নগদের জোগান নিয়ে সমস্যার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক থাকা সম্ভব নয়
এই সমস্যা কিছুটা প্রযুক্তিগত এবং সাময়িক, ক’টা দিন গ্রাহকদের ধৈর্য ধরতে হবে
- Total Shares
২০১২ সালে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর এখন আমি আর সরাসরি ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত নই, যদিও একটি ব্যাঙ্কের বোর্ডে আমি সদস্য হিসাবে রয়েছি। তাই ঠিক কী ঘটছে সেটা জানি না, শুধুমাত্র সমংবাদমাধ্যম থেকে যে টুকু জানা যায়, সেটুকুই জানতে পারছি। এই ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে বলতে পারি, নতুন মাপের নোট আসায় সমস্যা দেখা দিয়েছে, সে জন্য প্রযুক্তিগত কয়েকটি সমস্যাও হচ্ছে এবং সমস্যাটি অঞ্চলভিত্তিক। সংবাদমাধ্যমে দেখছি, তেলাঙ্গনা, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার প্রভৃতি কয়েকটি রাজ্য থেকে খবর পাওয়া যাচ্ছে যে এই সব অঞ্চলে নগদের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে। আমার ধারনা, সমস্যাটি সাময়িক এবং কয়েকদিনের মধ্যেই তা মিটে যাবে।
নগদ টাকার বণ্টন নির্ভর করে চাহিদা ও জোগানের উপরে। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও রাজ্যভিত্তিক কার্যালয়ে কারেন্সি-চেস্ট আছে। তারাই দেখে কোন সময় কোথায় নগদের চাহিদা কেমন হতে পারে। উৎসবের সময় নগদের চাহিদা বেশি থাকে, যেমন দুর্গাপুজোর সময় এই রাজ্যে প্রচুর নগদের দরকার হয়, কোথাও আবার কালীপুজোর সময় বেশি নগদের দরকার হয়।
একেকটি জায়গায় একেকটি সময়ে বিশেষ কারণে নগদ টাকার দরকার হয়ে পড়ে। আগে থেকে এ ব্যাপারে আন্দাজ করে ওই সব অঞ্চলের ব্যাঙ্কগুলোতে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রয়োজনমাফিক নগদ টাকার জোগান দিয়ে দেয়। ব্যাঙ্কগুলি আবার টাকা ভরে এটিএমগুলিতে। এটিএমে তারা নিজেরাও টাকা ভরতে পারে আবার কোনও সংস্থার মাধ্যমে আউটসোর্স করিয়েও ভরতে পারে।
এই মুহূর্তে অনেক এটিএমে নোট না থাকাকে জোগানের সমস্যা বলেই মনে হয়
ক’টা দিন গ্রাহকদের ধৈর্য ধরতে হবে
যে সময় ছুটি থাকে, উৎসব থাকে সেই সময় টাকার দরকার হয়। কিন্তু এই মুহূর্তে কয়েকটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে যে নগদ টাকা দরকার হচ্ছে, সেটা অস্বাভাবিক বলেই আমার মনে হচ্ছে। এই সময় নগদ টাকা কম পড়ার কোনও কারণ নেই। যে কারণেই নগদের দরকার হোক, এটা হয়ত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ধারণার মধ্যে ছিল না, তাই টাকা জোগান দিয়ে রাখতে পারেনি।
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই এবং তাদের কাঁধে গুরুদায়িত্ব রয়েছে। এট একটি স্বায়ত্তশাসনাধীন সংস্থা। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে নগদ জোগান দেওয়া হয়, আবার নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তা রিজার্ভ ব্যাঙ্কে ফিরেও আসে। তাই আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নগদের জোগান নিয়ে এই সমস্যার সঙ্গে কোনও ভাবে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক থাকা সম্ভব নয়।
এই মুহূর্তে অনেক এটিএমে নোট না থাকাকে জোগানের সমস্যা বলেই মনে হয়। নতুন যে সব নোট বেরিয়েছে, হয় সেই সব নোটের উপযুক্ত পরিমাণে জোগান নেই, না হয় কনফিগারেশনের সমস্যা। শোনা যাচ্ছে, ২০০০ টাকার নোট নতুন করে আর ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার মধ্যে আসছে না, সম্প্রতি ২০০ টাকার নোট চালু হয়েছে। তাই কেউ এটিএম থেকে ২০০০ টাকা তুলতে চাইলে সংখ্যার হিসাবে তাঁকে এখন অনেক বেশি নোট তুলতে হবে, অর্থাৎ ৫০০ টাকার নোট হলে ৪টি ও ২০০ টাকার নোট হলে ১০ টি।
এটিএমের ভিতরে টাকার যে সব ক্যাসেট থাকে, তার মাপ নির্ভর করে নোটের মাপের উপরে। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট ক্যাসেটে এক ধরনের নোটই রাখা হয়। প্রতিটি ক্যাসেটের আবার ধারণক্ষমতা সীমিত, অর্থাৎ নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে বেশি সংখ্যায় নোট তাতে রাখা যায় না। তাই যেখানে একটি নোট তুললেই কাজ হয়ে যেত, এখন তার পরিবর্তে একাধিক সংখ্যায় নোট নিতে হচ্ছে, এতে চাপ পড়ছে এটিএমেও। তার জন্যও একটু সমস্যা হবেই। তা ছাড়া ২০০০ টাকার নোটের যে মাপ আর ২০০ টাকার যে মাপ, তা সমান নয়। তাই নতুন মাপের ক্যাসেট না হয়ে থাকলেও সমস্যা হবে। যদি নতুন মাপের ক্যাসেট না হয়ে থাকে তা হলে যতদিন তা না হচ্ছে এবং সেই মাপের ক্যাসেট দিয়ে এটিএমগুলি নতুন করে ক্যালিব্রেট করা হচ্ছে, ততদিন এই সমস্যা থেকেই যাবে।
ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এই মুহূর্তে নগদ জোগানের সমস্যা নেই, সমস্যাটি এটিএম-কেন্দ্রিক। তাই ব্যাঙ্কগুলি যতদিন না এটিএম মেশিনগুলি রি-ক্যালিব্রেট করছে, ততদিন এই সমস্যা মেনে নিতেই হবে। তবে আবার বলছি, আমার ধারনা, এই সমস্যা কিছুটা প্রযুক্তিগত এবং সাময়িক। শুনছি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নোট মুদ্রণ প্রাইভেট লিমিটেড, যার একটি শাখা শালবনিতেও আছে, তারা পুরোদমে নোট ছাপানো শুরুও করে দিয়েছে। তাই ক’টা দিন গ্রাহকদের ধৈর্য ধরতে হবে।

