দিল্লিগামী বিমানে আমিষ খাবার পেলাম না, অতঃপর

কিছু যাত্রীর অসুবিধা থাকতেই পারে, তাঁদের জন্য আমাকে 'অপছন্দের' খাবার খেতে হবে কেন

 |  2-minute read |   25-07-2018
  • Total Shares

অ্যামস্টারডম থেকে দুপুর দুপুর বিমানে চড়েছি। আর আট-ন'ঘণ্টার মধ্যেই দেশে ফিরব, বেশ কয়েক মাস পরে। মনটা বেশ ফুরফুরে।হাজার হোক নিজের দেশে ফিরব। তখন কে আর জানত, যে আর কয়েক মিনিট বাদেই মেজাজটা এরকম বিগড়ে যাবে, একেবারে তিতকুটে হয়ে পড়বে।

সমস্যার সূত্রপাত অ্যামস্টারডাম বিমানবন্দর থেকে টেকঅফের কিছুক্ষন পর বিমানে যখন খাবার সার্ভ করা শুরু হল। দুপুর বেলা তাই মধ্যাহ্ন ভোজ পরিবেশন করা উচিৎ। পাশে বসা সহযাত্রী জানালেন যে তিনি নিরামিষাশী তাই নিরামিষ খাবেন। প্রত্যুত্তরে, কেএলএম বিমানের বিমানসেবিকা জানালেন তাঁরা শুধুই নিরামিষ খাবারই পরিবেশন করে থাকে।

আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। এই তো কিচ্ছুক্ষন আগেই এই একই বিমান সংস্থার অন্য একটি ফ্লাইটে করে লন্ডন থেকে অ্যামস্টারডাম এসেছি। দিব্যি, কবজি ডুবিয়ে আমিষ খাবার খেয়েছি। আর এই বিমানসেবিকা বলে কী? নিজের কানের প্রতি গভীর অবিশ্বাস দেখিয়ে ভাবলাম হয়ত ভুল শুনেছি। বিমানসেবিকা আমার কাছে এগিয়ে আসতেই অবলীলাক্রমে জানিয়ে দিলাম যে আমি আমিষ খাবারই পছন্দ করলাম।

আবারও ধাক্কা! এই ফ্লাইটে নাকি আমিষ খাবার তোলা হয়নি। শুধু এই ফ্লাইটে কেন এই বিমানসংস্থার যে কটি ফ্লাইট ভারতে যাওয়া আসা করে প্রত্যেকটিতেই আমিষ খাবার ব্রাত্য। অবাক হয়ে শুনলাম এর পিছনের কারণটা: ভারত হিন্দু প্রধান দেশ। আর, হিন্দুদের বিভিন্ন ধরণের আমিষ খাবারের উপর বিধিনিষেধ আছে। তাই বিমান সংস্থা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের যে ফ্লাইটগুলো ভারতে যাতায়াত করবে সেই বিমানগুলোতে আমিষ খাবার পরিবেশন করা হবে না।

body1_072518121156.jpg

body_072518121240.jpgআমিষ নয়, শুধুই নিরামিষ খাবার পরিবেশন করা হল আমার বিমানে

হিন্দুদের গোমাংসের উপর বিধিনিষেধ আছে জানি। মানে, ধর্মীয় কারণে গোড়া হিন্দুরা বিফ খায় না। তার জন্যে অনেক আন্তর্জাতিক বিমানে 'হিন্দু মিল'-এর ব্যবস্থা রয়েছে। হিন্দু মিল মানে নিরামিষ খাবার নয়। আমিষ খাবার, যেমন মাছ বা চিকেন। যা খেতে হিন্দুদের কোনও রকম বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু এই বিমানে

তো হিন্দু মিলও পরিবেশন করা হচ্ছে না। জানা গেল, এই হিন্দু মিল পরিবেশন করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার অস্বস্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে বিমানসেবিকার। আবার বেশ কয়েবার বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার পরিবেশনের চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছে কতৃপক্ষ।

আমি কোনও রকম ধর্মীয় বা রাজনৈতিক পর্যালোচনায় ঢুকতে চাইনা। আমার সহজ সরল প্রতিক্রিয়া। যে কোনও কারণ দেখিয়ে বিমান সংস্থা আমাদের উপর নিজেদের পছন্দ চাপাতে পারেন না। বিশেষ করে কেএলএমের মতো সংস্থা যারা খুব বেশি দামে টিকিট বিক্রি করে। আর এ তো কারণ নয়, অজুহাত। আমিষ খাবার

পরিবেশন করতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে তাই জোর করে নিরামিষ খাওয়া। টিকিটের দাম রয়েছে, কিন্তু যাত্রীদের পছন্দের কোনও দাম নেই।

অনেকেরই অনেক খাবারের উপর বিধিনিষেধ থাকতে পারে। তাদের জোর কিছু খাওয়ানো যেমন ঠিক নয়, তেমনি ওদের অসুবিধার কথা ভেবে অন্য যাত্রীদের জোর করে তাদের অপছন্দের খাবার পরিবেশন করাটাও অনুচিৎ। বিমান কতৃপক্ষের এই সার সত্যটা বোঝা উচিৎ।

বিদেশী বিমানকে আর কী দোষ দেব? আমাদের দেশের সরকারি বিমানসংস্থা এয়ার ইন্ডিয়াও তো ডোমেস্টিক ফ্লাইটগুলোতে আমিষ খাবার পরিবেশন বন্ধ করে দিয়েছে। খরচ বাঁচানোর দোহাই দিয়ে।

অজুহাতের সত্যিই যেন কোনও অন্ত নেই!

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

RAKTIMA  BOSE RAKTIMA BOSE @scarletrainbow

More of a listener, observer; a wanderlust at heart.

Comment