জামাতের জন্যে এ বাংলায় তৈরি অস্ত্র বাংলাদেশ ঘুরে অসমে, আশঙ্কা গোয়েন্দাদের
২০১২ সালে অসমে বোরো-মুসলিম অশান্তিকে কাজে লাগিয়েই জমি শক্ত করেছিল জামাত-উল-মুজাহিদিন
- Total Shares
কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কি কেউটে খুঁজে পেলেন গোয়েন্দারা। জাল নোটের কারবারের খোঁজ করতে গিয়ে হদিশ মিলল বেআইনি অস্ত্র কারখানার। সে কারখানা থেকে অস্ত্র যেত বাংলাদেশে।
এই নয়া অস্ত্র পাচার চক্রের রুটটা নেহাতই কম নয়। মুঙ্গের থেকে উত্তর ২৪ পরগনার কাঁকিনাড়া, সেখান থেকে মালদহের কালিয়াচক, সেখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ। গোয়েন্দারা জানতেন যে জামাত জঙ্গিদের মদতে বাংলাদেশ থেকে এই পথেই আসত জাল নোট। এখন ফিরতি পথে জাল নোট কারবারিদের হাত ধরে অস্ত্র যাচ্ছে বাংলাদেশে। তাহলে কি এই লেনদেনের পিছনেও হাত রয়েছে জামাত জঙ্গিদের?
তদন্তে উঠে এসেছে মালদহ জেলার কালিয়াচকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে তৈরি করা হয়েছিল আর একটি ইউনিট। কাঁকিনাড়া থেকে তৈরি অস্ত্র সোজা চলে যেত কালিয়াচকে। সেখানে সেই অস্ত্রের কাঠামোর সঙ্গে বাকি যন্ত্রাংশ জুড়ে (অ্যাসেম্বলিং করে) সেটাকে সম্পূর্ণ করা হত। তারপর সেই অস্ত্র পাড়ি দিত বাংলাদেশে।
একটা সময় পশ্চিমবঙ্গ বা ছত্তিসগড়ের ঘন জঙ্গলের মধ্যে ডেরা বেঁধে থাকা মাওবাদীদের হাতে এত উন্নতমানের অস্ত্র কী ভাবে আসত তা নিয়ে তদন্ত বা গবেষণার কোনও শেষ ছিল না। বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ থেকে শুরু করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এমনকি দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা গোয়েন্দা বিভাগ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র) এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিভিন্ন সময় হন্যে হয়ে তদন্ত করেছে। আর তাদের তদন্ত রিপোর্টে কখনও বলা হয়েছে যে মাওবাদীরা চিন থেকে অস্ত্র আমদানি করে, আবার কখনও জানানো হয়েছে যে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলো মাওবাদীদের অস্ত্র সরবারহ করে।
২০১২ সালে মাওবাদী সংক্রান্ত একটি মামলার চার্জশিট পেশ করেছিল এনআইএ। সেই চার্জশিটে বলা হয়েছিল যে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে মণিপুরের সশস্ত্র অভ্যুত্থানকারী সংগঠন পিপল'স লিবারেশন আর্মি থেকে বিপুল পরিমাণ ও অস্ত্র ও উন্নতমানের যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্রয় করেছিল মাওবাদীরা। ক্রয় করা সামগ্রী মাওবাদীদের হাতে পৌঁছাবার আগেই তিনটে কিস্তিতে ৩৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। চিন থেকে আমদানি করে এই বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মাওবাদীদের হাতে তুলে দিয়েছিল পিআইএল, যা মিয়ানমার হয়ে গুয়াহাটি ঘুরে কলকাতায় এসেছিল। কলকাতা থেকে তা মাওবাদীদের বিভিন্ন ডেরায় সরবারহ করা হয়।
২০১২ সালে কলকাতার বন্দর এলাকার মেটিয়াব্রুজে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে এবং অজানা কারণে কলকাতা পুলিশ দ্রুত এই ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে উদ্যত হয়। পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে রাজনৈতিক হিংসা ছড়াবার জন্য ওই বাড়িটিতে বোমা মজুদ করা হচ্ছিল যার থেকেই বিস্ফোরণ ঘটে। এর দু'বছরের মাথায় বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ ঘটে যার তদন্তভার যায় এনআইএর হাতে। এনআইএর তদন্তে উঠে আসে খাগড়াগড় ও মেটিয়াব্রুজ কাণ্ডের যোগসূত্র।
তদন্ত চলাকালীন এনআইএ দাবি করে যে বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে মাওবাদীরা অস্ত্র জোগাড় করত তার ইঙ্গিত তারা পেয়েছে। যদিও মাওবাদী বিশেষজ্ঞরা মানতে নারাজ যে বাংলাদেশের জঙ্গিসংগঠন গুলোর সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে মাওবাদীরা।
কিন্তু এবার তো তদন্তের মোড় অন্যদিকে ঘুরেছে। দেখা যাচ্ছে এ দেশে তৈরি হওয়া অস্ত্র যাচ্ছে বাংলদেশের জঙ্গি সংগঠনের হাতে। তাও আবার জাল নোটের বিনিময়। এক গোয়েন্দা কর্তার মতে এই ট্রেন্ড খুবই ভয়াবহ।
গোয়েন্দারা অসমের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়েও খুবই চিন্তিত। ২০১২ সালে অসমে বোরো-মুসলিম অশান্তিকে কাজে লাগিয়েই জমি শক্ত করেছিল জামাত-উল-মুজাহিদিন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ঘুরে সেই অস্ত্র আবার অসম এবং সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গেও পৌঁছতে পারে বলে গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন।