স্বাধীনতার ৭০ বছর বাদেও কেন ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট নিয়ে এত উত্তেজনা?

চ্যাম্পিয়ন্স ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে ছিল পাকিস্তান, তারই বদলা নেওয়ার পালা

 |  2-minute read |   19-09-2018
  • Total Shares

"পাকিস্তান, দিস ইজ নট শারজা। অ্যান্ড টুডে ইজ নট ফ্রাইডে।"

চিন্নস্বামী স্টেডিয়ামের জনৈক দর্শক পোস্টারটি তুলে ধরেছিলেন ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে ভারত পাকিস্তান কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটা শেষ হতেই। পোস্টারটির অন্তর্নিহিত অর্থটা বেশ পরিষ্কার - শহরটা শারজা নয়, আবার দিনটা শুক্রবার নয়। সুতারং, আজ ভারতের কাছে পাকিস্তানের পরাজয় যুক্তিসঙ্গত।

মরুশহরে ভারত পাকিস্তান ম্যাচ মানেই শুক্রবার হবে, আর অধিকাংশ ম্যাচেই হারতে হবে ভারতকে - ১৯৮০-র ও ১৯৯০-এর দশকে ক্রিকেট বিশ্বে এ যেন এক অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

১৯৮৪ সালে প্রথমবার ভারত পাকিস্তান ম্যাচ শারজাতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল আর প্রথম দুটি ম্যাচে ভারত পাকিস্তানকে পরাজিত করেছিল।

কিন্তু পট পরিবর্তনের শুরু ১৯৮৬ সাল থেকে। সে বছরের এপ্রিল মাসে অস্ট্রেলেশিয়া কাপ ফাইনালে জয়ের জন্য শেষ বলে চার রান প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানের। ক্রিজে জাভেদ মিয়াঁদাদ। উল্টোদিকে, বল হাতে চেতন শর্মা। ইয়র্কার দিতে গিয়ে ফুলটস দিয়ে ফেললেন চেতন। তাও একেবারে মিয়াদাঁদের পায়ের গোড়ায়। ছ'য়ে মেরে ম্যাচটা জিতে নিল পাকিস্তান। আর, এই ম্যাচের পর থেকেই শারজাতে ভারত পাক ম্যাচ মানেই পাকিস্তানের একচেটিয়া আধিপত্য।

body1_091918010653.jpgসত্তর ও আশির দশকে শারজাতে ভারত-পাক ম্যাচ মানেই পাকিস্তানের আধিপত্য

পরিসংখ্যান বলছে ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০০ সাল অবধি শারজাহতে মোট ২৪ বার ভারত পাকিস্তান মুখোমুখি হয়েছিল। এর মধ্যে পাকিস্তান ১৮ বার জিতেছে আর ভারত মাত্র ছয় বার।

সুতারং, ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে চিন্নাস্বামীর গ্যালারির ওই পোস্টারটি কিন্তু সত্যি সত্যিই বেশ অর্থবহ।

তবে ভারত পাকিস্তান ম্যাচ মানেই শুধুমাত্র সত্তর বা আশির দশকের শারজা নয়। কলকাতা থেকে টরন্টো, বার্মিংহ্যাম থেকে অ্যাডিলেড, সেঞ্চুরিয়ন থেকে সিঙ্গাপুর এই দুই দেশ বিশ্বের যে প্রান্তেই মুখোমুখি হোক না কেন উত্তেজনার পারদ সর্বদাই চরমে থাকে। সাধারণ দর্শক, দু'দেশের রাজনৈতিক নেতা থেকে সেলিব্রিটি, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি এমনকি দু'দেশের খেলোয়াড়দের মধ্যেই এই উত্তেজনার আঁচ চোখে পড়ে।

body_091918010814.jpgসাধারণ দর্শক থেকে রাজনৈতিক নেতা, এমনকি খেলোয়াড়দের মধ্যেও উত্তেজনার আঁচ চোখে পড়ে [ছবি: এএফপি]

স্বাধীনতার সত্তর বছর পর দুই দেশের ক্রিকেট ম্যাচকে কেন্দ্র এই ধরণের উত্তেজনা দেখলে মাঝে মাঝে সত্যিই আশ্চর্য হয়ে যেতে হয়। দেশভাগের পর থেকেই দু'দেশের মধ্যে শত্রুতা তুঙ্গে। বিগত ৭০ বছরে বেশ কয়েকবার যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি হয়েছে দু'দেশের সেনাবাহিনী। সীমান্তে তো প্রায়শই দু'দেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে গুলি-গোলার লড়াই লেগে থাকে। সেই যুদ্ধের আঁচটাই কি ক্রিকেট মাঠে পড়ে? দু'দেশের মধ্যে ক্রিকেট মাঠে এই তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতা কি শুধুমাত্র এই রাজনৈতিক ইতিহাসের জন্যই?

কিছুটা ঠিক। কিছুটা ভুল। ভারত ও পাকিস্তানের অনেক প্রবীণ নাগরিকই এখনও ভুলতে পারেনি দেশভাগের বেদনা। দেশভাগের সময়কার হানাহানি, ভিটে মাটি ছেড়ে আসার বেদনা দু'দেশের নাগরিকদের মধ্যে শত্রুতা তৈরি করেছিল। পরবর্তী প্রজন্মও দেশভাগের সেই গল্প শুনে বড় হয়েছে। তাই রণাঙ্গন থেকে ক্রিকেট মাঠ দু'দেশ মুখোমুখি হলেই তাদের মধ্যেও জেগে উঠত তীব্র জাতীয়তা বোধ।

কিন্তু তাই বলে আজকের প্রজন্ম, যাদের জন্ম স্বাধীন ভারত বা পাকিস্তানে, তাও স্বাধীনতার চার বা পাঁচ দশক পরে? তারাও ভারত পাকিস্তান ম্যাচ হলেই তীব্র উত্তেজনায় টগবগ করে কেন।

body1_091918010858.jpgবদলা নেওয়ার জন্যে প্রহর গুনছে আসমুদ্রহিমাচল [ছবি: রয়টার্স]

কিছু শত্রুতা হয়তো এ রকমই হয়। যা যুগ যুগ ধরে চলতে থাকে। আর, শত্রুপক্ষ দুই দেশ যদি সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দেয় তখন তো সেই শত্রুতাকে ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়তে বাধ্য। আজ পারিনি। কিন্তু আমরাও জিততে পারি। পরের ম্যাচেই দেখে নেব - এই আজীবন মানসিকতা চলতে থাকবে।

এই তো আজ এশিয়া কাপে দুবাইতে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত পাকিস্তান। দুই দেশের শেষ ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতকে পরাজিত করেছিল পাকিস্তান। আর, তাই আজ আসমুদ্রহিমাচল বদলা নেওয়ার জন্য প্রহর গুনছে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ARPIT BASU ARPIT BASU @virusfound007

Arpit Basu is the Special Correspondent with the India Today Group’s fact check team. With more than one-and-a-half decade's experience in print and digital media, he has reported on aviation, transport, crime, civic and human interests issues. His sting operation on how precious Aviation Turbine Fuel, meant for Kolkata airport, was pilfered and sold in local market as ‘white kerosene’ received widespread acclaim. Arpit has worked with reputed media houses like The Times of India and Hindustan Times and had received letter of appreciation for reporting during the Phalin cyclone in Odisha in 2013.

Comment