মৌমা ও মনিকাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আদর্শ ডেভিস কাপের লিয়েন্ডার

অলিম্পিকে এখনও টেবিল টেনিসে অধরা, আমি স্বপ্ন পূরণের আশা শুরু করে দিয়েছি

 |  2-minute read |   09-04-2018
  • Total Shares

এই কিছুদিন আগেই লিয়েন্ডার পেজ 'বুড়ো হাড়ে' ভেল্কি দেখিয়েছিলেন। তাঁর ৪৫তম জন্মদিনের মাত্র দু'মাস আগে ৪৩তম ম্যাচটি জিতে নিয়ে ডেভিস কাপের ইতিহাসে সর্বাধিক ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়লেন লিয়েন্ডার। তবে এই পরিসংখ্যান যতই তৃপ্তিদায়ক হোক না কেন তা শুধু রেকর্ড বইতেই সীমাবদ্ধ, বৃহত্তর জীবনে নয়। ৪৫-এর দোরগোড়ায় পৌঁছে হাঁটুর বয়সী ছেলেদের হারানোর কৃতিত্বটা অবশ্য অন্য জায়গায়। কী পরিমাণ পরিশ্রম করলে মধ্য চল্লিশেও এই মানের মানসিক ও শারীরিক সক্ষমতা ধরে রাখা যায়?

তাই তো ডেভিস কাপের লিয়েন্ডার রবিবারের মৌমা ও মনিকাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আদর্শ। কমনওয়েলথ গেমসে মৌমা ও মনিকাও তো অভাবনীয় কাণ্ড ঘটিয়ে বসলেন। গত বারের চ্যাম্পিয়ন তথা এশিয়ার অন্যতম সেরা দল সিঙ্গাপুরকে পরাজিত করে কমনওয়েলথে মহিলাদের টেবিল টেনিসের সোনা পকেটে পুরে নিলেন তাঁরা। মনে রাখবেন, লিয়েন্ডারের মতো মৌমা ও মনিকা শুধুমাত্র প্রতিপক্ষকে হারাননি, তারা তাঁদের বয়সকেও পরাজিত করেছেন।মৌমার বয়েস ৩৪, মনিকার ৩২। তিরিশে পা দেওয়ার পরে কমনওয়েলথে অভিষেক হলো তাঁদের। অথচ প্রথম কমনওয়েলথেই প্রতিযোগিতার সেরা দলকে হারিয়ে মেয়েদের টেবল-টেনিসে ভারতের প্রথম কমনওয়েলথ স্বর্ণপদক জিতে নিলেন তাঁরা। অবিশ্বাস্য ছাড়া এই পারফরম্যান্সকে আর কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন আপনি?

body_040918120311.jpgজয়ের পরে

মৌমার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল গত বছর ফেব্রুয়ারিতে । অল ইন্ডিয়া অয়েল টুর্নামেন্ট খেলতে দেশের নামী-দামি খেলোয়াড়রা তখন চেন্নাইতে। মৌমাও অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং সেই প্রতিযোগিতায় মৌমার খেলা আমাকে যারপরনাই আকৃষ্ট করেছিল। সেই ছেলেবেলা থেকে মৌমাকে দেখছি। দোহা এশিয়াডে ভারতীয় দলের কোচ ছিলাম আমি। সেই দলে মৌমাও ছিলেন। এর পর গত ১৫ বছর ধরে জাতীয় স্তরের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে কখনও আমার দলে, কখনও বা প্রতিপক্ষ দলে মৌমাকে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। বিশ্বাস করুন, গত বছরের ফেব্রুয়ারির মৌমাই আমার দেখা সেরা মৌমা।

অনবদ্য ফিটনেস।অনবদ্য স্ট্রেংথ। অনবদ্য স্ট্যামিনা। সবচেয়ে বড় কথা বিদেশি কোচের হাতে পড়ে খেলায় পরিণতি বোধ। মৌমার খেলা দেখে মনে হয়েছিল জাতীয় দোলে ফিরে এলে এ মেয়ে ভালো কিছু করবেই। মৌমাকে বলেও ছিলাম সে কথা। কমনওয়েলথে সুযোগ পাওয়ার পরে আশায় বুক বেঁধেছিলাম। যাক, মৌমা তাহলে স্বপ্ন পূরণ করতে পারল!

ফাইনালের জয় কিন্তু সহজেই আসেনি। প্রথম ম্যাচে তিয়ানওয়েই ফেংকে হারিয়ে অঘটন ঘটালেন মনিকা বাত্রা। কিন্তু দ্বিতীয ম্যাচে মধুরিকা পটকর হেরে যাওয়ায় চাপে পড়ে যায় মৌমা - মধুরীকর জুটি। কিন্তু তাঁরা কোনও সহজেই ম্যাচটি জিতলেন। একই সঙ্গে সুবিধা করে দিলেন চতুর্থ ম্যাচ খেলতে চলা মনিকাকে। লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে সিঙ্গাপুরকে চতুর্থ ম্যাচ জিততেই হত। কিন্তু তা আর হলো কই? পরপর তিনটে গেম জিতে ম্যাচ জিতে নিলেন মনিকা। একই সঙ্গে ৫ ম্যাচের ফাইনাল ৩-১ ব্যবধানে জিতে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়ে নিলেন মৌমা, মনিকা ও মধুরিকা।

লিয়েন্ডার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন তাঁদের। কিন্তু এবার এই তিন 'ম' তো গোটা দেশের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠল। গোটা জীবনে আমি প্রচুর ভারতীয়কে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে সেরা হতে দেখেছি। বাকি ছিল কমনওয়েলথ, তাও হয়ে গেল। কিন্তু অলিম্পিক তো এখনও ভারতীয় টেবিল টেনিসের কাছে অধরা।

আমি কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণেরও আশা করতে শুরু করে দিয়েছি।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Diptimoy Mukherjee Diptimoy Mukherjee

Former state player and national coach. A bachelor, because table tennis is always his first love.

Comment