সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ২: যুদ্ধ নয়, এতেই কাজ হবে

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকই সবচেয়ে ভালো পন্থা, দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ না হওয়াই ভালো

 |  5-minute read |   27-02-2019
  • Total Shares

টিভিতে যাঁরা লড়াই করছেন তাঁরা ওই যুদ্ধবিমানের আসনে বসে ছিলেন না এবং পাকিস্তানের দাবি মতো সেখানে বোমাও ফেলেননি, তাই ওই সব টেলিভিশন যোদ্ধাদের থেকে চোখটা একটু সরিয়ে নেওয়া যাক। ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে ভারতীয় বায়ুসেনার হামলায় তাদের কোনও রকম উল্লেখয়োগ্য প্রাণহানি ও সম্পত্তিহানি হয়নি বলে দাবি করেছে পাকিস্তান, এর অর্থ আমরা এমন কিছু করেছি যা তাদের সাজিয়ে গুছিয়ে অস্বীকার করতে হচ্ছে।

এটা দারুণ ব্যাপার – কারণ কেউই চাইছে না যে দুই পরমাণুশক্তিধর দেশের মধ্যে সম্মুখসমর বাধুক।

আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে কাশ্মীরের উরির সেনা ছাউনিতে হামলার পরে ২০১৬ সালে যে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছিল, এখানেই সেই একই ভাব ছিল। পাকিস্তান দাবি করেছিল যেন কিছুই ঘটেনি। আমরা দাবি করেছিলাম যে এটা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আক্রমণ – এমনকি ওই অপারেশনটিকে দুর্দান্ত ভাবে ক্যামেরায় বন্দিও করা হয়েছিল।

surgical1_022719082124.jpg উরির প্রত্যাঘাতে যে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করা হয়েছিল সেটি নিয়ে তৈরি ছবি সুপারহিট হয়েছে। (ছবি: স্ক্রিনগ্র্যাব/ইউটিউব)

আমরা যাকে সত্যি বলে মনে করি আমরা সেটাই বলব, ওরা যেটা সত্যি বলে মনে করে ওরাও সেটাই বলবে – দুই দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে এ নিয়ে টেলিভিশন যোদ্ধারা লড়াই করবে। আমরা যারা তর্ক করছি তারা আসলে কেউই জানি না যে কী হয়েছে এবং কী হয়নি – রাজনৈতিক গণতন্ত্রে আমরা অবশ্য খুব দ্রুত বুঝে যাই যে ঠিক কী ঘটেছে বললে লোকে বিশ্বাস করবে।

আমরা যদি মনে ভাবি যে “দেশের জনতার সামগ্রিক চাহিদা”কে চরিতার্থ করার মতো প্রতিহিংসা দেখাতে সক্ষম হয়েছি এবং এখানেই থেমে যাব, তা হলে এটাও বেশ ভালো ব্যাপার।

যদি পাকিস্তান এর তীব্রতা বৃদ্ধি করার মতো মূর্খামি না করে তা হলে এখানেই পুরো ব্যাপারটা থেমে যেতে পারে।

সে যাই হোক, আমরা নিশ্চিত ভাবে কোনও কিছুই অনুমান করে নিতে পারি না এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উপরে অভ্যন্তরীণ চাপ কতটা প্রবল ভাবে রয়েছে সে ব্যাপারে আমাদের কোনও ধারনা নেই আর সেনা তাঁকে যে পরামর্শ দেবে তাঁকে সেই পরামর্শ মতো কাজ করতে হবে। পাকিস্তান এমন একটা দেশ যে দেশ চির কাল ধরে তাদের দুপাশের সীমান্ত নিয়ে লড়ে চলেছে আফগানিস্তান ও ভারতের সঙ্গে।

তবে এ ক্ষেত্রে অন্য স্বার্থও কাজ করেছে। সৌদি আরবের যুবরাজের সরকারি ভারত সফরের পরে কাউন্সিল অফ ফরেন মিনিস্টার্স অফ দ্য অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) ৪৬তম পর্বের উদ্বোধনী প্লেনারিতে বক্তৃতা করার জন্য সম্মানিত অতিথি (গেস্ট অফ অনার) হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে।

modi-salman2_022719082158.jpgসৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনের সাম্প্রতিক সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ (ছবি: টুইটার)

যে অনুষ্ঠানের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর বিদেশমন্ত্রী শেখ আবদুল্লা বিন আল নাহিয়ানের থেকে সুষমা স্বরাজ যে আমন্ত্রণ পেয়েছেন, আবু ধাবিতে সেই বৈঠক হবে ১ ও ২ মার্চ – সৌদি আরবের কাছ থেকে ছাড়পত্র না পেলে নাহিয়ান এই আমন্ত্রণ জানাতেই পারতেন না।

এত দিন পর্যন্ত ওআইসি-র পর্যবেক্ষক হওয়ার ব্যাপারে ভারতের সবরকম বিরোধিতা করে এসেছে পাকিস্তান।

এই সংগঠনটি প্রথম থেকে পাকিস্তানপন্থী – আরও ভালো ভাবে বলতে গেলে: ২০১৭ সালের বিদেশ মন্ত্রীদের বৈঠকে ওআইসি নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা কাশ্মীরের মানুষের হিতার্থে তারা অবিচল ভাবে সমর্থন করে যাবে।

আরও অনেক ব্যাপার রয়েছে: ওই বিবরণীতে বলা হয় যে, “১৯৪৭ সাল থেকে... ভারতীয় দখলদারি সেনা সেখানে যে ভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে তা তাদের ভীষণ উদ্বেগের কারণ।”

১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সন্ত্রাসসবাদী হামলা হওয়ার পরে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভারত এই আমন্ত্রণ পেয়েছে।

এবার বিশ্বের ইসলমিক দেশগুলোর সবচেয়ে বড় জমায়েতে নিজের কথা বলার সুযোগ পাবে ভারত – যেখানে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশিও থাকবেন। সুষমা স্বরাজ বক্তৃতা করার পরে দু-দিনের আলোচনা শেষে কাশ্মীর নিয়ে ওআইসি কী অবস্থান গ্রহণ করে সেটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হবে।

khalid4_022719082224.jpgওআইসি-তে সুষমা স্বরাজের আমন্ত্রণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। (ছবি: টুইটার)

এ থেকে একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে গেছে যে মঞ্চ সম্পূর্ণ ভাবেই পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে রয়েছে, সেই মঞ্চে এবার উঠতে চলেছে ভারতও।

ভারতের সঙ্গে বিপুল বাণিজ্যিক সম্ভাবনার প্রভাবও এতে রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় খনিজ তেল রফতানিকারী দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কথা চলছে যৌথ উদ্যোগে পেট্রোকেমিক্যাল ও শোধনাগার প্রকল্প গড়ার ব্যাপারে। গত বছর ডিসেম্বর মাসে মুকেশ আম্বানির সাড়ম্বর বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে এ কথা জানিয়েছিলেন সৌদি আরবের তেলমন্ত্রী খালিদ আল-ফালি। সংবাদমাধ্যমের নজর ছিল বিয়ের অনুষ্ঠানে আসা হিলারি ক্লিন্টন ও বেয়ন্সের দিকে – কিন্তু সৌদি আরবের তেলমন্ত্রীর আতিথ্যগ্রহণের মধ্যে বাণিজ্যিক ও ভৌগোলিক তাৎপর্য ছিল।

khalid4_022719082248.jpgবিয়ের সেই বিশেষ অতিথি। (ছবি: টুইটার)

এবার দেখা যাক কী ভাষায় ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে ওআইসি আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী বলা হয়েছে, “ভারতে যে ১৮.৮ কোটি মুসলমান রয়েছেন এবং সেই দেশের বহুত্ববাদে তাঁদের যে অবদান রয়েছে এবং ইসলামি বিশ্বে বারতের যে অবদান রয়েছে তাকে স্বীকৃতি দিয়ে স্বাগত জানানো হচ্ছে।”

ঠিক এই জায়গাটিতেই আমরা অস্বচ্ছন্দ।

আমরা সরকারি মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমাদের বহুত্ববাদের কথা বলি কিন্তু এই তত্ত্বে বিশ্বাস করার কোনও লক্ষণ দেখাই না। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ ও বাজার হিসাবে আমরা কৌশলগত ও কূটনৈতিক লড়াই জিততে পারি – কিন্তু আমরা যদি কাশ্মীরের মানুষের প্রতি আরও বেশি করে সহানুভূতিশীল না হই, তা হলে আমরা বিবেকের কাছে পরাজিত হয়ে যাব।

indian-army5_022719082345.jpg কাশ্মীরে আমাদের সেই স্নেহের স্পর্শের কথা যেন না ভুলে যাই। (ছবি: ফেসবুক)

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বেশ স্মার্ট অপারেশন। কিন্তু এ কথা কখনোই ভুললে চলবে না যে কাশ্মীরের মানুষের হৃদয় জয় করারও একটা দাম আছে।

আমরা যখন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বলতে উঠব তখন যেন আমাদের সেই বহুত্ববাদের কথা কেউ মনে করিয়ে না দেয়।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SABA NAQVI SABA NAQVI @_sabanaqvi

Eminent political journalist and writer. Author, most recently of Shades of Saffron: From Vajpayee To Modi

Comment