আচার্য নরেন্দ্র মোদীর চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই বেশি করে পেল বিশ্বভারতী

যে জেলায় উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে, সেখানে আচার্য প্রচার করলেন সরকারি প্রকল্পের

 |  3-minute read |   25-05-2018
  • Total Shares

তিনি যে বাগ্মী এবং তাঁর বক্তৃতা যে বিক্ষোভে জল ঢেলে দিতে পারে তা আরও একবার প্রমাণ করলেন নরেন্দ্র মোদী।

সমাবর্তনের মতো অনুষ্ঠানের রীতিই হল কার্পেট দিয়ে ক্ষত ঢেকে দেওয়া। আর এই ধরনের মঞ্চকেই বিক্ষোভের জায়গা হিসাবে বেছে নেওয়া চিরকালই বিক্ষুব্ধদের পছন্দ। বিশ্বভারতীও ব্যতিক্রম ছিল না। প্রধামনমন্ত্রীর সফরকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল পানীয় জলের আকালের জন্য বিক্ষোভ দেখানের সময় হিসাবে। এমন অপ্রিয় প্রসঙ্গ এড়িয়েই যেতে পারতেন তিনি, কিন্তু উপস্থিত সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়ে দেন, আচার্য হিসাবে এই দায় তাঁর উপরেই বর্তায়।

স্বভাবতই করতালি, উচ্ছ্বসিত আশ্রমিকরা। নরেন্দ্র মোদী যেখানে যান, সেই জায়গার স্থানীয় ভাষায় দু’চার কথা বলেই থাকেন, এতে নতুনত্ব কিছু নেই। বিশ্বভারতীর আম্রকুঞ্জে তিনি বললেন “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।” স্বভাবতই করতালিতে ফেটে পড়ল চত্বর।

body1_052518035506.jpgসমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -- সুবীর হালদার

করতালির পর করতালি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানের সঙ্গে কী মানায়? প্রাথমিক স্কুল থেকে প্রত্যেকই শিখে এসেছি, স্কুলের অনুষ্ঠানে করতালি দিতে নেই, বিশেষ করে কোনও শিক্ষক বা প্রধানশিক্ষক কিছু বললে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, সেই প্রতিষ্ঠানের আশ্রমিকরা কি সে কথা জানেন না? আরও একটা প্রশ্ন উঠতে পারে, সমাবর্তনে তাঁরা নরেন্দ্র মোদীকে কী হিসাবে পেলেন, আচার্য নাকি দেশের প্রধানমন্ত্রী?   

প্রধানমন্ত্রী হিসাবে যে দিন সংসদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী, বেশ কয়েকবার তিনি “ভাইয়ো অর বহেনো” বলে সম্বোধন করেছিলেন সাংসদদের। নিয়ম অনুযায়ী, যা বলার অধ্যক্ষকেই বলতে হয়। একাদিক্রমে ভোটপ্রচারের ঘোর তাঁর কাটেনি বলেই হয়তো এমন ঘটেছিল।

body_052518035609.jpgবাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করছেন মোদী ও হাসিনা

তার পরে তো তিনি বিভিন্ন দেশের সংসদে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বক্তৃতা করেছেন। তার পরেও তিনি রাজনীতির খোলস ছাড়তে পারলেন না কেন? দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও কেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গুজরাটের সংযোগের কথা তুললেন? তাজিকিস্তান-আফগানিস্তানের প্রসঙ্গ ও সেখানে রবীন্দ্রনাথের প্রভাবের কথা অবশ্যই তিনি বলেছেন। তার পরেও কিন্তু প্রশ্নটা উঠবে, বিশ্বভারতীর আচার্য কেন গুজরাটের প্রসঙ্গ তুললেন, তিনি তো দেশের প্রধানমন্ত্রীও বটে।

সাধারণ ভাবে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের যে বাচনভঙ্গিমা দেখে আমরা অভ্যস্ত, আচার্য নরেন্দ্র মোদীর বাচনভঙ্গি তার চেয়ে অনেক বেশি প্রধানমন্ত্রীসুলভ ছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন সরকারি প্রকল্পের কথা বলবেন আচার্য? পরিচ্ছন্নতার কথা তিনি বলতেই পারেন, কিন্তু সে সবই বিশ্ববিদ্যালয়-কেন্দ্রিক হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

তিনি অতিথি নন, তিনি প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি আচার্য হিসাবেই বিশ্বভারতীতে হাজির হয়েছিলেন। এ কথা বলেছেন নরেন্দ্র মোদী নিজেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজনীতি থেকে তিনি নিজেকে বার করতে পারলেন না। প্রচার করলেন সরকারি প্রকল্পের। বিশ্বভারতী আবার সেই জেলায়, যে জেলায় উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে!

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি বিরল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক (ভিজিটর) হলেন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধান (রেক্টর) হলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল। আচার্য পদে সাধারণত আসীন হন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তার পরেও রাজনীতির ঊর্ধ্বে এ বার উঠতে পারেনি বিশ্বভারতী। বিশ্বভারতীর সর্বোচ্চ সম্মান দেশিকোত্তমের জন্য এ বার যে সব নাম সুপারিশ করা হয়েছিল, তাতে সায় ছিল না কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের ঘনিষ্ঠদের নামই ছিল তালিকায়, যদিও নাম ছিল অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনেরও। সমাবর্তনে দেশিকোত্তম না দেওয়া নিয়ে বিরক্তিও প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুষ্ঠানের আগের দিন।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানের দিনই বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment