দ্বিশতবর্ষে হেয়ার স্কুল, ফিরে দেখা গৌরবময় সেই ইতিহাস
রেনেসাঁর যুগে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
- Total Shares
কলকাতায় হিন্দু কালেজের (তখন কালেজ-ই লেখা হত) উল্টোদিকের জমিতে ১৮১৮ সালে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ডেভিড হেয়ার, নাম ছিল আড়পুলি পাঠশালা। তারপরে নাম বদলে কলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুল এবং শেষে ১৮৬৭ সালে নাম বদলে হল হেয়ার স্কুল। স্কুলের প্রতিষ্ঠাদিবস হিসাবে ১ সেপ্টেম্বর দিনটিকে ধরা হলেও এ সম্পর্কিত কোনও নথি পাওয়া মুশকিল।
আড়পুলি পাঠশালা এখন হেয়ার স্কুল (ছবি: সুবীর হালদার)
দু’শো বছরে হেয়ার স্কুল। সময়টা বড় কম নয়, আর ইতিহাসও। ১৮২০ সাল সম্পর্কে ধারনা করতে গেলে বলতে হবে, তখনও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম হয়নি, ডিরোজিও শিশু, রাজা রামমোহন রায় যুবক। বাংলার নবজাগরণ তখন শুরু হয়েছে।
বাংলার নবজাগরণ ও আরও অনেক কিছুর সঙ্গেই জুড়ে আছে ডেভিড হেয়ার প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষক ও প্রাক্তনীদের তালিকা দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। প্রধানশিক্ষকের তালিকায় রয়েছে প্যারীচরণ সরকার, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (আনন্দমঠের লেখক নন), হরিচরণ রাই প্রমুখ।
গৌরবময় ইতিহাসের কথা বলছেন প্রধানশিক্ষক (ছবি: সুবীর হালদার)
প্রাক্তনীদের তালিকায় রয়েছেন তারাচাঁদ চক্রবর্তী, রামতনু লাহিড়ী, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, দিগম্বর মিত্র, রাজনারায়ণ বসু, দীনবন্ধু মিত্র, মহেন্দ্রলাল সরকার, প্যারীচরণ সরকার, রাধানাথ শিকদার, স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মহেন্দ্রলাল গুপ্ত (শ্রীম), আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রমথেশ বড়ুয়া, চারুচন্দ্র চক্রবর্তী (জরাসন্ধ), সুরেশ বিশ্বাস (কর্নেল), গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, গুরু দত্ত, এমএন বিড়লা, এম পি বিড়লা, তুষারকান্তি ঘোষ, জয়ন্তনাথ চৌধুরী (জেনারেল), সুব্রত মুখোপাধ্যায় (এয়ারমার্শাল), কিরণশঙ্কর রায় প্রমুখ।
চোখ আটকে যায় প্রাক্তনীদের তালিকা দেখলে (ছবি: সুবীর হালদার)
দেশের নবজাগরণ, তা সে সমাজ সংস্কার হোক বা বিজ্ঞান ও সাহিত্যসাধনা, হেয়ার স্কুল ছিল তার অন্যতম পীঠস্থান। হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর ইয়ং বেঙ্গলের প্রথমসারির সদস্যদের কয়েকজনও এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই ছাত্র। প্রথম ভারতীয় ফুটবলার নগেন্দ্রপ্রসাদ শর্মাও ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্র।
এ দেশের শিক্ষাক্ষত্রে ঘড়ি ব্যবসায়ী ডেভিড হেয়ারের অবদান তাঁকে অমর করে দিয়েছে। তাঁর যে স্বপ্ন ছিল, তা সফল করেছে তাঁর নাম নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠান। প্রধানশিক্ষক সুনীলকুমার দাস বলেন, “রেনেসাঁর যুগে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। বহু মানুষের প্রেরণা ছিলেন হেয়ার। ডিরোজিওর প্রতিও তাঁর সমর্থন ছিল। ভবনটি যে ২০০ বছরের পুরোনো নয়, তা বোঝাই যায়, তবে এই প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপন করেছেন ডেভিড হেয়ার-ই।”
স্কুলের করিডোর (ছবি: সুবীর হালদার)
সময়ের সঙ্গে অবশ্য সেই জৌলুস অনেকটাই হারিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। একসময় যে প্রতিষ্ঠান ছিল রত্নগর্ভা, এখন তেমন নাম-ডাক আর নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক হওয়ার অপেক্ষায় দ্বিশতবর্ষ পার করতে চলা এই প্রতিষ্ঠান।