রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ কিংবা ভারত: দেশে কি তরুণ নেতার ভাটা পড়েছে?
তরুণদের ভারতকে শাসন করেন বর্ষীয়ানরা, এই ধারা কবে বদলাবে?
- Total Shares
অবশেষে সাসপেন্সের অবসান ঘটল। বিস্তর আলোচনার পরে কংগ্রেস হাই-কম্যান্ড কমল নাথকে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করল। অন্যদিকে, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন অশোক গেহলট। আর, অনেকটা সান্ত্বনা পুরস্কার পাওয়ার মতো, তাঁর সহকারীর ভূমিকা পালন করবেন সচিন পাইলট।
আমার মতো অনেক তরুণই এই খবরে উৎসাহ বোধ করছেন না।
অশোক গেহলট ও কমল নাথকে যে ভাবে রাহুল গান্ধী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করলেন তাতে একটি বিষয়ে বেশ পরিষ্কার হয়ে গেছে, কংগ্রেসের মতো একটি শতাব্দীপ্রাচীন দলে এখনও প্রবীণদেরই প্রাধান্য বেশি।
সঞ্জয় গান্ধীর হাত ধরেই রাজনৈতিক মঞ্চে প্রবেশ কমল নাথের। তিনি সঞ্জয় গান্ধীর বিশ্বাসভাজনদের মধ্যে অন্যতম। সঞ্জয়ের মৃত্যুর পরেও গান্ধী পরিবারের প্রতি তাঁর আনুগত্যে ভাঁটা পড়েনি। কথাটা অন্যভাবে বলতে গেলে লিখতে হয়, দিল্লিতে গিয়ে দরবার করা কমল নাথের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
মধ্যপ্রদেশে সিন্ধিয়াকে সাইডলাইন করে রাখা হয়েছে [ছবি: পিটিআই]
নয়ে নয়ে করে মোট ন'বার ছিন্দওয়াড়া আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন নাথ। পাঁচবারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তিনি। সব মিলিয়ে কমল নাথের অভিজ্ঞতা প্রশ্নাতীত।
কিন্তু রাহুল গান্ধী তো বরাবরই নিজেকে তরুণ প্রজন্মের নেতা হিসেবে দাবি করে এসেছেন, যে প্রজন্ম বিজেপির একমাত্র বিকল্প হিসেবে শতাব্দী প্রাচীন দলটিকে পুনর্গঠন করে উদারনীতি প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু তিনি মুখে যে কথা বলেন সেই পথে হাঁটেন না।
বর্ষীয়ানদের জায়গা করে দিতে তরুণ প্রজন্মকে সাইডলাইন করে দিল কংগ্রেস।
একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যে এ দেশের জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশের বয়স পঁয়ত্রিশের নিচে। দেশের জনসংখ্যার গড় বয়স ২৯ বছর।
অথচ এই পরিস্থিতিতেও দেশের মন্ত্রীদের গড় বয়স পঁয়ষট্টির আশপাশে ঘোরাফেরা করছে।
তরুণ ভারতীয়দের কেন প্রবীণ ভারতীয়রা নেতৃত্ব দেবেন?
দেশের জনগণকে সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন এমন নেতা পেতে আমাদের আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? সিন্ধিয়া বা পাইলট অল্পের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হতে পারলেন না। কিন্তু তাঁদের বয়সও তো চল্লিশ পেরিয়ে গেছে। দেখে যা মনে হচ্ছে, তাঁরা যদি একদিন মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসতে পারেন তাহলে তাঁরাও 'বুড়ো' বয়সে মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
দেশের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠদের মানে তরুণদের ক্ষমতার অলিন্দে প্রতিনিধিত্ব করতে না পারাটা কিন্তু যথেষ্ট আশঙ্কার।
আমাদের এমন নেতা বা সরকারের প্রয়োজন যাঁরা তরুণদের কথা ভাববেন, তরুণদের কথা ভেবে নীতি ঠিক করবেন এবং দেশটাকে তরুণদের বাসযোগ্য করে তুলবেন। আমার মতে প্রবীণদেরহাতে এই কাজটি সম্পন্ন করে দেওয়া একেবারেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে সচিন পাইলটকে [ছবি: পিটিআই]
তার জন্য সবার আগে সাংসদ-বিধায়কদের নির্ধারিত বয়স কমিয়ে দেওয়া উচিত। বর্তমানে ২৫ বছর পেরোলে তবেই সংসদ বা বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যায়। আমার মতে, এটাকে কমিয়ে ২১ করে দেওয়া উচিত।
রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন থেকে আরও একটি জিনিসও পরিষ্কার - কংগ্রেসের অন্দরমহলে বর্ষীয়ান নেতাদের প্রভাব এখনও অপরিসীম। কংগ্রেস মনে করছে এই বর্ষীয়ান নেতারা শুধুমাত্র এই দুই রাজ্যের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত নন, তাঁরা ২০১৯ সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের জয়ের জমিও তৈরি করতে পারবেন।
কিন্তু এই বর্ষীয়ানরা তো তরুণ প্রজন্মকে পথ দেখতে চান না। আর, এই বিষয়টি সত্যি সত্যিই বেশ চিন্তার। কিন্তু, নতুনদের তৈরি করতে না পারলে এই বর্ষীয়ান নেতাদের চলে যাওয়ার পরে কংগ্রেসের কী অবস্থা হবে? দূরদর্শিতার অভাব কংগ্রেসের সমূহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।
একদম তৃণমূল স্তরে নেমে এসে যে ভাবে সচিন পাইলট কাজ করেছেন তার ফলেই রাজস্থানে কংগ্রেসের জয়ের পথ প্রসস্ত হয়। আসলে রাজ্যের তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশের মন জয় করতে পেরেছিলেন সচিন। এই তরুণ প্রজন্মের অনেকেই বিজেপি সমর্থক। কিন্তু বসুন্ধরা রাজে সরকারের প্রতি বীতিশ্রদ্ধ হয়ে আর পাইলটের নেতৃত্বে উৎসাহিত হয়ে তাঁরা কংগ্রেস সমর্থনে নেমে পড়েন। এর পরেও পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রী না করার খেসারত কংগ্রেসকে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে দিতে হতে পারে। পাইলটকে উপমুখ্যমন্ত্রী করার ফাটকা খুব একটা কাজে আসবে না।
প্রায় বছর খানেক হতে চলল জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন রাহুল গান্ধী। তিনি বেশ কয়েকটি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যা এখনও খুব একটা চোখে পড়ছে না।
এই যে বর্ষীয়ানরা ক্ষমতা ভোগ করে চলেছেন আর তরুণরা বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে তা অনেকেরই অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে।
কিন্তু আমাদের মতো অনেকেই, যাঁরা কংগ্রেসের নীতিতে বিশ্বাস করি, সংস্কারের অপেক্ষায় রয়েছি। আমরা চাই ভারতের কোনও এক তরুণ উদারমনস্ক নেতা নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়ে দেশটিকে সত্যি সত্যি উদার, ধর্মনিরপেক্ষ ও সর্বজনীন করে তুলুন।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

