ধর্ম বিরোধিতা আইনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রতিবাদ জানানো উচিত কেন?

আসিয়া বিবির মামলায় পরিষ্কার যে কী ভাবে এই মামলায় আইনে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করা হয়

 |  3-minute read |   12-10-2018
  • Total Shares

আট বছর ধরে নিগৃহীত হওয়ার পরে আসিয়া নুরিন বিবির আবেদন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে গৃহীত হয়েছিল। ধর্মের বিরুদ্ধে মুখ খোলার দায়ে এই গরিব কৃষি শ্রমিক একেবারে মৃত্যুর মুখে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু এই সুদীর্ঘ মামলার রায় ঘোষণার পর যাতে কোনও আশঙ্কা দানা না বাধে তার জন্য আদালতের তরফ থেকে এই মামলার রায় এখনও পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি।

এর আগে, কিছু গুরত্বপূর্ন মামলার ক্ষেত্রে রায় ঘোষণার থেকে বিরত থাকতে দেখা গিয়েছে কোর্টকে। এই মামলাতেও পাকিস্তানের খুব সম্ভবত মৌল্যবাদী সংস্থাগুলোর কথা ভেবে রায় ঘোষণা করা হচ্ছে না। কয়েকটি মৌল্যবাদী সংস্থা তো জনসমক্ষে হুমকিই দিয়েছে, এই মামলা থেকে মুক্তি পেলে আসিয়া বিবিকে হত্যা করা হবে। এমনিতে ধর্মের বিরুদ্ধে মুখ খোলার অভিযোগের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের আইন প্রচন্ড দ্বিধান্বিত। এর পরেও, সে দেশের আইন বিশেজ্ঞরা মনে করছেন যে এই মামলার শুনানি হলে আসিয়া খুব সহজেই মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।

body1_101218071448.jpg

সে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী মৌল্যবাদী দল তেহরিক -ই-ইসলামী পাকিস্তান (টিএলপি) আসিয়ার মুক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছে। শেষ নির্বাচনে দলটি ৪০ মিলিয়ন প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ২.২ মিলিয়ন পেয়েছিল এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে দ্বিতীয় বা তৃতীয়তে শেষ করেছিল। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইতিমধ্যেই এই সংগঠনকে প্রথম ম্যাচে জিততে সাহায্য করেছেন। আহমাদি বিশ্বাসে বিশ্বাসী দেশের অর্থনীতিবিদ আতিফ মিলান কে ইকোনমিক অ্যাডভাইসারি কাউন্সিল থেকে সরিয়ে দিয়ে।

কেউ ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বললে টিএলপি প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখায়। ধর্ম বিরোধিতা আইনের পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলার জন্যে পাঞ্জাবের প্রাক্তন গভর্নর সলমন তাসীরকে ২০১১ সালের জানুয়ারী মাসে তাঁর দেহরক্ষী মমতাজ কাদরির হাতে খুন হতে হয়েছিল। আর তাই টিএলপি কাদরির জয়গান করে।

দলীয় নেতারা এখন সুপ্রিম কোর্টকে হুমকি দিয়েছেন যে আসিয়া বিবির প্রতি যেন কোনও রকম সহানুভূতি না দেখানো হয় আর সুপ্রিম কোর্ট যদি তাঁকে বিদেশে নিরাপদ আশ্রয় পাঠাতে চায় তাহলে তার পরিস্থিতি কিন্তু ভয়ঙ্কর হবে।

body_101218071500.jpg

টিএলপি নেতা পীর আফজল কাদরি জানিয়েছেন যে আসিয়া বিবিকে যে বিচারক মুক্তি দেবেন সেই বিচারককে হত্যা করা উচিত। কারণ ধর্মের বিরুদ্ধে যাওয়া কোনও ব্যক্তিকে একমাত্র একজন ধর্মত্যাগীই ক্ষমা করতে পারেন। কাদরির বক্তব্য বেশ সোজাসাপ্টা। তিনি বলেছেন সেই বিচারককে এক হয় সরকার ফাঁসি দেবে না হয় তাঁকে 'খুদার খিদমতগাররা' শাস্তি দেবে।

আর এখানেই পাকিস্তানের ধর্ম বিরোধীতার আইনের মজা।

যিনি অভিযুক্ত তিনি তো মৃত্যুদন্ড পাবেন। কেউ যদি তাঁকে ক্ষমা করেন তাহলে সেও 'ধর্ম-বিরোধী' তকমা পাবেন। এবং তখন তাঁর বিরুদ্ধেও আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যেতে পারে।

পাকিস্তানের ধর্ম বিরোধিতার আইন জিয়া উল হকের স্বৈরতন্ত্রের সময় থেকে শুরু। ১৯৮০ সালে ইসলামের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করা মানে ২৯৫ ধারায় তিন বছরের হাজতবাস হত। ৮২ সালে সাজার সময়সীমা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন করা হয়েছিল। ৮৬ সালে এই ধারায় মৃত্যুদণ্ডের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।

বিবির আগেও অনেক সংখ্যালঘুদের এই মামলায় দণ্ডিত করা হয়েছিল।

body2_101218071510.jpg

এই মামলায় অভিযুক্তদের হয়ে আদালতে সওয়াল করার জন্য আইজীবীদেরও হত্যা করা হয়েছে। ২০১৪ সালে রশিদ রহমান বলে এক আইনজীবী এই মামলায় অভিযুক্তদের হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। যে সব বিচারকরা ধর্ম বিরোধিতা মামলায় কাউকে মুক্তি দিয়েছেন তাঁদের এক হয় মরতে হয়েছে না হলে বিদেশে আশ্রয় নিতে হয়েছে। দেখার বিষয় সুপ্রিম কোর্ট আসিয়া বিবিকে মুক্তি দেওয়ার সাহস দেখাতে পারে কি না।

দেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে হলে দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতেই হবে পাকিস্তানকে।

মহম্মদের নামে কটূকথা বলার জন্যে বিবির বিরুদ্ধে ধর্মের বিরুদ্ধে মুখ খোলার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তিনি খ্রিস্টান বলে প্রতিবেশীরা তাঁর বাড়িতে জলস্পর্শ বন্ধ করে দিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে মুখ খুলেই জনরোষের মুখে পড়েন বিবি।

পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী এর পর বিবির বিরুদ্ধে মামলা শুরু করা হয় এবং যে মামলা প্রমাণিত হলে সাজা হচ্ছে মৃত্যুদন্ড।

২০১০ সালে ৪৫ বছর বয়সে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন বিবি। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে শোরগোল পড়ে যায়। পশ্চিমি দুনিয়া বিবির সমর্থনে এগিয়ে আসে। এবছরের ফেব্রুয়ারী মাসে পপ ফ্রান্সিস বিবিকে 'শহীদ' বলে সম্বোধন করেন।

চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার এই মামলা বিলম্বিত করে চলছিল। তিনি যদি শেষ পর্যন্ত মুক্তিও পান তাঁর মামলা একটা বিষয় প্রমান করে দিচ্ছে যে ধর্ম বিরোধিতার মামলায় কী ভাবে দেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করা হয়।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

FARAHNAZ ISPAHANI FARAHNAZ ISPAHANI

Farahnaz Ispahani is a former member of Pakistan’s National Assembly. She is Global Fellow at the Woodrow Wilson Center for International Scholars in Washington, DC and the author of Purifying the Land of the the Pure: Pakistan’s Religious Minorities.

Comment