ভারতে ফের মোদী ও মমতার মুখোমুখি হাসিনা, তিস্তা প্রসঙ্গ উঠবেই উঠবে

আগামী নির্বাচনে কারো জল দরকার কারো ইলিশ, হয়তো নিজেদের প্রয়োজনটা নিজেরাই তুলবেন

 |  3-minute read |   24-05-2018
  • Total Shares

২৫ -২৬ মে। মাত্র দু‘দিনের সফর। রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত বিশ্বভারতীতে ও আসানসোলের কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যলয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বভারতীতে উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ ভবন। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ডি-লিট দেবে শেখ হাসিনাকে। দুটি স্থান ও ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যরকম আবেগ জড়িত।

বাংলাদেশের জাতির জনক, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আদ্য়ন্ত রবীন্দ্রভক্ত। পাকিস্তান যুগে যখন রবীন্দ্র চর্চা বন্ধের উদ্যোগ নিল সরকার সে সময়ে যে ক'জন রাজনীতিক প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন সে সময়ের তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। রবীন্দ্রচর্চা বন্ধের বিরুদ্ধে বেসরকারি ভাবে রবীন্দ্র চর্চায় গড়ে তোলা হয়েছিলো ছায়ানট। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তার পুত্র-কন্যাদের আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-সহ সবাইকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন ছায়ানটে, রবীন্দ্রচর্চা করতে। রবীন্দ্রনাথের লেখা "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি" গানটিকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু নিজে।

body_052418013456.jpgহাসিনার সফর যে কেবল ভবন উদ্বোধন ও ডি-লিট গ্রহনে সীমাবদ্ধ থাকছে না - তা বলার অপেক্ষা রাখে না

অন্যদিকে কাজি নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তারঁ জন্ম ভারতে হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে উদ্যোগী হয়ে তাঁকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং জাতীয় কবির মর্যাদা দেন। বাংলাদেশেও নজরুলের নামে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে শেখ হাসিনার উদ্যোগে। কাজী নজরুল ইসলামের জন্মভূমি চুরুলিয়ার পাশে গড়ে ওঠা নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনাকে ডি-লিট দিচ্ছে,সে কারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরের দিকগুলো ভিন্নতর, অন্যরকম। তবে হ্যাঁ, বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। শেখ হাসিনার এবারের সফর যে কেবল ভবন উদ্বোধন ও ডি-লিট গ্রহনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না-তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পদাধিকারবলে বিশ্বভারতীর আচার্য। তিনিও আসছেন পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরে। আবার অনুষ্ঠানটি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে. তাই তিনিও থাকছেন। সামনের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন। ভারতের জাতীয় নির্বাচন ও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনও খুব বেশি দূরে নয়। ভূ-রাজনীতি ও তিনটি নির্বাচন অনেকটাই পরস্পরে যুক্ত, একে অপরকে প্রয়োজন। বাংলাদেশের জন্য জ্বলন্ত ইস্যু তিস্তার পানি, একই জলের বিষয়টি কম গুরুত্বপূর্ণ নয় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছেও। কূটনীতিক মহলেও নড়াচড়া চলছে, হয়ত তিনজনের দেখা-সাক্ষাতে উঠে আসবে তিস্তার জল প্রসঙ্গ। শান্তিনিকেতনে নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনার নির্ধারিত বৈঠক আছে। মমতা বন্দোপারধ্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দেখা হচ্ছে শান্তিনিকেতনে, আসানসোলে এবং কলকাতার রাজভবনের ভোজসভায়। কোনওটাতে না কোনওটাতে উঠবে তিস্তা প্রসঙ্গে আলোচনা

body1_052418013542.jpgআগামীতে নির্বাচনের প্রয়োজনে কারও জল দরকার, কারও ইলিশ

এর আগে বাংলাদেশ সফরের সময়ে তিস্তার জলের বিষয়ে মমতা বলেছিলেন, তাঁর উপরে ভরসা রাখতে। বাংলাদেশ ভরসা রেখেছে। একই অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গে পদ্মার ইলিশ যাওয়া নিয়ে কথা উঠলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, জল এলে ইলিশ যাবে। জলও আসেনি ইলিশও যায়নি। আগামীতে নির্বাচনের প্রয়োজনে কারও জল দরকার কারও ইলিশ। হয়তো নিজেদের প্রয়োজনটা নিজেরাই তুলবেন। কেবল তিস্তার জলের বিষয়টিই নয়, এ অঞ্চলেরর ভূ-রাজনীতির ভবিষ্যৎ, আসন্ন নির্বাচন, পরস্পরেরর সম্পর্ক আরও নিবিড় করার কৌশল, আলোচনা হতে পারে নানা বিষয় নিয়ে। বাংলাদেশেও একটি মহল গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে সফরেরর দিকে।

রাজনীতির অঙ্গনেও বলাবলি হচ্ছে, ছোট সফর হতে পারে বড় গুরুত্বের। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব কোনও রাখঢাকের বিষয় নয়। এক সময়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলগুলোর ক্ষমতায় যাওয়ার প্রধান হাতিয়ার ছিলো ভারত বিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানো- এখন অনেকাংশে তার অবসান ঘটলেও এখন বিষয়টি অন্যরকম। সবাই এখন বন্ধু হতে চায়।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

LAYEK UZZAMAN LAYEK UZZAMAN

Journalist and Political commentator in Bangladesh.

Comment