নির্বাচনী ফলাফল: পাকিস্তান পারলেও আমরা পারব না কেন
ভোটদানের দিনই গণনা শুরু হয় পাকিস্তানে, ভারতে শেষ দফার ভোটের পরেও তিন দিনের অপেক্ষা
- Total Shares
এ বছরের ২৫ জুলাই পাকিস্তানের জনগণ দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচিত করার জন্যে ভোটদান করেছিলেন। সকাল আটটা (পাকিস্তানী সময়ে) থেকে শুরু হয়ে এই ভোটদান পর্ব সন্ধ্যে ছ'টা অবধি চলেছিল। সেদিনই রাত ন'টার থেকেই একে একে বিভিন্ন কেন্দ্রের নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করা শুরু হয়ে গিয়েছিল। আর, মধ্যরাতের আগেই মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে ইমরান খান নেতৃত্বাধীন জোট সরকার এই সন্ত্রাস কবলিত ও দুর্নীতি পরায়ন দেশে ক্ষমতায় আসতে চলেছে।
এবার আসা যাক ভারতের কথায়। ভারতে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন কয়েক দফায় অনুষ্ঠিত হল। ১২ নভেম্বর শুরু হয়েছিল প্রথম দফার নির্বাচন আর শেষ দফার ভোটদান হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর। এই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল জানতে আমাদের কিন্তু আরও দিন তিনেক অপেক্ষা করতে হল।
এর মধ্যে অবশ্য এক্সিট পোলের রমরমা দেখা গেল। অথচ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কেউই নিশ্চিত ছিল যা যে ভোট গণনা আদৌ ১১ ডিসেম্বর শেষ করা যাবে কিনা।
নির্বাচনের দিনেই ফল ঘোষণা শুরু হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানে [ছবি: রয়টার্স]
পাকিস্তান একটি ছোট্ট দেশ। দেশের জনসংখ্যা ২০ কোটির মতো। কিন্তু যে পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচন হল - রাজস্থান (৬.৮৯ কোটি), মধ্যপ্রদেশ (৭.৩৩ কোটি), ছত্তিসগড় (২.৫৫ কোটি), তেলেঙ্গানা (৩.৫ কোটি) ও মিজোরাম (১১.২ কোটি) - সেই রাজ্যগুলোর শেষ দফার ভোটের ভোটার সংখ্যা মাত্র ২০.৫ কোটি মতো।
২০১৭ সালের দেশের আরও পাঁচটি রাজ্যের - উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, মণিপুর, গোয়া ও উত্তরখণ্ড - বিধানসভা নির্বাচন শেষ হয়েছিল ৮ মার্চ। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল জানতে আমাদের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে - ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সত্ত্বেও ভারতের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে এতটা সময়ে লাগে কেন? বরঞ্চ, ফলাফল তো আরও দ্রুত ঘোষণা হওয়ার কথা।
একটি ভোট কেন্দ্রে একেক জন প্রার্থী কতগুলো করে ভোট পেয়েছে তা জানাতে একটি ইভিএমের সময় লাগে মাত্র ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড। গণনা কেন্দ্রে একজন আধিকারিকের প্রয়োজন যিনি প্রতিটি ইভিএমের হিসেবে টুকে নিয়ে তা একে একে যোগ করতে থাকবেন।
ভারতে নির্বাচনের ফলাফল জানতে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
এই কারণেই গণনা শুরু হওয়ার পরে ফলাফল ঘোষণা করতে খুব একটা সময়ে লাগে না।
একটা সময় ছিল যখন নির্বাচনী ফলাফল জানতে আমাদের রাত জেগে অপেক্ষা করে বসে থাকতে হত। আশাকরি, সেই দিনগুলোর কথা আপনাদের স্মরণে রয়েছে।
কিন্তু, ইভিএম যুগেও ইভিএম খোলা তো ভোটের ফল ঘোষণার জন্যে আমাদের হন্যে হয়ে অপেক্ষা করতে হয়।ভোটদানের পরে এই অপেক্ষা সত্যি বিরক্তিকর।
ভোটদান পর্বের শেষে ইভিএমগুলোকে প্রথমে সীল করে দেওয়া হয়। সেই সীলের উপরে নির্বাচনী অধিকর্তারা সই করেন। এর পর মেশিনগুলোকে একটি সুরক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় যাকে পোশাকি ভাষায় 'স্ট্রং রুম' বলা হয়ে থাকে। এই স্ট্রং রুমগুলোতে দিবারাত্র বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের ব্যবস্থা থাকে।
স্ট্রং রুমে থাকে বিভিন্ন স্তরের সুরক্ষা বলয় [ছবি: পিটিআই]
মেশিন নিয়ে যাওয়ার সময় নির্বাচনী অধিকর্তা স্ট্রং রুম অবধি যেতে পারেন। প্রার্থীরা যদি মনে করেন তাহলে তাঁদের কেন্দ্রে ব্যবহৃত ইভিএমগুলোতে নিজেদের সীল ও লাগাতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি স্ট্রং রুমগুলোর বাইরে অস্থায়ী শিবির করে থাকতে পারেন।
গণনার দিনে এই ইভিএমগুলোকে গণনা কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। গণনা চালু হলে আধিকারিকরা প্রতিটি প্রার্থীর ভোট আলাদা করে হিসেবে করতে থাকেন। সব শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
এখানে একটা বিষয়ের উপর নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে। স্ট্রং রুমের নিরাপত্তার জন্যে প্রচুর লোককে মোতায়ন করতে হয়। ভোট গণনা যদি দ্রুত শুরু করা যায় তাহলে এই লোকবলকে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এত কিছুর পরেও বিতর্ক ওঠে যে ইভিএমে জালিয়াতি করা হয়েছে বা ফলাফল সুকৌশলে কোনও একটি দলের অনুকূলে করে দেওয়া হয়েছে। যত আগে ফলাফল ঘোষণা করা হবে বিতর্কের সম্ভাবনা ততটাই কমে যাবে।
পাকিস্তান যদি পারে, ভারত কেন পারবে না।
ভারতে নির্বাচনে খুবই গুরত্বপূর্ন একটা বিষয়। ভারতীয়রা রাজনৈতিকভাবেও যথেষ্ট সচেতন। একটি নির্বাচনের পর ফল ঘোষণা ও ঘোষিত ফল নিয়ে বিশ্লেষণের আগে ভারতীয়রা আর অন্য কিছু করতেই চান না।
এটা ঠিক যে আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া আইন শৃঙ্খলার স্বার্থে অনেকটাই জটিল করে রাখা হয়েছে। কিন্তু তাই বলে ফল ঘোষণার জন্য এতদিন ধরে অপেক্ষা করিয়ে রাখার কোনও যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

