আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজে বাংলাদেশ বিধ্বস্ত হলেও জয় হয়েছে ক্রিকেটের

বেশি প্রভাব পড়েছে খেলোয়াড়দের মানসিকতায়, নিজেদের মর্যাদায়

 |  3-minute read |   11-06-2018
  • Total Shares

একটা সময় হোয়াইটওয়াশ ও সিরিজ হারই ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিশ্চিত ফলাফল। দুএকটি দল ছাড়া বাকি দলগুলোকে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক শক্তিশালী মনে করা হত। সময়ের সঙ্গে বদলেছে বাংলাদেশও। কয়েক বছরের ধারাবাহিক সাফল্য এই বাংলাদেশ এখন পরাশক্তির পথে।

সদ্য টেস্ট ক্রিকেট দলের মর্যাদা পাওয়া আফগানিস্তানকে তো সে তুলনায় বাংলাদেশের কাছে ছোট দলই মনে করা হত। সেই কাবুলিওয়ালাদের কাছেই টি-২০ সিরিজে ৩-০-তে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। হারের কারণে র‌্যাঙ্কিংয়ে তো একটু প্রভাব পড়েছেই। তবে বেশি প্রভাব পড়েছে খেলোয়াড়দের মানসিকতায়নিজেদের মর্যাদায়।

body1_061118042025.jpg

এই তো শুক্রবার দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে যে যার মতো করে পালানোর চেষ্টা করলেন। বিশেষ করে মিডিয়াকে আড়াল করে মুখ লুকিয়ে তাঁরা গাড়িতে উঠেছেন! এই দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানই। তাঁর দেখানো পথেই বাকিরা বিমানবন্দর ছাড়েন। কিন্তু সাকিবরা কি আসলেই বুঝতে পেরেছেন হারটা লেগেছে পুরো জাতির গায়েই? নাকি নিজেদের শুধুই লোক দেখানো আড়াল করার চেষ্টা করলেন?  

খেলা হয়েছে তো ভারতের দেরাদুনে। আফগানিস্তানের হোম সিরিজ তো তাই নামে মাত্র। নিরপেক্ষ জায়গায় খেলা হলে কি তা হোম সিরিজ হতে পারে! সেখানেই তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজে বিধস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। টাইগাররা প্রথম যখন কোনও দলকে হোয়াইটওয়াশ করা শুরু করল, তখন অতি-আনন্দে কতই না নাম দেওয়া শুরু হয়। ব্রাউনওয়াশবাংলাওয়াশটাইগারওয়াশ- আরও কতকিছু। আফগানরাও কি তাহলে বিভিন্ন নাম দেওয়া শুরু করেছে হোয়াইটওয়াশেরআফগানওয়াশকাবুলিওয়াশ বা অন্য কিছু? গত কয়েক দশক ধরে আফগানিস্তানের বিজ্ঞাপন মানে যুদ্ধবিধস্ত এক দেশ। সন্ত্রাসকবলিত এক জনপদ। সেখানেই এখন ক্রিকেট নামক খেলাটা তাদের কাছে ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে। আর সেই বিজ্ঞাপনে নিয়মিতই দারুণ পারফর্ম করে যাচ্ছেন রশিদ খানমোহম্মদ নবী, শেহজাদমুজিব উর-রহমানরা। এ তো গেল আফগানদের উন্নতির আলো রেখার গল্প। কিন্তু বাংলাদেশের ধারাবাহিকতাটা কোথায়?

body2_061118042042.jpg

অভিজ্ঞ এক বাংলাদেশ কেনই বা হারবে নতুন এক দলের কাছেক্রিকেটের অলরাউন্ড পারফর্ম বলতে যা বোঝায় তার সবগুলোরই প্রদর্শনী ছিল আফগানদের খেলায়। ব্যাটিংফিল্ডিংবোলিং-মানসিকতায় দৃঢ়তা সবই। আর এর একটাতেও এগিয়ে ছিল না বাংলাদেশ। একবার ব্যাটিং ধস হলে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তিনটে ভালো বল হলে তো তিনটে লুজ বল দিয়েছেন বোলাররা। হাতের বল বা ক্যাচ ছাড়তেও সিদ্ধহস্তের পরিচয় দিয়েছেন ফিল্ডাররা। একটা অভিজ্ঞ দলের কাছে এগুলো একেবারেই  অপ্রত্যাশিত। সবচেয়ে বড় কথা শেষ বল পর্যন্ত মনোবল হারায়নি আফগানরা। শেষ ম্যাচে আরিফুল হক যে ভাবে লং অন দিয়ে রাশিদ খানের বলটা খেলেছিলেনতার চেয়ে বেশি কী করার ছিল কোন ব্যাটসম্যানের? কিন্তু একজন শফিকউল্লাহ যা করলেন তাতেই এক রানে হার বাংলাদেশের। বাংলাদেশ হারল, কিন্তু জিতলো ক্রিকেট।

body3_061118042055.jpg

বাংলাদেশের ব্যর্থতায় প্রথমেই প্রশ্ন উঠেছে সাকিব আল হাসনের নেতৃত্ব নিয়ে। সাকিবের কথায় অবশ্য সাবেক ক্রিকেটারদের মধ্যে দুই ভাগ হতে দেখা যাচ্ছে। তবে সময় মতো বোলিংয়ে বদল আনা, ফিল্ডিং সাজানো, ব্যাটিংয়ের প্রয়োগ ক্ষমতা সব কিছুতেই আফগানিস্তানের আজগর স্টানিকজাইয়ের চেয়ে অনেক পিছিয়েই ছিলেন সাকিব। এমন কথায় অন্তত একমত হয়েছেন সবাই! দোষ দেওয়া হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টেরও। উইকেট দেখে কোনও ম্যাচেই ভালো একাদশ সাজাতে পারেনি বলে কথা হচ্ছে। অবসরে যাওয়ার কারণে মাশরাফি মুর্তজার অনুপস্থিতি এবং আচমকাই মোস্তাফিজুর রহমানের ইনজুরি দলটাকে বড্ড ভুগিয়েছে।

সিরিজটি যখন চূড়ান্ত হয়েছিল, শঙ্কার ঘণ্টাও তখন থেকে বাজছিল। অসাধারণ স্কিলের রশিদ খান, রহস্য ঘেরা বৈচিত্রে ভরা মুজিব উর-রহমান। শাহজাদ-শেনওয়ারির পাওয়ার হিটিং, নবি-স্টানিকজাইয়ের অভিজ্ঞতা। ক্রিকেটারদের বারবার প্রশ্ন করা হত, এ সব বিষয় নিয়েই। কিন্তু আফগানদের কখনোই কঠিন মনে হয়নি ক্রিকেটারদের কাছে। সবকিছু সামলাতে কতটা প্রস্তুত ছিল বাংলাদেশ?

body4_061118042122.jpg

সিরিজের আগে ছিল সংশয়, ছিল প্রশ্ন। সিরিজ শেষে প্রশ্নগুলিই আরও উচ্চকিত। তবে দেশপ্রেমের আবেগে বাংলাদেশের লোকজন ভাসতে পারে। আফগানদের কাছে হারে আপনি হতাশ এবং অপমানবোধও করতে পারেন। তারপরও ক্রিকেটীয় উদারতায় প্রশংসা করতেই হবে আফগানদের। এই হোয়াইটওয়াশ থেকেও অনেক প্রশ্নের উত্তর জেনে সেটা আগামী সিরিজের আগেই শুধরানো হবে বাংলাদেশের জন্য বড় সমাধান।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

JOTIRMOY MONDAL JOTIRMOY MONDAL @jotibest

The writer is a sports journalist from Bangladesh.

Comment