এ রাজ্যে যে সব ট্যারান্টুলা দেখা যায়, তার কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয় না

এ থেকে জ্বর, সাময়িক স্নায়ুদৌর্বল্য ও ত্বকে সমস্যা হতে পারে

 |  2-minute read |   08-06-2018
  • Total Shares

সম্প্রতি এ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্যারান্টুলা বার হওয়ার খবর আসছে। প্রথমেই বলে রাখা দরকার, বড় মাকড়সা মানেই ট্যারান্টুলা নয়। ট্যারান্টুলার হলে তার গায়ে লোম থাকবেই। আর দক্ষিণ আমেরিকার ট্যারান্টুলার মতো এ রাজ্যের ট্যারান্টুলা অতটা বিষাক্ত নয়, প্রাণঘাতীও নয়। তবে এই প্রজাতির মাকড়সা যে বিষাক্ত, এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।

এই প্রাণীটি থেরাফোসিডি (Theraphosidae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। দক্ষিণ ইতালির টরেন্টো শহর থেকে এই নামের উৎপত্তি। বিশ্বজুড়ে ৯০০টি প্রজাতির ট্যারান্টুলা মাকড়সা পাওয়া যায়, এর মধ্যে ভারতে পাওয়া যায় ৬০টি প্রজাতির ট্যারান্টুলা। তবে পশ্চিমবঙ্গে পাওয়া যায় ৮টি প্রজাতি। এরা গাছে অথবা মাটির নীচে গর্তে বাস করে। সম্প্রতি রাজারহাটে যে বড় মাকড়সাটি পাওয়া গেছে সেটি ট্যারান্টুলা নয়, তবে মেদিনীপুর জেলায় এবং আরও পরে হাওড়ার বাগনানে যেগুলি পাওয়া গেছে, সেগুলি ট্যারান্টুলা।

body1_060818051901.jpgট্যারান্টুলা দেখলেই আতঙ্কিত হন লোকজন

সম্প্রতি যে ক’টি মাকড়সা উদ্ধার হয়েছে, সেগুলি সবই পুরুষ মাকড়সা। এই সময়টা ওদের মিলনের সময়, তাই হয়তো ওরা বেরিয়েছে। তবে বর্ষাকাল এলে ওদের আর দেখা যাবে না বলেই মনে হয়। ওরা সাধারণত জলা জায়গার পাশে ঝোপ-ঝাড়ে বসবাস করে। অনেকে আবার মাটির গর্তেও থাকে।

বেশিরভাগ ট্যারান্টুলা অনেক দিন বাঁচে। বেশিরভাগ প্রজাতি ২-৩ বছরের মধ্যে বড় হয়ে যায়, কোনও কোনও প্রজাতির ক্ষেত্রে বড় হতে ১০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। পুরুষ মাকড়সা সাধারণত এক থেকে দেড় বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায়। স্ত্রী মাকড়সার আয়ু মোটামুটি ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত হয়। তারা ৫০ থেকে ২০০টি মতো ডিম পাড়ে রেশমি থলিতে। ছয় থেকে আট সপ্তাহ তারা ডিম পাহারা দেয়। স্ত্রী মাকড়সা ডিমের থলির কাছাকাছি থাকে এবং এরা খুবই আক্রমণাত্মক হয়। এরা কেন্নো, বিছে বা বড় মাপের পোকা খায়। বড় মাকড়সা আবার মেরুদণ্ডী প্রাণী যেমন টিকটিকি, ইঁদুর, বাদুড়, পাখি, ছোট সাপ প্রভৃতি খায়।

প্রশ্ন হল, আজকাল এদের এত বেশি দেখা যাচ্ছে কেন। আসলে ঝোপঝাড় যত কেটে সাফ করে ফেলা হচ্ছে, এদের স্বাভাবিক বাসস্থানেরও তত বেশি অভাব হচ্ছে। তাই ট্যারান্টুলা ক্রমেই মানুষের বসতির কাছে চলে আসছে। লোমশ মাকড়সা দেখে লোকে বিরক্ত করছে। মাকড়সাকে বিরক্ত না করলে কামড়ায় না। ট্যারান্টুলার চোয়ালে দুটি বিষদাঁত আছে, তা দিয়েই বিষ ঢালে। এর বিষ শুধুমাত্র ছোট প্রাণীকে হত্যা করার মতো, মানুষকে হত্যা করার মতো নয়।ট্যারান্টুলা কামড়ালে ক্ষতস্থান সাবান-জল দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে নিন। ব্যথা বাড়লে ব্যথা কমার ওষুধ খেতে হবে। ক্ষতস্থানে বরফ দিতে পারেন। অবশ্যই নমুনাটি, মানে যে মাকড়সাটি কামড়েছে, সেটি সংগ্রহ করুন। কাছাকাছি হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।

body_060818051935.jpgকাঁথির তেঙ্গুনিয়া থেকে চন্দন বেরার সংগ্রহ করা সেই পুরুষ মাকড়সা (জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া)

ট্যারান্টুরা কামড়ালে ক্ষতস্থান ফুলে ওঠে এবং জ্বালা বা প্রদাহ শুরু হয়। এই মাকড়সা কামড়ালে সাধারণত অ্যালার্জি হয় না, তবে অ্যালার্জির ধাত আছে, তাঁদের অ্যালার্জি হলেও হতে পারে। যেমন অনেকের ক্ষেত্রে মৌমাছির হুলেও অ্যালার্জি হয়। অনেক সময় গা-বমি করতে পারে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে ক্ষতস্থানে পচন ধরণ পারে (necrosis)। এ রাজ্যে অত বিষাক্ত ট্যারান্টুলা পাওয়া যায় না যার বিষ থেকে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ট্যারান্টুলা দেখলে আতঙ্কিত হবেন না, মাকড়সা দেখলেই মেরে ফেলবেন না, এই মাকড়সা পরিবেশের খাদ্যশৃঙ্খলা বা বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সাহায্য করে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

DR SHELLEY ACHARYA DR SHELLEY ACHARYA

Head, Arachnology Division & Dy. Director, Zoological Survey of India.

Comment