হজম শক্তি বাড়াতে কিংবা শরীরের ওজন কমাতে জোয়ান খান
শিশুদের বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং সর্দিকাশি হলে জোয়ান উপকারী
- Total Shares
পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন বদহজম, বুকজ্বালা, বমিবমি ভাব কিংবা সব সময় পেট ভার হয়ে থাকা, কী আপনাকে ভোগাচ্ছে? অনেক সময় আমরা এমন অনেক কিছু খেয়ে ফেলি যার ফলে আমাদের পাচনতন্ত্রের উপর চাপ পড়ে। আমাদের জীবনে বাড়ছে চাপ আর তারই ফলে আমরা এখন অতিরিক্ত মাত্রায় জাঙ্কফুড এবং এমন সব খাবারদাবার খেয়ে ফেলি যাতে ফাইবারের মাত্রা ভীষণ কম। এছাড়াও আমরা প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাবারদাবারও খাই।
তাই এই খাবার-দাবার খাওয়া যেমন বন্ধ করতে হবে তেমনই খেয়াল রাখতে হবে যাতে আমরা খুব সহজেই অসুস্থ না হয়ে পড়ি তাই নিয়ম করে প্রত্যেকদিন জোয়ান এবং মৌরি খেতে হবে।
এই দুটি সামগ্রীই একসময় আমাদের পারম্পরিক খাদ্য তালিকার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল। তবে পরবর্তী সময় তা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। এই দুটি উপাদানই এখন বেশিরভাগ মানুষের খাদ্য তালিকার থেকে হারিয়ে গেছে। আকারে খুব ছোট হলেও এই দুটি উপাদান পেটের বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে পেটকে ভালো রাখে। তাই এই দুটি দ্রব্যকে খাদ্য তালিকায় আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা অতন্ত্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।
জোয়ানের অনেক উপকারিতা আছে
মৌরির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমি আগেই লিখেছি। এবার জোয়ানের গুনাগুন নিয়ে আলোচনা করব। জোয়ান যেমন মুখকে তরতাজা রাখে ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করে তেমনই জোয়ান একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়া জোয়ান বিভিন্ন সংক্রমণ এবং জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে। জোয়ান খেলে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কম হয়। শরীরে ব্যথা হলে বা কোথাও ফুলে গেলে জোয়ান খেলে উপকার পাওয়া যায়। ক্ষুদ্র এই বীজের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অনেক বড় বড় গুন।
তাই এই তিতকুটে এবং ঝাঁজালো স্বাদের উপাদানটি একবার খাওয়া অভ্যাস করে ফেলতে পারলে শরীরের অনেক উপকার হবে। জোয়ানের গন্ধটা খুব উগ্র বলে জোয়ানকে সংস্কৃত ভাষায় ‘উগ্রগন্ধ্যা’ বলা হয়।
জোয়ানের অনেক উপকারিতা আছে। প্রথমত, জোয়ান পেটের পক্ষে উপকারী। জোয়ান পেট ভালো রাখে এবং বদহজম হলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন পেট ব্যথা, পেট জ্বালা, গ্যাস-অম্বলের ভাব, পেটে বায়ুর উদ্রেক হওয়া, বমি বমি ভাব প্রভৃতির হাত থেকে মুক্তি দেয়।
জোয়ান পেটের পক্ষে উপকারী
জোয়ানের একটা টোটকা যেটা খেলে বুকজ্বলা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব তা হল- চা চামচের এক চামচ জিরা ও জোয়ান গুঁড়ো এবং চাচামচের অর্ধেক চামচ আদা গুঁড়ো নিয়ে জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
জোয়ানে থাইমল বলে একটি রসায়ন থাকে যা পেটের গ্যাস্ট্রিক রস ক্ষরণে সহায়তা করে। এর ফলে খাবার সহজেই হজম হয়। জোয়ান কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে রেহাই দেয়।
তাই শিশুদের ক্ষেত্রে বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্লশূল, সর্দিকাশি এবং নাক বন্ধ হয়ে গেলে জোয়ান দেওয়া হয়।
হ্যাঁ, ঠান্ডা লাগলে জোয়ান খেলে উপকার পাওয়া যায়। কিছুটা জোয়ান শুকনো কড়াইতে টেলে নিয়ে টানা ১৫ থেকে ২০ দিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
অথবা খানিকটা জোয়ান দিয়ে চা বানিয়েও খেতে পারেন। কিছুটা গরম জলে সাধারণ চা অথবা গ্রিনটি মেশান সঙ্গে মেশান কিছুটা জোয়ান, আদা এবং এক টুকরো এলাচ। এবার খানিকটা দুধ মিশিয়ে তিন মিনিট মতো ফুটিয়ে নিন।
জোয়ানে থাইমল বলে একটি রসায়ন থাকে
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে নাক বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা ঠান্ডা লেগে জ্বর এলে ছোট একটা কাপড়ে যদি কিছুটা জোয়ান বেঁধে মাঝে মাঝে গন্ধ নেওয়া যায় তাহলে উপকার হয়। কেউ যদি শ্বাসকষ্টে ভোগেন যেমন এজমা বা ব্রঙ্কাইটিস তাহলে জোয়ান খেলে তা উপশম হয়। মাইগ্রেনের যন্ত্রনার হাত থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।
শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে এবং সর্দির জন্য নাক বন্ধ অথবা বুকে কষ্ট অনুভব করলে কড়াইতে কিছুটা জোয়ান টেলে নিন এবার সেই ঝলসানো জোয়ানের যে তাপটা বেরোবে সেই তার গন্ধ নিন। এটা শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। রোজ কিছুটা করে জোয়ান খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
জোয়ান খেলে শরীরের ওজন কম থাকে। পাচনতন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করলে অর্থাৎ যা খাচ্ছি যা যদি ভালোভাবে হজম হয় এবং শরীরের অবাঞ্চিত পদার্থ বেরিয়ে যায় তাহলে এমনিতেই শরীরের ওজন কম থাকে পাশাপাশি শরীরের ওজন দু-এক কিলো বেড়ে গেলে তা কমও করা যায়। জোয়ান হজম শক্তি ঠিক রাখে তাই জোয়ান খেলে শরীরের ওজন কম হতে সহায়তা হয়।
জোয়ান খেলে শরীরের ওজন কম থাকে
আমার দিদিমা বলতেন যে জোয়ান খেলে নাকি চুলের অকালপক্কতা রোধ হয়। যদিও আমি জানি না এটা কি ভাবে সম্ভব। এক কাপ ফুটন্ত জলে কয়েকটা কারি পাতা দিতেন সঙ্গে মেশাতেন কিছুটা চিনি ও খানিকটা জোয়ান তারপর সেটা ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করে নিতেন। প্রত্যেকদিন আমার দিদিমা এই শরবত এক গ্লাস করে খেতেন। এটা চেষ্টা করে দেখায় যেতে পারে।
আমার মতে জোয়ান ভেজানো জলে জোয়ানের সব উপকারিতা পাওয়া যায়। দু'চামচ জোয়ান কড়াইতে শুকনো খোলায় টেলে নিয়ে সেটা এক গ্লাস জলে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে সেই জলটা ফুটিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করে ছেকে নিন অথবা সারারাত ভেজানো জল ভালো করে মিশিয়ে ছেকে নিয়ে খালি পেটে খান।
তাই শরীরকে ভালো রাখতে জোয়ান খান কারণ জোয়ানের গুন আছে। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় আবার জোয়ানকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার প্রয়োজন রয়েছে।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন

