মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পেরলেও বন্ধ হয়নি সন্ত্রাস

বিরোধীরা হয় মনোনয়ন দিতে পারেননি সন্ত্রাসে না হয় প্রত্যাহার করেছন আতঙ্কে

 |  3-minute read |   01-05-2018
  • Total Shares

ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পরেই মশারি খাটিয়েছিল বীরভূম। মশারির ফাঁক-ফোকর দিয়ে যে সব মশা ঢুকে পড়ছিল, তাদের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল উন্নয়ন। ফল, বীরভূম জেলা পরিষদের সবক’টি আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী তৃণমূল। বীরভূমের মতো না হলেও, পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসকদলের জয় দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়, বিরোধীরা হয় মনোনয়ন দাখিল করতে পারেননি সন্ত্রাসের জন্য, না হলে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হয়েছে আতঙ্কে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ও প্রত্যাহারের শেষ দিনের মধ্যে অনেকটা ফাঁক থেকে যাওয়ায়, সেই সময়টাকে শাসকদল কাজে লাগিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

বিভিন্ন সময় রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতা ঘোষণা করেছিলেন, একশো শতাংশ আসনেই তাঁরা জয় চান, তা ছাড়া যে ভাবে রাজ্যে উন্নয়ন হয়েছে ও হচ্ছে, তাতে বিরোধীদের লড়াই করবে কী নিয়ে? যখন দেখা গেল যে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিরোধীরা অল্প সময়ের মধ্যে প্রার্থী স্থির করে ফেলেছে, তখনই শুরু হল সমস্যা। বীরভূমের এক তৃণমূল নেতার সরস মন্তব্য, এবার মশা মারার স্প্রে করা হবে। শুরু হল স্প্রে করা। রাজ্যজুড়ে তা থেকে বাদ গেলেন না সাংবাদিকরাও।

new2_050118085343.jpgভাঙচুর করা হয়েছে বিরোধীদের পার্টি অফিস

রাজ্যে সন্ত্রাস কোন জায়গায় পৌঁছেছে, তা বোঝা গিয়েছে সোমবার রাতে, যখন এক সন্তানসম্ভবা মহিলাকে মারধর ও শ্লীলতাহানি করা হয় নদিয়ায়। তবে এটাই একমাত্র উদাহরণ নয়। অনেক সংবাদই প্রকাশ্যে আসেনি, তার বড় কারণ, বিভিন্ন জেলায় যে সব সাংবাদিক কাজ করেন, তাঁরাও নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেককিছুই লেখার সাহস পাননি। পুলিশের অবস্থা ঠুঁটো জগন্নাতের মতো আর নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিত, এমন দাবি কোনও মহল থেকেই শোনা যাচ্ছে না।

আদালতের নির্দেশে অতিরিক্ত একদিন মনোনয়ন পত্র দাখিলের জন্য ধার্য করা হলেও, সে দিন বিভিন্ন থানা কার্যত ছিল লোকাল তৃণমূল কংগ্রেসের হাতের পুতুল, স্থানীয় প্রশাসন, মানে বিভিন্ন বিডিও অফিসেরও একই অবস্থা ছিল। কোনও মশা গলতে পারেনি। কয়েকজন সাংবাদিক নিজের মতো করে খবর খুঁজতে বেরিয়েছিলেন। একটি সিপিএম পার্টি অফিস ভাঙার ছবি তুলতেই কোথা থেকে যেন লোকজন চলে আসে, কোমরে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি। তারপরে আর খবর প্রকাশ করার সাহস পাননি সেই সাংবাদিক।

new1_050118085404.jpgবিভিন্ন জেলাতে এখনও ছড়িয়ে সন্ত্রাসের চিহ্ন

বিভিন্ন জেলায় সাংবাদিকরা মনোনয়নের দিন শাসকদলের কার্যকলাপ নিয়ে পুলিশকর্তাদের জানালে তাঁরা একটাই জবাব পান, “তাই? কই দেখতে পাচ্ছি না তো!” পরে অবশ্য কয়েকজন পুলিশকর্তা জনান্তিকে অতি বিশ্বস্ত সাংবাদিকদের বলেন, “ভাই, আমাদের সে দিন কিছু করার ছিল না, উপরতলার নির্দেশ ছিল, বুঝতেই পারছেন।”

সিপিএম আমলেও যে মুর্শিদাবাদ ছিল কংগ্রেসের দুর্গ, সেখানেও এ বার বহু আসনে মনোনয়নপত্র জমাই করতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। তবে সবচেয়ে হাস্যকর (এবং ভয়ঙ্করও বটে) ঘটনা ছিল, তৃণমূলের পতাকা হাতে এক সিপিএম প্রার্থীর প্রচার। এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে, যেখানে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার পরে বিরোধী দলের প্রার্থীরা শাসকদলে যোগ দিয়েছেন উন্নয়ন দেখে। ২০১১ সাল থেকে আট বছর ধরে উন্নয়ন দেখতে পেলেন না, মনোনয়ন পত্র দেওয়ার পরে উন্নয়নে মোহিত হয়ে গেলেন!

রাজ্যে নির্বাচনের দিন ঘোষণার পরে মুর্শিদাবাদে বিজেপি জেলা সভাপতি প্রহৃত হয়েছেন বলে অভিযোগ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী প্রহৃত না হলেও তাঁর সামনেই কংগ্রেস কর্মীদের হেনস্থা করা হয় তাঁর গড় মুর্শিদাবাদেই। দুই সংবাদমাধ্যমের দুই কর্মীকে চরম হেনস্থা করা হয় আলিপুরে। আলিপুর নামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাসদর হলেও, তা আসলে কলকাতাতেই।

বিরোধীরা যখন এ সব নিয়ে সরব, তখন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী সে সব অভিযোগে বিশেষ আমল দেননি। তাই তাঁর দলের কর্মীরাও নিজেদের সংযত করার প্রয়োজন মনে করেননি।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment