেছে।
তবে তাদের এখনও কংগ্রেসের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে। কিন্তু এসপি ও বিএসপিকে সহ্য করতে পারে না তারা। সেক্ষেত্রে, এসপি ও বিএসপির সমর্থনের সঙ্গে ব্রাহ্মণ ও ভূমিহারদের আস্থা অর্জন করতে পারাটাই এখন কংগ্রেসের কাছে মস্ত চ্যালেঞ্জ।
উল্টোদিকে, দু'লক্ষ বৈশ্য ভোটার, এক লক্ষ রাজপূত ভোটার, ৮০,০০০ চৌরাসিয়া ভোটার, ৬৫,০০০ কায়স্থ ভোটার, আড়াই লক্ষ ব্রাহ্মণ ভোটার ও দেড় লক্ষ ভূমিহার ভোটারদের উপর নির্ভরশীল বিজেপি। তার মানে প্রায় ৮.৫ লক্ষ ভোটারের ভোটব্যাঙ্ক মোদীর তৈরি রয়েছে।
এই ভোট টপকানো সংখ্যা যতই প্রিয়াঙ্কার কাছে দুঃসাধ্য মনে হোক না কেন, বিজেপিকে নিশ্চিত করতে হবে যে ব্রাহ্মণ ও ভূমিহারদের চার লক্ষ ভোট যেন কিছুতেই তাদের হাতছাড়া না হয়ে যায়।
একই ভাবে, মোদীকে হারাতে হলে প্রিয়াঙ্কাকে বিজেপির ব্রাহ্মণ ও ভূমিহারদের ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাতে হবে।
এই দুই জাতির ভোটের সিংভাগ যে দিকে যাবে সেই দলই শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে।
উচ্চবর্ণের ভোটরা যদি বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করতে চায় তাহলে মোদীর কাছে বেনারস জয় কিন্তু অতীব কঠিন হয়ে পড়বে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে