এ রাজ্যে ৬ জন আদিবাসী মৃত্যু হয়েছে, গণমাধ্যমে তা নিয়ে খবর নেই
শুধুমাত্র বিজেপি করার অপরাধে কাউকে হত্যা করা মেনে নেওয়া যায় না
- Total Shares
দিদি সব জায়গা বিরোধীশূন্য চাইছেন, তাঁর আদর্শ ভাই শুভেন্দু অধিকারী, তিনিও বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত গড়ার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গণমাধ্যম যাঁকে দিদির উত্তরসূরী হিসাবে তুলে ধরেছন, সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও পুরুলিয়াকে বিরোধীশূন্য করবেন বলেছিলেন। এই ভাবেই ইন্ধন দেওয়া হয়েছে নীচুতলার কর্মীদের হিংসাত্মক হওয়ার। ভোট হয়ে গিয়েছে, ফল প্রকাশ হয়ে গিয়েছে, এর পর আর বিরোধীশূন্য কী করে হবে?
তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের ৩৪ শতাংশ গ্রামপঞ্চায়েত আসনে বিরোধীদের মনোনয়ন দিতেই দেয়নি। যে সব জায়গায় বিরোধীরা মনোনয়ন দিতে গিয়েছিলেন সেখানে বিডিও অফিস ও এসডিও অফিসে তারা যা খুশি তাই করেছে। মনোনয়নই জমা দিতে দেয়নি। এটা কী ধরনের গণতন্ত্র? ভোটের দিনও তাণ্ডব। কোথাও ভোটারদের তাড়িয়ে দেওয়া, মারা। এখানেই শেষ নয়, বিশ্বের ইতিহাসে যা হয়নি, এখানে হল – ভোট গণনার সময় ছাপ্পা মারা। এখানে তো রোগীর মৃত্যুর পরে তাকে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। হেরে যাওয়ার পরে সেই প্রার্থীকে জেতানোর জন্য সমস্ত বিরোধীদের বার করে দেওয়া হয়েছে।
বিজেপি হারল কি জিতল সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ এ রাজ্যের জন্য কোন উদাহরণ রেখে যাচ্ছে শাসকদল। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতে বিজেপির পরাজয় মানে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপির বিপুল ক্ষতি হয়ে গেল, এমন নয়। আবার বিজেপি জিতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পতন হত, এমনটাও নয়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোন বাংলা দিতে চাইছেন পরের প্রজন্মকে? এই বাংলা যেখানে বিরোধিতা করার জন্য এক জীবন্ত তরুণকে গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হল? তার গায়ে লিখে দেওয়া হল, বিজেপি করার শাস্তি!
পিঠে লেখা ‘অপরাধ’, ঝুলছে বিজেপি কর্মীর দেহ
রাজনৈতিক কারণে ঘিরে আমাদের যে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ছ’জন হলেন আদিবাসী। কোনও সংবাদপত্র সেই খবর ছাপছে না। কোনও সংবাদমাধ্যম বলছে না যে দলিত হত্যা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। কাল যে তরুণের মৃত্যু হয়েছে, তিনিও দলিত। কেন সংবাদপত্রগুলি লিখছে না যে পশ্চিমবঙ্গে দলিত হত্যা বেড়ে যাচ্ছে? বিজেপি-শাসিত রাজ্যে দলিত হত্যা হলে দেশ জুড়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গে এখন এতজন দলিত হত্যা হল, কোনও সংবাদপত্র সে কথা লেখেনি। অন্য রাজ্যে হত্যা হলে দলিত হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে পরিচয়টাই গোপন রাখা হচ্ছে। এটা গণমাধ্যমের কাছে প্রত্যাশিত নয়।
The present TMC govt in West Bengal has surpassed the violent legacy of Communist rule. Entire BJP mourns this tragic loss & stands firmly with Trilochan Mahato’s family in this hour of grief. His sacrifice for organisation & ideology will not go in vain. Om Shanti Shanti Shanti.
— Amit Shah (@AmitShah) May 30, 2018
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে সন্তুষ্ট নন, প্রধানমন্ত্রী হতে চান। সেই পথে প্রধান বাধা বিজেপি। উনি দেখছেন এ রাজ্যে সিপিএম এখন নিঃস্ব, কংগ্রেস নেই। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে প্রতিটি বুথে এজেন্ট দেওয়ার ক্ষমতা এখন বিজেপির আছে। তাই অত্যাচার করে পুরো রাজ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।
আমার বাড়ি বর্ধমান জেলায়, যেখানে ১৯৭০ সালে সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। এ রাজ্যে সিপিএম সব লোককে ধমকাত, তাদের কথা না শুনলে সাঁইবাড়ি করে দেবে বলে। লোকে ভয়ে, আতঙ্কে সিপিএমের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পেত না। এ ভাবে কখনও সাঁইবাড়ির ভয় দেখিয়ে, কখনও বিজন সেতুর ভয় দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছে, পশ্চিমবঙ্গকে লুঠেছে। আজ তার পরিণাম ভোগ করছে ওরা। সিপিএম ছেড়ে সেই সব লোকই এখন তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে।
পশ্চিমবঙ্গকে বিরোধীশূন্য করার জন্য, বুথে যাতে কেউ বসতে না পারে সেই চেষ্টাই করছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী তো বুথের ভিতরে থাকবে না। বুথের ভিতরে থাকবে দিদির সরকারি কর্মচারী। তাদের দিয়ে ভোট লুঠ করানো ও ছাপ্পা দেওয়ানো হবে। বুথের ভিতরে বিজেপি না থাকলে কেউ জানতেই পারবে না ভোট লুঠ হচ্ছে, কারণ বাইরেটা শান্তিপূর্ণ থাকবে। এই পরিকল্পনা বড় ভয়ঙ্কর, পশ্চিমবঙ্গের জন্য তা মোটেই সুখকর নয়।
হুমকি লেখা সেই চিঠি
অন্য রাজ্যে, যখন একলাখে হত্যা হত, দিনের পর দিন তা নিয়ে সংবাদমাধ্যম লিখেছে সংখ্যালঘু হত্যা নিয়ে। রাজস্থানে একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটার পর দিনের পর দিন রাজ্যে রাজ্যে প্রচার হয়েছে সংখ্যালঘু হত্যা হয়েছে রাজস্থানে। আজ যে তরুণের চোখে বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল, শুধুমাত্র বিজেপি করার অপরাধে তাকে বাঁচতে দেওয়া হবে না? এটা কি মেনে নেওয়া যায় নাকি?
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে এখন রাজ্যের মুখ্যমনত্রী মশগুল। তাই উনি সন্ত্রাস সৃষ্টি করিয়ে, ধর্ষণ করিয়ে সকলের মুখ বন্ধ করাতে চাইছেন। তাঁর দলের সাংসদ বলছেন তাঁর বিরুদ্ধে গেলে বাড়িতে ছেলে ঢুকিয়ে রেপ করে দেবে, তাঁকে সাংসদ রেখেছেন, দল থেকে বার করে দেননি, তাঁকে দেখার জন্য ভুবনেশ্বরে গিয়েছেন। কিন্তু এ ভাবে মুখ বন্ধ করানো যায় না। অত্যাচার করলে তার পরিণাম কি হয়? ১৯৭২ সালের অত্যাচারের জন্য কংগ্রেস আর ফিরে আসেনি, ফির আসার আশাও করে না। ৩৫ বছর শাসনের পরে আজ সিপিএম বুথে এজেন্ট দিতে পারছে না এই অত্যাচারের কারণে। তৃণমূলও আগামী দিতে বুথে প্রার্থী দিতে পারবে না, তৃণমূল দলটাই থাকবে না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তো থাকবে! বাংলাকে উনি কী দিচ্ছেন? ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেখাচ্ছেন বিরোধিতা করলেই খুন করে দেওয়া হবে?

