জরুরি পরিষেবা, তাই জনস্বার্থের কথা ভেবেই ব্যাঙ্ক ধর্মঘট করা উচিৎ নয়
ব্যাঙ্ক ধর্মঘট করলে জনসাধারণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়
- Total Shares
সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ও সরকারি ব্যাঙ্ক কর্মীদের ডাকা ধর্মঘটকে বেআইনি বলে ঘোষণা করার আবেদন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের এক আইনজীবী অক্ষয়কুমার ষড়ঙ্গী চলতি মাসের ২ তারিখে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলাটির প্রথম শুনানি হবে আগামীকাল অর্থাৎ ৬ জুলাই।

ব্যাঙ্ক ধর্মঘট হলে সাধারণ মানুষকে অসুবিধায় পড়তে হয়। এ ছাড়া দেশেরও বিশাল আর্থিক ক্ষতি হয়। আমাদের দেশে বহু মানুষের কাছে এখনও অনলাইনে লেনদেনের সুবিধা পৌঁছায়নি কিংবা বহু মানুষের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের সুবিধাও নেই। চিকিৎসা, ব্যবসা কিংবা অন্য কোনও কারণে হঠাই হয়ত কারও টাকা তোলার প্রয়োজন হল।
লাগাতার তিন বা চারদিন ব্যাঙ্ক ধর্মঘট চললে এটিএম মেশিনগুলোতেও একটা সময়ের পর আর টাকা নাও মিলবে না। কারণ সাধারণ মানুষ যেই মাত্র ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের কথা জানতে পারবেন তাঁরা নিজেদের কাছে অর্থ মজুত করে রাখার জন্য টাকা তুলে নেবেন। ব্যাঙ্ক পরিষেবা অত্যাবশ্যক পরিষেবাগুলোর মধ্যে একটা। তাই ধর্মঘটের মধ্যে যদি কারও চিকিৎসার জন্য বা অন্য কোনও কারণে হটাৎই একটা বিরাট অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন পড়ে তখন তাঁর মাথায় তো আকাশ ভেঙে পড়বে!
ব্যাঙ্ক ধর্মঘট করলে জনসাধারণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়।

আমাদের সংবিধানে কোথায় এমন কোনও আইন নেই যা ব্যাঙ্ক ধর্মঘটকে সমর্থন করে।
কোনও ব্যক্তি বা কোনও সংস্থা নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য হাজার হাজার মানুষের অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে না।ঠিক একই ভাবে ব্যাঙ্ককর্মীরা নিজেরদের ক্ষোভকে চরিতার্থ করার জন্য কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন যার ফলে জনসাধারণকে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। ব্যাঙ্ক ধর্মঘটকে আর পাঁচটা শিল্প ধর্মঘটের সঙ্গে মেলালে চলবে না। কারণ একটি কারখানা না কোনও শিল্প কেন্দ্রে ধর্মঘট হলে সাধারণ মানুষকে নাকাল হতে হয় না।

তাই মামলাটিতে আমরা আবেদন করা হয়েছে যাতে কেন্দ্র সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয় যাতে এই সব বিষয়কে মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় বিধি তৈরি করেন যাতে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটকে আটকানো যায়। পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)-কে একটি নির্দেশ দেওয়ারও আবেদন করা হয়েছে যাতে তাঁরা সবক'টি ব্যাঙ্ককে এই বিষয় সচেতন করেন এবং ব্যাঙ্ক ধর্মঘটকে বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়। এবং কোনও ব্যাঙ্ক বা ব্যাঙ্ক ইউনিয়নের যদি ধর্মঘট করে তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে যেন যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
নোটবন্দির সময় সবাইকে এটিএম কার্ড দেওয়া এবং দেশের ব্যাঙ্কিং-এর ব্যবস্থাটিকে পুরোপুরি ভাবে ডিজিটাল করার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আমাদের সরকার যে ক্যাশলেস ট্রানজাকশনের কথা বলেছিলেন সেই পরিষেবা মানুষকে দেওয়ার পরিকাঠামো এখনও আমাদের দেশে তৈরি করা হয়েছে কি?

কিন্তু সরকার তার প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এটা কেন্দ্র সরকারের ব্যর্থতা। ঠিক এই কারণেই মামলাটির প্রধান এবং প্রথম বিবাদি পক্ষ হল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল আমাদের দেওয়া চিঠিটি গ্রহণ করেছেন।
কেন্দ্র সরকার জানায় যে হবে এছাড়াও সরকার আমাদের বলেছিলেন কিন্তু তার কিছুই এখনও পুরোপুরি ভাবে করা সম্ভব হয়নি। ব্যাঙ্কের তরফে বলা হয়েছে যে কোনও ব্যাঙ্ক ধর্মঘট করার অন্তত পক্ষে ২২ দিন আগে থেকে একটি নোটিস দেওয়া হয় যাতে সাধারণ মানুষও সে বিষয়ে জানতে পারেন। কিন্তু একজন ব্যক্তির ২২ দিন পরে হঠাৎ করে কোনওরকম আপৎকালীন অবস্থার সৃষ্টি হতেই পারে যেটা আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব নয়।

ব্যাঙ্ককর্মীদের অসন্তোষ থাকতেই পারে কিন্তু সেই ক্ষোভকে চরিতার্থ করার জন্য আরও কোনও পথ রয়েছে ধর্মঘটের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা কাজের কথা নয়। কোনও সভ্য দেশে যে কোনও ধরণের ধর্মঘটকে মেনে নেওয়া যায় না, কারণ কাজ বন্ধ করে দেওয়াটা কোনও কাজের কথা নয়।

