রামনবমী সংঘর্ষ: তৃণমূলের ধর্মীয় মিছিল কিন্তু আরএসএস এবং বিজেপির নৈতিক জয়
সম্প্রতি বাঙালি রাজ্য ত্রিপুরায় জিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিন্তা বাড়িয়েছে বিজেপি
- Total Shares
কিছুটা আচমকাই পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী উদযাপন 'ধর্মীয়' উৎসবের থেকে বেশি 'রাজনৈতিক' উৎসবে পরিণত হল। গত বছরেও বিজেপি মহাসমারোহে এই উৎসব পশ্চিমবঙ্গে পালন করেছিল। কিন্তু এ বছর তৃণমূল কর্মীরাও রামনবমী উদযাপনে মত্ত হয়ে উঠলেন।
নিজেকে একজন ধর্মনিরপেক্ষ নেত্রী হিসেবে প্রতিপন্ন করার কোনও সুযোগ ছাড়েন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন তিনি রামনবমী উদযাপন করা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করতে নেমে পড়লেন। গেরুয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে এই লড়াই নিঃসন্দেহে বিজেপির নৈতিক জয়। বাংলাই এখন বিজেপির পাখির চোখ।
এর আগে বামপন্থীদের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিয়েছিলেন মমতা। এবার তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি। দেশের অন্য রাজ্যগুলোর মতো বিজেপি কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে খুব একটা দাঁত ফোটাতে পারেনি। তাদের দোসর আরএসএসও পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত স্তরে ও বুথস্তরে খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।
বামেদের শক্তঘাঁটি বলে পরিচিত বাঙালি-প্রধান রাজ্য ত্রিপুরা সম্প্রতি দখল করেছে বিজেপি আর এটাই এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক সময় পশ্চিমবঙ্গকে বামদুর্গ বলা হত। কিন্তু বর্তমানে এই রাজ্যে বামপন্থী দলগুলোর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। ত্রিপুরার ফলাফলের পরে জাতীয় স্তরে বামপন্থীরা অনেকটাই প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। উল্টোদিকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে।
গেরুয়া শিবির রামনবমী উদযাপনে করে তৃণমূলের সাথে সরাসরি সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ল
বিজেপি ভালোভাবেই জানে, তৃণমূলকে গদিচ্যুত করতে হলে সমস্ত বিরোধীদলগুলোর ভোট একজোট করতে হবে তাদের। এ রাজ্যে বামপন্থীরা এখনও ২৫ শতাংশ মতো ভোট পেয়ে থাকে। ত্রিপুরায় বিজেপির জয়ের অন্যতম কারণ সেখানে বিরোধী কংগ্রেসের ৩৫ শতাংশ ভোট বিজেপি নিজের দিকে টানতে পেরেছিল, বামপন্থীদের প্রাপ্ত ভোটও ১.৮ শতাংশ কমেছে।
এই পরিস্থিতির মাঝে গেরুয়া শিবির খুব বুদ্ধি খাটিয়ে রামনবমী উদযাপনে করে তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতে জড়িযে পড়ল।
মূলত রাজ্যের হিন্দু ভোট দখল করতেই গত বছর থেকে ব্যাপক ভাবে রামনবমী উদযাপন শুরু করেছে বিজেপি। পাশাপাশি, বিজেপি নেতারা জোর প্রচার চালালেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন মুসলমান দরদী নেত্রী, যাঁর হিন্দুদের নিয়ে কোনও দায়বদ্ধতা নেই। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে এই প্রচার বিজেপির পক্ষে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল, যার প্রতিফলন কোচবিহারের উপনির্বাচনে দেখা গিয়েছিল যেখানে বিজেপি ২৮ শতাংশ ভোট পেয়ে সিপিএমকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দ্বিতীয স্থানে উঠে এসেছিল।
ত্রিপুরা নির্বাচনের পরে এ রাজ্যেও বিজেপির উত্থান আশঙ্কা করছে তৃণমূল। তাই তারা কোনওভাবেই বিজেপিকে রামনবমী উদযাপনের ফায়দা তুলতে দিতে রাজি নয়। হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে বিজেপির একচেটিয়া অধিকার খর্ব করতে তৃণমূলের তরফ থেকেও রামনবমী উদযাপনের ধুম পড়ে গেল।
রাজ্যের ৬৭ শতাংশ হিন্দু ভোটের দিকে এখন পাখির চোখ বিজেপির। মমতার সমর্থনে এখন রাজ্যের ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট একেবারে নিশ্চিত। মমতা নিজেও জানেন যে শুধুমাত্র এই ৩০ শতাংশ ভোট দিয়ে ক্ষমতা দখল সম্ভব নয়। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবে এবার তাকে হিন্দু তোষণও শুরু করতে হল।
জানুয়ারি মাসে তিনি বীরভূমে অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণ সম্মেলনে উপস্থিত ব্রাহ্মণদের হাতে ভাগবদগীতা তুলে দিয়েছেন। ভুলে গেলে চলবে না এই রাজ্যে বিজেপির উত্থান কিন্তু এই বীরভূম থেকেই।
সংবাদমাধ্যমের খবরগুলো থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার - রামনবমীর মিছিলগুলোতে তৃণমূলের থেকে অনেক বেশি লোক টানতে বিজেপি সফল হয়েছে।
তবে রামনবমীতে এর চেয়েও অনেক বড় সাফল্য পেয়েছে রাজ্যের হিন্দুত্ব ব্রিগেড, যাদের প্রিয় খেলা ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ। তাঁদের প্রিয় খেলার রঙ্গমঞ্চে তৃণমূলেরও যোগদান নিশ্চিত করতে পেরে।

