২০১৯ লোকসভা নির্বাচন: নীতীশ কুমার ও রামবিলাস পাসোয়ানের জোট কেন গুরুত্বপূর্ণ?
২০০৫ বিধানসভা নির্বাচনেও জোট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তবে তা ফলপ্রসূ হয়নি
- Total Shares
২০১৯ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও লোক জনশক্তি পার্টির (এলজেপি) সর্বময় নেতা রামবিলাস পাসোয়ানের মধ্যে ১৪ বছরের 'বনবাস' পর্ব শেষ হতে চলেছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে এই দুই নেতাকে আবার একত্রে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিরোধিতা করতে দেখা যাবে।
২০০৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আরজেডি-বিরোধী জোট তৈরির সময়ে নীতীশ কুমার তাঁর পুরোনো বন্ধু পাসোয়ানের সমর্থন চেয়েছিলেন। শুধু সমর্থন চেয়েই ক্ষান্ত থাকেননি নীতীশ কুমার, তিনি শর্ত দিয়েছিলেন যে পাসোয়ান যদি আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিতে রাজি থাকেন তাহলে নির্বাচন জিতলে তাঁকেই জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী করা হবে।
কিন্তু, এই শর্ত মঞ্জুর করেননি পাসোয়ান। উল্টে পাসোয়ান জানিয়েছিলেন, নীতীশ যদি বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেন শুধুমাত্র তবেই তিনি নীতীশের সঙ্গে রাজি হবেন। কিন্তু সে সময়ে, এই দাবি মানতে অপারগ ছিলেন নীতীশ।
১৪ বছর বাদে অবশ্য এই দুই নেতা আবার এক হয়েছেন। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা তাঁদের পুরোনো রাজনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।
গত রবিবার বিজেপির জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ জানিয়েছেন যে আগামী লোকসভা নির্বাচনে জোটের পক্ষ থেকে ছ'টি আসন পাসোয়ানের এলজেপির জন্য বরাদ্দ থাকবে। এছাড়া রাজ্যসভায় বিহার থেকে একটি আসনে দলিত প্রার্থীকে মনোনীত করার কথাও ঘোষণা করেন শাহ। বিজেপির এহেন সিদ্ধান্ত থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে - বর্তমানে রাজ্য থেকে বিজেপির ২২জন লোকসভা সাংসদ থাকা সত্ত্বেও এই নির্বাচনে কিছুটা ব্যাকফুটে বিজেপি।
অমিত শাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে এবার বিজেপি ও নীতীশের জেডিইউ ১৭টি করে লোকসভা আসনে প্রার্থী দেবে। রাজ্যের বাকি ছ'টি আসন এলজেপির জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে।
১৪ বছর পরে দুটি নেতাকে আবার একত্রে ,লড়তে দেখা যাবে [ছবি: পিটিআই]
এই ঘোষণা পর পাটনার এক বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা জানাচ্ছেন, "রামবিলাস পাসোয়ানের ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মা ও নীতীশের জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখেই বিজেপি এই আসন সমঝোতায় রাজি হয়েছে। এর ফলে, বিজেপির বর্তমান সাংসদদের মধ্যে অন্তত পাঁচজনকে পুনরায় প্রার্থী করা সম্ভব হবে না।"
অমিত শাহের এই ঘোষণা পিছনে অনেকেই রামবিলাস পাসোয়ানের পুত্র চিরাগের কৃতিত্ব দেখছেন। চিরাগ দলের মুখপাত্র, এই চিরাগই আসলে বিজেপির সঙ্গে এই জোট কেন্দ্রিক আলোচনাগুলো করেছেন।
উপেন্দ্র কুশওয়াহার রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি (আরকেএলএসপি) বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ ত্যাগ করার পরেই গেরুয়া শিবির বুঝতে পেরেছিল যে বিরোধীদের পরবর্তী 'টার্গেট' হবেন পাসোয়ানরা।
রাজ্যের তফসিলি জাতির প্রতিনিধিরা মোট ২২টি উপশ্রেণীতে বিভক্ত। এর মধ্যে পাসোয়ানদের জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বহু বছর ধরেই ৬.৫ শতাংশ ভোট ব্যাঙ্ক সঙ্গে করে বিহারের দলিত মুখ হয়ে উঠেছেন রাম বিলাস পাসোয়ান।
সংখ্যার বিচারে বিহারের দলিত সম্প্রদায়ে রাজ্যের যাদব সম্প্রদায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ। যদিও, যাদবদের মতো দলিতদের এতটা একতাবোধ নেই।
পাসোয়ান যে দলের সঙ্গেই জোট করুন না কেন, দলিতরা বরাবরই পাসোয়ানের প্রতি অনুগত।
তাই তো বিজেপি নীতীশ ও রাম বিলাস পাসোয়ানের সমস্ত 'ইচ্ছে' পূরণ করে জোট বাঁধতে রাজি হয়েছে। বিজেপি খুব ভালো করেই জানে এই দুই নেতাকে সঙ্গে পাওয়া মানে রাজ্যের দলিত, উচ্চবর্ণ, অনগ্রসর শ্রেণী ও মুসলিম ভোটের একাংশও তাদের ঝুলিতে আসবে। এর ফলে বড় ধাক্কা খেতে পারে লালুর মুসলিম-যাদব-দলিত কম্বিনেশন।
বিহারের ভোটদাতের ১৫ শতাংশ দলিত ভোটার। এ ক্ষেত্রে তারা যাদবদের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দেয়।
এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে রাজ্য রাজনীতিতে দলিত ভোট ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
বিহার বিধানসভার ২৪৩টি আসনের মধ্যে ৩৮টি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত। ২০১৫ বিধানসভা নির্বাচনে এই ৩৮টি আসনের মধ্যে ১৪টি আসনে আরজেডি জয়লাভ করেছে। মহাজোটের শরিক হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করা যে জেডি(ইউ) ১০টি আসন পেয়েছিল। কংগ্রেস ও বিজেপি এইসংরক্ষিত আসনগুলিতে পাঁচটি করে আসনে জয়লাভ করেছিল। বাকি আসন পেয়েছিল অন্য দল।
মুখ্য দলগুলোর মধ্যে তফসিলি জাতি সংরক্ষিত আসনগুলোতে বিজেপির সাফল্য সবচেয়ে কম।
এক বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা জানিয়েছেন, "২০১৪ সালে বিজেপি সকলকে শুইয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের লড়াই কিন্তু বেশ কঠিন। বিরোধীরা ছাড়াও প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটের আশঙ্কাও রয়েছে। আর এই কঠিন পরিস্থিতিতে লড়তে গেলে আমাদের নীতীশ ও পাসোয়ানের সমর্থনটা বেশ প্রয়োজন ছিল।"
বিহারের ৪০টি লোকসভা আসনের মধ্যে বর্তমানে এনডিএর ৩০টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে বিজেপির ২২টি, এলজেপির ছ'টি ও জেডি(ইউ)র দু'টি।
(সৌজন্যে: মেল টুডে)
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে