বিমান সংস্থাগুলো যাত্রীদের মূল্যবান জিনিসের বিমা করানোর ব্যাপারে উদাসীন কেন

জিনিসের মূল্য যাই হোক, জিনিস খোয়া গেলে আপনি মাত্র কিলো প্রতি ৩৫০ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন

 |  4-minute read |   28-05-2018
  • Total Shares

দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টার বিমানযাত্রার ক্লান্তি তখন আর তাঁর চোখে মুখে ধরা পড়ছে না। বরঞ্চ, বেশ ক্ষিপ্ত দেখাচ্ছে তাঁকে। ঘণ্টাখানেক আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথমে দুবাই তারপর মুম্বাই হয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেছেন তিনি। আর, কলকাতা বিমানবন্দরে ব্যাগেজ কনভেয়র বেল্টে পৌঁছাতেই তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। তাঁর চেক-ইন ব্যাগের তালা ভাঙা, ভিতর থেকে বেশ কিছু মূল্যবান মালপত্র উধাও। বিমান সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে তীব্র বাগবিতণ্ডার পরে আপাতত তিনি থানাতে এসেছেন মামলা রুজু করতে। কিন্তু মামলা রুজু করেও খুব একটা লাভ হবে না।

তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাঁকে জানিয়ে দেয় যে তাঁর বিমান অবতরণের আর তাঁর হাতে এই ব্যাগ পৌঁছানোর মাঝের সময়টা এতই কম যে মনে হচ্ছে চুরি কলকাতা বিমানবন্দরে হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই বা মুম্বাইতে বিমান পরিবর্তনের সময়ে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে পুলিশের আর কিছুই করার থাকবে না। সুতরাং, বিমান সংস্থার কাছে ক্ষতিপূরণ নিয়েই খুশি থাকতে হবে তাঁকে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রর্দশনীতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার নন্দিনী মহলানবীশ। তাঁর ব্যাগে বেশ কয়েকটি মূল্যবান ডিজাইনার পোশাক ছিল, যার উৎপাদন মূল্যই সত্তর হাজার টাকার উপরে। বাজারে বিক্রয় মূল্য অনেক বেশি। কিন্তু বিমান সংস্থার পক্ষ থেকে জানান হয়েছেন যে তিনি মাত্র হাজার দেড়েক টাকার মতো ক্ষতিপূরণ পাবেন।

যে খোয়া যাওয়া জিনিসের দাম সত্তর হাজার টাকার উপরে তাঁর ক্ষতিপূরণ শুধুই হাজার দেড়েক টাকা। তা আবার হয় নাকি?

খোয়া যাওয়া মালের ক্ষতিপূরণ

বিমান পরিষেবার আইন অনুযায়ী এটাই রীতি। ব্যাগের ওজনের হেরফেরের উপর ক্ষতিপূরণের অঙ্ক হিসেবে করে বিমান সংস্থাগুলো। চেক-ইন করবার সময় আপনার ব্যাগ ওজন করেন বিমান সংস্থার কর্মীরা। এর পর ব্যাগের ভিতর থেকে যদি কিছু খোয়া যায় সে ক্ষেত্রে আপনার ব্যাগ আবার ওজন করা হবে। এই দুটি ওজনের যা পার্থক্য দেখা যাবে তার উপর ভিত্তি করে মোটামুটি কিলো প্রতি ৩৫০ টাকা হিসেবে করে আপনার ক্ষতিপূরণ হিসেবে করা হবে।

body_052818060415.jpgচেক-ইন ব্যাগেজে মূল্যবান জিনিস থাকলে বীমা করিয়ে নেওয়াটাই শ্রেয়

ধরুন, যদি চেক-ইনের সময় দেখা যায় আপনার ব্যাগের ওজন ২০ কিলোগ্রাম এবং মাল খোয়া যাওয়ার পর আপনার ব্যাগের ওজন ১৮ কিলোগ্রাম। এ ক্ষেত্রে আপনার মাল যতই মূল্যবান হোক না কেন আপনি কিন্তু প্রতি কিলো ৩৫০ টাকার উপর ভিত্তি করে ব্যাগের ওজন দু'কিলো রকমে যাওয়ার জন্য শুধুমাত্র ৭০০ টাকা মতো পাবেন। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করে খুব একটা লাভ হবে না। টিকিট কেনবার সময় আপনার সঙ্গে এই শর্তে আগেই রাজি করিয়ে নিয়েছেন বিমান সংস্থাগুলো।

তাহলে উপায়?

বিমানে চুরির জন্য বিশেষ বিমা

বিমানযাত্রীদের জন্য মাল চুরি হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ বিমার ব্যবস্থা আছে। যা চেক-ইনের সময় চেক-ইন কাউন্টারে করিয়ে নিতে হয়। চেক-ইনের সময় আপনি যদি মনে করেন আপনার চেক-ইন ব্যাগে মূল্যবান কিছু রয়েছে তাহলে চেক-ইন কাউন্টারে আপনি এই বিশেষ বিমার জন্য আবেদন করতেই পারেন।

আইন অনুযায়ী, চেক-ইন কাউন্টারে আপনাকে এই পরিষেবা চাইতে হবে। পরিষেবা চাইলে যে জিনিস বা যে সব জিনিষের বিমা করাতে চান, তার উল্লেখ করতে হবে, বিমা কর্মীরা সেই জিনিষের বিমা করার সময় সেগুলির ছবি তুলে নেবেন। প্রত্যেক যাত্রী এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত দামের জিনিসের জন্য বিমা করাতে পারেন। দুজন যাত্রীর একটি ব্যাগ তাকলে সেক্ষত্রে ২ লক্ষ টাকার বিমা করাতে পারেন। যে সব জিনিসের বিমা করাচ্ছেন তার প্রতিটির দাম আপনাকে জানাতে হবে। সেই মূল্যের উপরই আপনার বিমাকৃত রাশি ঠিক করা হবে। বিমার প্রিমিয়াম অবশ্য একটি জটিল পদ্ধতিতে ঠিক করা হয়। বিমানকর্মীরা প্রথমে আপনার ব্যাগটি ওজন করবেন। তারপর কিলোপ্রতি ৩৫০ টাকা হিসেব করে ব্যাগের ক্ষতিপূরণ নির্ণয় করবে এবং আপনার জানানো ব্যাগের দাম থেকে ব্যাগের ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বাদ দেবে। এই বিয়োগফলের মূল্যের এক শতাংশ আপনার প্রিমিয়াম হিসেবে ধার্য করা হবে।

ধরুন, আপনি জানালেন যে আপনার জিনিসের মূল্য এক লক্ষ টাকা। চেক-ইনের সময় আপনার ব্যাগের ওজন দেখা গেল ১০ কিলোগ্রাম। সে ক্ষত্রে এক লক্ষ টাকা থেকে (৩৫০*১০) ৩,৫০০ টাকা বাদ দিয়ে ৯৬,৫০০ টাকার এক শতাংশ অর্থাৎ ৯৬৫ টাকা আপনাকে প্রিমিয়াম বাবদ দিতে হবে।

একটি মাত্বির জিনিসের মূল্য এক লক্ষ টাকা হলে এবং সেটি চুরি গেলে আপনি পুরো এক লক্ষ টাকা পেয়ে যাবেন। যদি কনভেয়ার বেল্ট থেকে জিনিষ নামানোর সময় দেখেন সেটি ক্ষতিগ্রস্ত এবং জিনিস চুরি গেছে তা হলে প্রথমে বিমানবন্দর কর্মীকে তা জানাতে হবে। তাঁরা নিশ্চিত হলে থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন যাত্রী। সেক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত করার পরে চেক মারফৎ বিমার টাকা পাবেন।

প্রচার নেই কেন?

তবে এই বিমার প্রচার অত্যন্ত কম, নেই বললেই চলে। চেক-ইন কাউন্টারে বসে থাকা বিমানসংস্থার কর্মীরাও আপনাকে এই উপায়ের কথা নিজে থেকে জানান না। এর দুটি কারণ রয়েছে।

প্রথমত, এই বিমা করতে গেলে পদ্ধতিটা বেশ সময় সাপেক্ষ। চেক-ইন পদ্ধতি তাড়াতাড়ি শেষ করে দেওয়ার জন্য বিমান সংস্থার কর্মীরা এই বিমার প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখান না। তাঁরা শুধুমাত্র ব্যাগের ওজন মেপে আপনার টিকিট ও পরিচয় পত্র যাচাই করে বোর্ডিং পাস দিয়ে দেন। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পদ্ধতি। হালে কয়েকটি বিমা সংস্থা সরাসরি যাত্রীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু বেশিরভাগ বিমা সংস্থার বিমা পদ্ধিতি হল,আগে বিমান সংস্থা ক্ষতিপূরণ দেবে যাত্রীকে। এর পর বিমান সংস্থাকে সেই টাকা ফেরৎ দেবে বিমা সংস্থা। বিমান সংস্থাগুলোর দাবি, এই টাকা পেতে বহুদিন সময় লেগে যায়।

সুতরাং, বিমান সংস্থার উপর ভরসা না করে চেক-ইন ব্যাগে মূল্যবান জিনিস থাকলে যাত্রীদের উচিৎ বিমা করিয়ে দেওয়ার জন্য বিমান সংস্থার কর্মীদের কাছে গিয়ে বিমা করিয়ে নেওয়া।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ARPIT BASU ARPIT BASU @virusfound007

Arpit Basu is the Special Correspondent with the India Today Group’s fact check team. With more than one-and-a-half decade's experience in print and digital media, he has reported on aviation, transport, crime, civic and human interests issues. His sting operation on how precious Aviation Turbine Fuel, meant for Kolkata airport, was pilfered and sold in local market as ‘white kerosene’ received widespread acclaim. Arpit has worked with reputed media houses like The Times of India and Hindustan Times and had received letter of appreciation for reporting during the Phalin cyclone in Odisha in 2013.

Comment