রণজিৎ সিনহা ও এপি সিংয়ের কথা মনে পড়ে: সংস্থার আধিকারিকদের বিরুদ্ধে মামলা সিবিআইয়ে নতুন নয়
সিবিআই বনাম সিবিআই মামলার তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইর হাতে থাকা অনুচিত, দায়িত্ব নিক সুপ্রিম কোর্ট
- Total Shares
টুইটার জুড়ে ২৩ অক্টোবর বেশ মজাই হল। ওইদিন, দেশের অন্যতম তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই নিজেদের সদরদপ্তরে তল্লাশি চালিয়ে এক আধিকারিককে গ্রেপ্তার করে ছিল।
সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা সেদিন সংস্থার ডেপুটি এসপি দেবেন্দর কুমারকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। হায়দরাবাদের মাংস-রপ্তানিকারক সংস্থার কর্ণধার মঈন কুরেশির বিরুদ্ধে টাকা তছরুপের মামলা চলছে। সেই মামলাটির জন্য গঠিত সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারি দলের নেতৃত্বে ছিলেন কুমার।
#CBIVsCBI will be like.. pic.twitter.com/iC5NmJvrUa
— Happucrat (@AreeDada__) October 22, 2018
এক ঘটনার ফলে সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ আধিকারিকের ব্যক্তিগত দ্বন্ধ প্রকাশ্যে চলে আসেন। এই দুই আধিকারিক হলেন সিবিআই অধিকর্তা অলোক ভর্মা ও বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানা। এই দুই আধিকারিকই একে ওপরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন।
অবশ্য এর আগেও সিবিআই ওই সংস্থার আধিকারিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়েছে।
২০১৭ সালে সিবিআই ওই সংস্থার প্রাক্তন অধিকর্তা রণজিৎ সিনহার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ছিল। সিনহার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি নাকি নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে কয়লা বন্টন মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে ছিলেন।
সেই বছরেই সিবিআই সংস্থার আরও এক প্রাক্তন অধিকর্তা এপি সিং ও তাঁর বাল্যকালের বন্ধু মঈন কুরেশির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এই যুগলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের 'খুশি' রাখতে তাঁরা নাকি তাঁদের প্রভাব খাটিয়ে অনেকের কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়ে ছিলেন।
কয়লা বন্টন মামলায় প্রাক্তন সিবিআই অধিকর্তা রণজিৎ সিনহার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
নিজেদের নথি বা নিজেদের সদরদপ্তরে তল্লাশি না চালিযে এই ধরণের অভিযোগের তদন্ত প্রক্রিয়া কোনও ভাবেই সম্পন্ন করা যায় না।
যদিও, এই দুটি মামলার তদন্ত খুব বেশি অগ্রসর হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট কয়লা বন্টন মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করায়, এ বছরের জানুয়ারিতে সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দল শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছিল যে সিনহার মামলায় তারা অনেকটা এগোতে পেরেছে।
দুর্নীতির মামলার তদন্তকারি আধিকারিকরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেরা কতটা লাভবান হয়েছেন তা জানতে এখনও ঢের দেরি আছে।
তাই তো বর্তমান পরিস্থিতি দেখে কেউই অবাক হচ্ছেন না। অবাক যদি হতেই হয় তাহলে একটি বিষয়ে হচ্ছে - দেশের অন্যতম তদন্তকারী সংস্থা যারা দেশের বড়সড় দুর্নীতির মামলাগুলো তদন্ত করে থাকে সেই সংস্থার অন্দরমহলেই দুর্নীতির অন্ত নেই।
২০১৭ সালের মামলাগুলোতে যে যে গোলযোগগুলো হয়েছিল সেই গোলযোগুলোই এখন আগ্নেয়গিরি রূপে বিস্ফোরিত হয়েছে।
২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে সিবিআই অধিকর্তা অলোক ভর্মা কেন্দ্রীয় ভিজিলেন্স কমিটিকে একটি গোপন চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে ভার্মা দাবি করেছিলেন যে রাকেশ আস্থানা দুর্নীতি পরায়ণ। তাই তাকে যেন সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা না করা হয়। ভার্মার অভিযোগ, সিবিআইয়ের সদর দপ্তরে একটি ডায়রির হদিস পাওয়া গিয়েছে যেখান থেকে জানা যাচ্ছে স্টার্লিং বায়োটেক মামলায় আস্থানা ৩.৮৮ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। তবে কোনও রকম তদন্ত না হয়েই আস্থানাকে বিশেষ অধিকর্তা পদে বসানো হয়েছিল।
এর পর থেকে সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ আধিকারিকের দ্বন্ধ বৃদ্ধি পেল। আস্থানাও ভর্মার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন। আস্থানার অনেকগুলো অভিযোগের মধ্যে দুটি খুবই গুরত্বপূর্ন ছিল। একটি অভিযোগে বলা হয়েছিল যে লালু প্রসাদ যাদবের বিরুদ্ধে মামলায় আস্থানা যথাপোযুক্ত তদন্ত করেননি। আর একটি অভিযোগে বলা হয়েছিল যে ব্যবসায়ী সতীশ সানার কাছ থেকে ২ কোটি টাকা ঘুষ খেয়ে তিনি সেই ব্যবসায়ীর গ্রেপ্তারি প্রক্রিয়া বিলম্বিত করেছিলেন।
এই পুরো সার্কাসটি কিন্তু সিবিআইয়ের সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যা দেশের জনসাধারণের পয়সায় চলে।
মানুষের ধারণা ছিল যে সিবিআই সরকারের অঙ্গুলিহেলনে চলে। রাজনৈতিক নেতাদের বা তাঁদের ঘনিষ্ঠদের ক্লিনচিট দেওয়ার জন্য কিংবা বিরোধীদের 'শায়েস্তা' করার জন্য সিবিআইকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তদন্ত ঠিক মতো না করার জন্য আদালতের ভৎসনা শুনতে হয়েছে এই সংস্থাটিকে। সে বিষয় না হয় পরে আলোচনা করা যাবে।
এখন অন্য একটি প্রশ্ন বেশি গুরুত্বপূর্ণ: একটি তদন্তকারী সংস্থার হাতে কি সেই সংস্থার আধিকারীদের দুর্নীতির মামলার দায়িত্ব দেওয়া উচিত হবে?
এবার সিবিআই বনাম সিবিআই: নিজেদের সদরদপ্তরে তল্লাশি চালিয়ে এক আধিকারিককে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দারা [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
যেভাবে ভর্মা-আস্থানা নাটক প্রকাশ্যে এসে পড়েছে তা থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার - শুধুমাত্র সংস্কার নয়, বহিরাগত কোনও সংস্থাকে দিয়ে এবার সিবিআইয়ের আধিকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা উচিত।
কোনও সরকারি সংস্থার আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে প্রাথমিক তদন্তটা কিন্তু সেই সংশ্লিষ্ঠ সরকারি সংস্থাই করে। কিন্তু সিবিআইয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ভিন্ন। এই সংস্থা মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এপি সিং থেকে রণজিৎ সিনহা আবার রাকেশ আস্থানা থেকে অলোক ভর্মা - সংস্থার প্রতিটি আধিকারিকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এখন কিন্তু এই অভিযোগগুলো আর ব্যক্তিগত পর্যায়ের অভিযোগ নয়, এই অভিযোগগুলো কিন্তু এখন গোটা সংস্থাটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের আকার ধারণ করে নিয়েছে। দেশের শীর্ষ তদন্তকারী সংস্থার যদি এই দুরবস্থা হয় তাহলে দেশের সুর্নিটি মামলাগুলোর তদন্তের পরিনাম কী হবে তা সহজেই আন্দাজ করে নেওয়া যায়।
এই মামলাগুলোর নিয়ন্ত্রণ আর সিবিআইয়ের হাতে রাখা ঠিক হবে না।
এই ধরণের অভিযোগও দেশের করদাতাদের প্রাপ্য নয়।
সিবিআইকে যদি বাঁচাতেই হয়, সিবিআইয়ের উপর মানুষের আস্থা যদি ফেরাতেই হয়, তাহলে সেই দায়িত্ব একমাত্র সুপ্রিম কোর্টই নিতে পারে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে