দেশ বিদায় নিলেও রাশিয়ায় রয়েছেন ব্রাজিলের ফুটবলপ্রেমীরা

নিরাপত্তার নামে রাশিয়ায় কাউকে হেনস্থা করা হচ্ছে না

 |  2-minute read |   12-07-2018
  • Total Shares

কিছুটা আশা, কিছুটা আকাঙ্ক্ষা আবার সঙ্গে কিছুটা আশঙ্কা নিয়েই রাশিয়ায় বিশ্বকাপ দেখতে এসেছিলাম। এখানে এসে পৌঁছে সেই আশঙ্কার মেঘ পুরোপুরি কেটে গেছে। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই, আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম এখানে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হবে ভাষা। কিন্তু স্টেডিয়াম চত্বরে যে সব রুশ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে তাঁরা তরুণ তো বটেই, একই সঙ্গে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ। সংযোগরক্ষার জন্য যতটা দরকার, আমার ধারণা তাঁদের অন্তত ততটা ইংরেজি শেখানো হয়েছে। তাঁদের মনোভাবও যথেষ্ট সহযোগিতাপূর্ণ।

নিরাপত্তার কড়াকড়ি নিয়েও একটা দুশ্চিন্তা সব সময় থেকে যায় আমাদের মনে। এখানে আসার আগে ধরেই নিয়েছিলাম যে ভীষণ ভাবে নিরাপত্তাজনিত তল্লাশি হবে। বিশ্বকাপ বলে কথা। তল্লাশি অবশ্যই হচ্ছে, কিন্তু খুবই শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে। কাউকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে না, কোনও ভাবে সমস্যাও তৈরি করা হচ্ছে না। কাউকে দেরিও করিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার আশঙ্কাও কারও নেই।

এই প্রথম রাশিয়ায় এসেছি। স্টেডিয়ামে ঢোকার পরে এক অন্য অনুভূতি। সেন্ট পিটার্সবার্গে যখন খেলা দেখতে গেলাম, তখন ব্রাজিল আর বিশ্বকাপে নেই, তারা বেলজিয়ামের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নিয়েছে। সেই ময়দানে ৬৪,০০০-এর বেশি দর্শক ছিলেন। দর্শকদের মধ্যে অন্তত ২৫ হাজার ব্রাজিলীয় ছিলেন। তাঁরা কোনও একটি দলকে সমর্থক করছেন অথবা ব্রাজিলের নামে ওলে ওলে গান করে যাচ্ছেন। আমি জানতে চাইলাম এই খেলাটা দেখেই তাঁরা দেশে ফিরে যাবেন কিনা। কারণ তাঁদের দেশ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু তাঁরা বললেন, যে তাঁরা বাকি ম্যাচ দেখবেন, ফাইনাল দেখবেন। যে সময়ের কথা বলছি, তখনও তিনটি খেলা বাকি।

body_071218033603.jpg

ফুটবল নিয়ে ব্রাজিলীয়দের মধ্যে কতটা উন্মাদনা রয়েছে, তা বোঝা গেল তাদের এই মানসিকতা দেখে। ব্রাজিলীয়দের ফুটবল মানসিকতা নিয়ে অনেক কথা শুনেছি, কিন্তু তা উপলব্ধি করলাম এখানে এসে।

কলকাতা থেকে আমাদের জনা ৪০-এর একটা দল রাশিয়ায় বিশ্বকাপ দেখতে এসেছে। আমরা বিভিন্ন হোটেলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছি। আমরা আগের রাতে দুটোয় হোটেলে ঢোকার সময় এবং হোটেল থেকে ভোর বেলায় ট্রেন ধরার সময় দেখলাম একই রকম উন্মাদনা। ফ্রান্সের সমর্থকরা প্রস্তুত জাতীয় পতাকা নিয়ে। ব্রাজিলের সমর্থকরাও প্রস্তুত সেই ট্রেনে উঠে মস্কো যাওয়ার জন্য।

এখানে স্টেডিয়ামগুলোয় বসার জায়গাগুলো সুন্দর, আসন খুঁজে দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক আছেন। আর যেখানেই বসুন না কেন, সেখান থেকেই পুরো মাঠ দেখতে পাবেন। খেলা দেখার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না। এখানে মাঠে না এলে এখানকার ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে কোনও আন্দাজ করাই যাবে না। আমদের আসন ছিল মাঠের একটু উপরের দিকে। তাতে আমাদের খেলা দেখতে বিন্দুমাত্র সমস্যা হয়নি।

কোথাও কাউকে হেনস্থা করা হচ্ছে না, কোথাও কেউ কোনও বিড়ম্বনায় পড়ছেন না। প্রতিটা আসনের নির্দিষ্ট নম্বর দেওয়া রয়েছে। প্রতিটা আসনে ক্রমাগম জনা দুয়েক স্বেচ্ছাসেবক আসন চিনিয়ে দিচ্ছেন। কেউ অন্যের আসনে বসে পড়লে তাঁদের বুঝিয়ে নির্দিষ্ট আসন দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মাঠের ভিতরে তো বটেই, বাইরেও যতটুকু দেখছি, ঘুরেছি, কোথাও কোথাও কোনও রকম বিশৃঙ্খলা, সমস্যা নেই।

আমরা গাড়ি ভাড়া করে নিয়েছি। তবে যাঁরা তা করছেন না, তাঁদের দেখিয়ে-বুঝিয়ে দিচ্ছেন হোটেলের লোকজন এবং কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মীরা। হোটেলে যাঁরা ইংরেজি জানেন না, তাঁরা গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করছেন। তবে প্রায় প্রতিটি হোটেলে অন্তত এমন একজন করে রাখা হয়েছে যিনি ইংরেজি বোঝেন, একটু-আধটু বলতে পারেন। গাইডদের ওঁরা ইংরেজির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বলে শুনলাম।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

LALTU DAS LALTU DAS

The writer is a former footballer.

Comment