কেন উগ্র হিন্দুত্ববাদী শিবসেনার কাছাকাছি আসতে চাইছেন মমতা?
হিন্দু ভোট ভাগ হবে এবং তাদের সাংগঠনিক সাহায্য পাবে না বিজেপি
- Total Shares
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার যে কোনও জায়গা নেই তা বারবারই নিজের বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ এখন হিন্দুত্বের তকমা লাগা শিবসেনার সঙ্গে তাঁর বেশ ঘনিষ্ঠতা। তাহলে কি হিন্দুত্বের কোনও নতুন বার্তা দিতে চাইছেন তিনি? কি সেই বার্তা? তবে কি, হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে চিন্তিত তিনি? এরকম একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে, রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশের কাছ থেকে।
মিশন ২০১৯। টার্গেট দিল্লি। মোদী নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি রাহুল গান্ধী নাকি অন্য কেউ? বিজেপি ও কংগ্রেসের মতো আঞ্চলিক দলগুলোও ব্যস্ত নিজেদের ঘর গোছাতে। এককথায়, ভোটের রাজনীতিতে, জোটের অঙ্কে ব্যস্ত সবাই। যদি বিজেপি একক ভাবে ক্ষমতায় আসতে না পারে, তাহলে তাদের নির্ভর করতে হবে এনডিএ জোট সঙ্গী আঞ্চলিক দলগুলোর উপর। অন্যদিকে রাহুল গান্ধীকে নির্ভর করতে হবে ইউপিএ জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর।
হতে পারে তৃতীয় কোনও জোট বা ফ্রন্টের নেতৃত্বাধীন সরকার। আর এই তৃতীয় জোট বা ফ্রন্ট তৈরি করার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায। এই ফন্ট যদি তৈরি হয় , আর যদি কোনও ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তাহলে দিল্লির মসনদে বসার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন তিনি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও উদ্ধব ঠাকরে
মহারাষ্ট্রে এখন বিজেপি সরকার, তার জোটসঙ্গী শিবসেনা। কেন্দ্রে মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে এলেও তারা সমর্থন প্রত্যাহার করেনি। ১৯৬৬ সালের ১৯ জুন বালাসাহেব ঠাকরের হাত ধরে জন্ম শিবসেনার। মৃত্যুর আগেই ছেলে উদ্ধব ঠাকরেকে উত্তরসূরি মনেনীত করে গিয়েছিলেন বালাসাহেব। এখন উদ্ধবই দলের কাণ্ডারী। মারাঠি অস্মিতা সবসময় কাজ করে শিবসেনা সমর্থকদের মধ্যে। সঙ্গে উগ্র হিন্দুত্ববাদও। এনডিএ জোটে থেকে বিজেপিকে সমর্থন করা ছাড়া জাতীয় রাজনীতিতে শিবসেনার খুব একটা উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড নেই।
প্রশ্ন হল ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে তাদের অবস্থান কী হবে। বিজেপির সঙ্গে এখন যথেষ্ট দূরত্ব তৈরি হয়েছে শিবসেনার। চার বছর কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার পরে মুম্বইয়ে তাঁর বাসভবনে গিয়ে উদ্ধবের সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে প্রশ্ন হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন ভাবছেন উগ্র হিন্দুত্ববাদী এই দলটির কাছাকাছি আসার? ইদানীং শিবসেনার সাথে দিদির সুসম্পর্ক বেশ স্পষ্ট।
বাংলার রাজনীতিতে তৃণমূল দলের প্রাধান বিরোধী এখন ভারতীয় জনতা পার্টি। তৃণমূল প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও সবসময়ই বিজেপি বিরোধী সুর: বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল। তাহলে হিন্দুত্বের তকমা লাগা শিবসেনার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে কি বার্তা দিতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? এই প্রশ্ন বাংলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটা বড় অংশের। বাংলার রাজনীতিতে শিবসেনা দলটার অস্তিত্ব কোনও দিনই ছিল না। অদূর ভবিষ্যতেও এই দল রাজ্য থেকে কোনও আসন পেতে পারে, তেমন সম্ভাবনাও নেই। তাহলে কি শুধুমাত্র ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে জোট রাজনীতির কথা মাথায় রেখেই তৃণমূল সুপ্রিমোর এই আচরণ? নাকি শিবসেনার সঙ্গে সুসম্পর্কের মধ্যে দিয়ে হিন্দু ভোটারদের সরাসরি একটা বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন মমতা?
"আমরা হিন্দুত্ব নিয়েই লড়াই করব। আমাদের মাইনরিটি ভোটব্যাঙ্ক দরকার নেই।" ঠিক এ ভাবেই নিজেদের দলের অবস্থান জানিয়েছেন এ রাজ্যে শিবসেনার সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র অশোক সরকার। সোজাসুজি হিন্দুত্বকে সামনে রেখে ভোটযুদ্ধে নামার কথাই শুনিয়েছেন এই নেতা। দলের উপর মহলের অনুমতি ছাড়া এ ধরনের মন্তব্য যে কেউ করবে না, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতা করা মমতা বন্দোপাধ্যায় শিবসেনা প্রসঙ্গে বেশ নরম মনোভাবাপন্ন।
কিছু দিন আগে, এ বছর ১৯ জুন, নিজের ট্যুইটারে শিবসেনা কে প্রতিষ্ঠা দিবসের শুভেচ্ছাবার্তা দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে , গত বছর নভেম্বরে মুম্বাইয়ে এক পাঁচ তারা হোটেলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী দেখা করেন উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে। দিল্লির মসনদের বসার দিকে ধাপে ধাপে এগোনোর চেষ্টা করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মাথায় রয়েছে হিন্দু ভোটব্যাংকের কথাও। বলা যায় "একই ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা" করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Heartiest greetings to Uddhav Thackeray Ji and all @ShivSena workers on the 52nd foundation day of their party
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) June 19, 2018
বাংলার মানুষের কাছে দেগঙ্গার দাঙ্গা আজও একটা দগদগে ঘা। সেদিন, ধর্মের বিভেদে তৈরি এক অরাজকতার সাক্ষী হয়েছিল দেগঙ্গার মানুষ। আজ সেই ধর্মকে মূল হাতিয়ার করে বাংলার রাজনীতির দরজায় কড়া নাড়ার একটা ইচ্ছে এ রাজ্যের শিবসেনা নেতৃত্বের। এ রাজ্যে শিবসেনার যেটুকু সংগঠন আছে, তা দিয়ে পুরভোটে তারা লড়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইবেন, শিবসেনা প্রার্থী দিক লোকসভা ভোটেও। তাতে এ রাজ্যে হিন্দু ভোট সামান্য হলেও ভাগ হবে। তা ছাড়া শিবসেনার সংগঠনও কোনও ভাবে কাজে লাগাতে পারবে না বিজেপি, যে ভাবে তারা জঙ্গলমহলে বজরং দলের সংগঠন কাজে লাগিয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, এখন থেকে শিবসেনার সঙ্গে সখ্য স্থাপন করলে লোকসভা নির্বাচনের পরে যদি তৃতীয় ফ্রন্টের সরকার গড়ার কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন সমর্থন চাইতে দ্বিধাগ্রস্ত হতে হবে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাই এখন থেকেই সেই পথ সুগম করছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

