প্রথম টেস্টে উইকেট স্পিন সহায়ক থাকবে, ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে অশ্বিন-কুলদীপ জুটি
মহম্মদ শামিও নজরে থাকবেন, চোটাঘাত ও পারিবারিক সমস্যা কাটিয়ে মাঠে ফিরছেন বাংলার পেসার
- Total Shares
গত কাল সন্ধ্যাবেলা ইংল্যান্ডের এক বন্ধুসম ক্রিকেটারের সঙ্গে মেসেঞ্জারে প্রাণখোলা আড্ডা মারছিলাম। বন্ধুটি যা বলল তা শুনে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ। ইংল্যান্ডে নাকি এত শুকনো আবহাওয়া গত দশ বছরে দেখা যায়নি। গত আট সপ্তাহ ধরে বিলেতে বৃষ্টিপাত হয়নি। তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই উপরেই। বুধবার বার্মিংহ্যামে পাঁচ ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হচ্ছে। আর আবহাওয়ার পূর্বাভাস যা বলছে তাতে মনে হচ্ছে উইকেট অনেকটা ভারতের মতো স্পিন সহায়ক থাকবে। সে ক্ষেত্রে কি 'অ্যাডভান্টেজ ভারত'?
প্রথম টেস্টে ভারত অবশ্যই আবহাওয়ার সুবিধা পাবে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে বহুদিন পরে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ হচ্ছে। আজকাল তো অ্যাসেজ ছাড়া পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ প্রায় হয় না বললেই চলে। লম্বা সিরিজ আর সিরিজের মধ্যেখানে ইংল্যান্ডের আবহাওয়া যদি স্বমহিমায় ফিরে আসে তা হলে কিন্তু সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যাবে ইংল্যান্ড। ইংরেজ পেসারদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হবে বিরাটের দলের ব্যাটসম্যানদের।
ছন্দে রয়েছেন রাহুল, প্রথম ম্যাচ থেকেই তাঁকে খেলাতে হবে [ছবি: পিটিআই]
এজবাস্টনে ভারতের ভাগ্য অবশ্য অনেকটাই নির্ভর করবে দুই স্পিনার অশ্বিন ও কুলদীপের উপরে। ভারতের স্পিন জুটি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে বার্মিংহ্যামের উইকেটে। উল্টোদিকে, ইংল্যান্ডও দলে রেখেছে মঈন আলি ও আদিল রশিদকে। আদিলের দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন একদিনের ও টি-২০র স্পেশালিস্ট আদিল কাউন্টি ক্রিকেটও খেলেন না। তাহলে তাঁকে টেস্ট দলে নেওয়ার প্রয়োজন তা কী? আমার মতে, ইংল্যান্ডের নির্বাচকরা একদম ঠিক কাজই করেছেন আদিলকে দলে নিয়ে। বার্মিংহ্যামের উইকেট নিয়ে যা আন্দাজ করা যাচ্ছে তাতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের একমাত্র চাপে ফেলতে পারে আদিল-মঈন জুটি। বলতেই পারেন, অশ্বিন-কুলদীপ জুটির পাল্টা উত্তর আদিল-মঈন জুটি।
এর আগে সৌরভের ভারত ইংল্যান্ড থেকে সিরিজ ড্র করে ফিরেছিল। রাহুলের ভারত তো ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডকে টেস্ট সিরিজে পরাজিত করেছে। এই সিরিজটা পাঁচ ম্যাচের। আর লম্বা সিরিজ মানেই মনস্তাত্বিক, বুদ্ধিমত্তা ও শারীরিক ক্ষমতার সেরা পরীক্ষা। আর এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গেলে শুরুটা ভালো করতে হবে ভারতকে - 'ওয়েল বিগ্যান ইজ হাফ ডান'।
দক্ষিণ আফ্রিকায় যেখানে শেষ করেছিলেন ইংল্যান্ডে শেখ থেকেই শুরু করতে হবে শামিকে [ছবি: পিটিআই]
তাই প্রথম টেস্টে ওপেনিং জুটি নিয়ে চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে বৈকি। আমরা মতে, শিখর ধাওয়ান নয় মুরলি বিজয়ের সঙ্গে কেএল রাহুলকে ওপেন করতে পাঠানো উচিৎ। এই পরিস্থিতিতে সুবিধা করতে পারেন না শিখর। এই তো প্র্যাকটিস ম্যাচেও দুটি ইনিংসে শূন্য করলেন। উল্টোদিকে, রাহুল ছন্দে রয়েছে। ইংল্যান্ডের উইকেটে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য। তাই প্রথম টেস্ট থেকেই তাঁকে খেলাতে হবে। শিখরকে দুটো ম্যাচে সুযোগ দিয়ে যদি ব্যর্থ হয় (তার সম্ভাবনা বেশি) তারপর রাহুলকে নামানোর কোনও যুক্তি থাকবে না। তার চাইতে পরিস্থিতি অনুযায়ী যে সেরা তাঁকেই প্রথম থেকে খেলানো শ্রেয়।
চোটের জন্য ঋদ্ধিমান সাহা সুযোগ পাননি। ঋদ্ধিকে মিস করব। কিন্তু পাশাপাশি দীনেশের উপর নজর রাখব। দস্তানা হাতে এই সিরিজটাই দীনেশের সেরা পরীক্ষা হয়ে উঠতে চলেছে। ধোনি আর টেস্ট খেলেন না। টেস্ট দলে ধোনির জায়গাটা পাকা করে ফেলবার জন্য বেশ কয়েকজন তরুণ উইকেটরক্ষক মুখিয়ে আছেন। ঋদ্ধির চোটের জন্য এবার সেই সুযোগটা পেয়েছেন কার্তিক। পরে পাওয়া চোদ্দোআনা সুযোগটা তাঁকে কাজে লাগাতেই হবে।
চোটের জন্য খেলবেন না ঋদ্ধিমান [ছবি: পিটিআই]
আর এক বাংলার ক্রিকেটারের উপর আমার নজর থাকবে। তিনি মহম্মদ শামি। চোটাঘাত ও পারিবারিক সমস্যা কাটিয়ে আবার জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামবেন তিনি। কোনও সন্দেহ নেই ভারতের এই দলের সবচেয়ে প্রতিভাবান পেসার তিনিই। শেষ টেস্ট খেলেছিলেন জো'বার্গে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচে। সেই ম্যাচে মাত্র ২৮ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন শামি। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই ইংল্যান্ডে শুরু করতে হবে তাঁকে।
বার্মিংহ্যামে প্রথম টেস্ট হওয়াতে প্রথম খেলায় আরও একটি সুবিধা পাবে ভারত। প্রচুর ভারতীয় দর্শক কিন্তু তেরঙ্গা হাতে বিরাটদের জন্য গ্যালারি থেকে গলা ফাটাবেন।
আসুন, একটা রোহমর্ষক টেস্ট ম্যাচ উপভোগ করি।