আমাদের লক্ষ্য এখন ২০১৯, বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই আমরা এগোচ্ছি

বাংলাদেশ দলে গেইলের মতো বিগহিটার নেই, ধোনির মতো ফিনিশার নেই, কিন্তু স্মার্ট ক্রিকেটার আছে

 |  4-minute read |   24-03-2018
  • Total Shares

লেখাটা যখন লিখতে বসেছি, নিদাহাস ট্রফির রেশ তখনও কাটেনি। প্রেমাদাসায় ভারতের বিপক্ষে ১৮ মার্চের সেই ফাইনালটা এখনও চোখে ভাসছে। স্নায়ুক্ষয়ী, কী দুর্দান্ত ম্যাচটাই না দেখল ক্রিকেট দুনিয়া! ম্যাচের পেন্ডুলাম কখনও বাংলাদেশের দিকে, কখনও ভারতের দিকে। শেষ পর্যন্ত ফাইনাল জিতেছে ভারত। এত কাছে গিয়েও শিরোপা না জেতার আফসোস নিয়ে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ।

শিরোপাটা জিততে না পারার দুঃখ আছে ঠিকই। কিন্তু নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি নেহাত কম নয়। নিশ্চয়ই জানেন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিল জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে দেশের মাঠে টানা সিরিজ হারের হতাশা নিয়ে। অনেকের তাই সংশয় ছিল, দেশের মাঠে যে দল টানা সিরিজ হেরেছে, শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে তারা আর কতটা ভালো করবে! সিরিজটা আবার হচ্ছে টি–টোয়েন্টি সংস্করণে। যে সংস্করণ অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশের কাছে কি না বিরাট গোলকধাঁধা!

ভারতের কাছে হেরে সিরিজের শুরুটা খুব একটা ভালোও করতে পারেনি বাংলাদেশ। এর পরের গল্পটা ভিন্ন। শ্রীলঙ্কার গড়া ২১৪ রানের পাহাড় বাংলাদেশ কী স্বচ্ছন্দে টপকে গেল। কলম্বোর প্রেমাদাসায় রচনা করল নতুন ইতিহাস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের ম্যাচটি তো আরও রোমাঞ্চকর, শিহরণজাগানিয়া। নানা ঘটনায় ভরপুর ম্যাচটা বাংলাদেশ নিজেদের মুঠোয় পুরেই মাঠ ছেড়েছে।

নিদাহাস ট্রফিতে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এটাই, টি–টোয়েন্টি আমাদের কাছে যে জটিল ধাঁধা হয়েছিল এতদিন, সেটির সমাধান করা গেছে অনেকটাই। বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে তারা ২০০–এর বেশি রান তাড়া করতে পারে। বাংলাদেশ খেলোয়াড়রা যথার্থই বলেছে, দলে হয়তো ক্রিস গেইলের মতো বিগহিটার নেই, মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো ফিনিশার নেই, কিন্তু স্মার্ট ক্রিকেটার আছে। কলম্বোয় বাংলাদেশ যে ক্রিকেটটা খেলেছে এটাকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের ক্রিকেট। যদিও এ সংস্করণে আরও উন্নতির সুযোগ আমাদের রয়েছে। স্নায়ুচাপে কী ভাবে প্রতিপক্ষকে আরও চেপে ধরতে হবে, এ সব নিয়ে কাজ করার আছে।

body2_032418065708.jpg টি–টোয়েন্টির জটিল ধাঁধা সমাধান করা গেছে অনেকটাই

টেস্ট ক্রিকেটেও দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ সংগ্রাম করেছে। ধীরে ধীরে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণেও বাংলাদেশ সাফল্য পেতে শুরু করেছে। নিশ্চয়ই জানেন, টেস্টে গত দুই বছরে আমরা ইংল্যান্ড–অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়েছি। গত বছর শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে নিজেদের শততম টেস্ট স্মরণীয় করে রেখেছি। দেশের মাঠে টেস্টে ভালো করলেও বিদেশের মাটিতে আরও ধারাবাহিক কী ভাবে হওয়া যায়, সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি।

একদিনের ক্রিকেটে অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ সমীহ জাগানো দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। শুধু দেশের মাঠে কেন বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ নিজেদের দিনে যে কোনও দলকে যে হারাতে পারে সেটি ২০১৫ বিশ্বকাপ ও ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে করে দেখিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য এখন ২০১৯ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই আমরা এগোচ্ছি। বিশ্বকাপের আগে ২০১৮ সালটা আমাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এ বছর ধারাবাহিক ভালো খেলতে পারলে সেটি নিশ্চিত আত্মবিশ্বাস জোগাবে ২০১৯ বিশ্বকাপে।

২০১৮ সালটা অবশ্য ভীষণ ব্যস্ততায় কাটবে বাংলাদেশের। বড় টুর্নামেন্টের মধ্যে এ বছর এশিয়া কাপ আছে, জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশ দল নিদাহাস ট্রফি থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস কাজে লাগাবে সামনের সিরিজগুলোয়।

গত তিন বছরে যে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দলকে দেখছে বিশ্ব, সেটি সম্ভব হয়েছে এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ও রোমাঞ্চকর তরুণ কিছু খেলোয়াড়ের দারুণ সমন্বয়ে। মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহদের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়েরা ১২–১৫ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে। গত কয়েক বছরে দলে এসেছে মোস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, লিটন দাস, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেনদের মতো কিছু প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটার।

body3_032418065902.jpgধীরে ধীরে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণেও বাংলাদেশ সাফল্য পেতে শুরু করেছে

আমরা চাইছি বাংলাদেশ দলের রিজার্ভ বেঞ্চটা আরও শক্তিশালী করতে। জানি বড় দল হয়ে উঠতে হলে রিজার্ভ বেঞ্চ শক্তিশালী হতেই হবে। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট, হাইপারফরম্যান্স দলের পাশাপাশি আমরা জোর দিচ্ছি ‘এ’ দলের প্রোগ্রামের দিকেও। জাতীয় দলের জন্য আমরা বড় একটা পুল রেখেছি। এই পুলের যারা ১৪–১৫ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াডে সুযোগ পায় না তাদেরও পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধা দেওয়া হয়।

১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জেতাটা ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় বাঁক বদল। বাংলাদেশ ক্রিকেট যে আজ এ পর্যন্ত এসেছে, এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়। আমি সৌভাগ্যবান, আমাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সেই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্বটা দিতে পেরেছি। বাংলাদেশ দলের প্রথম একদিনের জয়টাও আমার নেতৃত্ব—এসব টুকরো টুকরো সুখস্মৃতি ভীষণ আপ্লুত করে। এটা ঠিক আমাদের সময়ে ক্রিকেটে এত সুযোগ–সুবিধা ছিল না। এত অর্থের ছড়াছড়ি ছিল না, এত মিডিয়া ছিল না যে একটু ভালো খেললেই মুহূর্তেই হইচই পড়ে যাবে চারদিকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিপক্ষ দলের কত অবজ্ঞাও দেখতে হয়েছে! বাংলাদেশ তখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে অনেক প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে এগিয়েছে সামনে।

তবে খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। মানুষের এ ভালোবাসাই ছিল আমাদের অনেক বড় প্রেরণা। এখন যখন মাশরাফি–সাকিব–তামিম–মুশফিকরা দুর্দান্ত কিছু করে, গর্ব হয় এই ভেবে, বাংলাদেশ দল যে সাফল্যের সিন্দু গড়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে, তাতে আমারও এক বিন্দু ‘শিশির’ আছে!

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

AKRAM KHAN AKRAM KHAN

The writer is former Bangladesh test cricketer and ODI captain. He is the chairman, cricket operations, Bangladesh Cricket Board.

Comment