কী ভাবে কোরান ও মহাত্মা গান্ধীকে উদ্ধৃত করে ওআইসি-তে ভারতের বার্তা পাঠালেন সুষমা স্বরাজ

দিল্লির শান্তি বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি সুষমা জানিয়ে দিলেন সন্ত্রাসবাদকে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না ভারত

 |  4-minute read |   03-03-2019
  • Total Shares

কোরান থেকে উদ্ধৃত করে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এক ঝাঁক মুসলিম রাষ্ট্রকে একটি বার্তাই দিলেন - মহাত্মা গান্ধীর ভারতবর্ষ শান্তি চায়, তাই বলে নিরাপত্তার সঙ্গে আপোষ করে নয়।

অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি)-এর সম্মেলনের প্রারম্ভিক অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে এই বার্তা দিয়েছেন স্বরাজ। এই প্রথমবার ভারতকে ওআইসি সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

জানিয়ে রাখা ভালো, ৪৭টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ সম্মিলিত এই সংগঠন রাষ্ট্রপুঞ্জের পর সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রগোষ্ঠী। ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মিলিত জনসংখ্যা ১৯০ কোটির উপরে।

নিজের বক্তব্যে, পাকিস্তানের নাম না করে, স্বরাজ জানিয়েছেন যে দেশগুলো সন্ত্রাসবাদকে মদত দিয়ে চলেছে তাদের সঙ্গে সমস্ত রকম সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা উচিত। বিদেশমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ইসলাম যখন শান্তির কথা বলে তখন ইসলামকে বিকৃত করে বিশ্বজুড়ে অশান্তি ছড়াবার চেষ্টা চলছে।

স্বরাজ বলেছেন, "সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই মানে কোনও ধর্মের বিরোধিতা করা নয়। তা কখনও হতেই পারে না। ইসলামের আক্ষরিক অর্থ শান্তি। আল্লাহর ৯৯টি নাম রয়েছে আর এদের মধ্যে একটি নামেরও মানে সন্ত্রাস নয়। বিশ্বের প্রতিটি ধর্মই শান্তি, সহানুভূতি ও ভাতৃত্ববোধে বিশ্বাস করে।"

গোটা বিশ্বকে নয়া দিল্লি যে শান্তির বার্তাটা পাঠাতে চাইছিল এই অনুষ্ঠানে সেই বার্তাটাই বহন করে নিয়ে গেলেন স্বরাজ। এর সঙ্গে অবশ্য একটি কঠোর সতর্কবার্তাও ছিল - কেউ যদি দেশের সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করে তাহলে তা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।

এখানে উল্লেখ্য, ভারতকে এই অধিবেশনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে পাকিস্তান এই অধিবেশন বয়কট করেছিল।

তাঁর ১৫মিনিটের বক্তৃতার মাধ্যমে সুষমা কূটনৈতিক ময়দানে পাকিস্তানকে পরাস্ত করতে সফল হয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি বিশ্বকে বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন যে ভারত শান্তি প্রিয় একটি দেশ যার উপর সীমান্তের ওপার থেকে সন্ত্রাসবাদ বারংবার থাবা বসিয়েছে।

body_030319044537.jpgওআইসি সম্মেলনে জঙ্গিদের মদতদাতা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বললেন সুষমা স্বরাজ [ছবি: রয়টার্স]

সুষমা স্বরাজ নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীসভার অন্যতম দক্ষ মন্ত্রী যাঁকে দলমত নির্বিশেষে সকলেই সম্মান করে থাকেন। তিনি দেশের দ্বিতীয় মহিলা বিদেশ মন্ত্রী। দেশের প্রথম মহিলা বিদেশ মন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।

এর আগে, স্বরাজ ভারতের তথ্য, সম্প্রচার এবং টেলিকম মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন।

পাকিস্তানের মাটিতে অবস্থিত জঙ্গি ঘাঁটিগুলোর উপর ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইকের ঠিক আগে একটি সর্বদলীয় বৈঠক আয়োজন করা হয়েছিল। সেই বৈঠকে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সুষমা স্বরাজ। সমস্ত দলের নেতৃত্বের কাছে স্বরাজের গ্রহনযোগ্যতার কথা মাথায় রেখে সেই বৈঠকে তাঁকে প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব দেওয়ায় হয় মোদী সরকারের পক্ষ থেকে।

বিদেশ মন্ত্রী হিসেবে শুধুমাত্র ওআইসি বৈঠকেই স্বরাজ ভারতকে গর্বিত করেননি।

টুইটারকে কী ভাবে সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে হয় তাও বিদেশ মন্ত্রী দেখিয়ে দিয়েছেন। তবে এই পদ্ধতি কিন্তু সকলের পক্ষে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। গোটা বিশ্বে ভারতীয়রা যখনই বিপদে পড়েছে তখনই তারা টুইটারের মাধ্যমে স্বরাজের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। আর, যে দ্রুত গতিতে সেই সমস্যাগুলোর অধিকাংশেরই নিষ্পত্তি ঘটেছে, তা দেখে আশ্চর্য হতে হয়।

স্বরাজের টুইটার হ্যান্ডেলে সর্বদাই সাহায্যের আর্জি লেগে থাকে। স্বরাজও দেখিয়ে দিয়েছেন যে এত ব্যস্ততার মাঝে টুইটারকে কী ভাবে সঠিক রূপে ব্যবহার করা যেতে পারে।

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও টুইট করা হয়েছিল। সেই ভিডিওটি দেখে স্বরাজ ইরাকে আটকে পড়া ১৬৮জন ভারতীয়দের উদ্ধার নিশ্চিত করেন।

সেই বছরেই এক ইয়েমেনি মহিলা স্বরাজের কাছে টুইটারে সাহায্য প্রার্থনা করেন। এই মহিলার স্বামী ভারতীয়। তিনি নিজের দেশে আটকে পড়েছিলেন। মহিলার আবেদনে স্বরাজ সাড়া দিয়ে বলেছিলেন যে এই মহিলাকে সাহায্য করা তাঁর কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এবং, সেই মহিলাও শেষ পর্যন্ত তাঁর স্বামী ও আট মাসের সন্তানের কাছে ফিরে আসতে পারেন। যে নিষ্ঠার সঙ্গে স্বরাজ তাঁর দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসাপ্রাপ্য।

অটল বিহারি বাজপেয়ী ও এল কে আডবাণীর মতো বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন সুষমা স্বরাজ। আডবাণীর শিবিরে লোক হয়েও মোদী জমানাতেও তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। মনে রাখবেন, যশবন্ত সিনহা ও যশবন্ত সিংয়ের মতো আডবাণী শিবিরের বহু নেতাকেই কিন্তু মোদীর আমলে সাইডলাইন করে দেওয়া হয়েছে।

body1_030319044635.jpgএল কে আডবাণীর শিবিরের লোক হয়েও মোদী জমানায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছেন সুষমা স্বরাজ [সৌজন্যে: টুইটার]

কিন্তু, স্বরাজের প্রতিভাকে সহজে উপেক্ষা করা যায় না।

বক্তা হিসেবে তিনি অনবদ্য এবং রাজনৈতিক হিসেবে তাঁর অতীতটা কিন্তু বেশ পরিষ্কার। বর্তমানে বিদিশা কেন্দ্রের নির্বাচিত সাংসদ তিনি। স্বরাজ জানিয়ে দিয়েছেন, কিছু শারীরিক সমস্যার ফলে তিনি ২০১৯ সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী হবে না। তবে তিনি হয়ত সক্রিয় রাজনীতিতে থেকে যাবেন।

বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে সুষমা স্বরাজকে আরও বড় দায়িত্ব দেওয়া উচিত। কারণ যারা কাজ করেন এবং প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেন তাদেরকে তো পুরস্কৃত করাই উচিত।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

VANDANA VANDANA @vandana5

Author is a Delhi-based journalist.

Comment