ডিজিটাল যুগে সেলিব্রিটিরা বেলুনের মতো, দ্রুত উড়ে যান, তারপরে পড়েও যান

ডিজিটাল যুগে সেকেন্ডেরও ভগ্নাংশে শুধুমাত্র টুইট করেই এক একজন তারকা হয়ে যাচ্ছেন

 |  3-minute read |   20-03-2018
  • Total Shares

অ্যান্ডি ওয়ারহোল একবার মজা করে বলেছিলেন, পৃথিবীর প্রতিটি লোকই একদিন ১৫ মিনিটের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠবেন।

কথাটি নেহাতই মজা করে বলা। কিন্তু ডিজিটাল যুগে যে দ্রুততার সঙ্গে লোকে খ্যাতনামা হয়ে উঠছেন তা আগে কোনও দিন হয়নি। প্রাচীন কাল থেকেই লোকেরা সমাজকে নেতৃত্ব দিতে চাইতেন, বর্তমানেও আপনি দেখবেন যে আদিবাসীদের মধ্যে এই প্রথা চালু রয়েছে যেখানে বয়ঃজ্যেষ্ঠদের মতামতই শেষ কথা।

প্রতিটি ঐতিহাসিক কালেরই নিজস্ব কয়েকজন স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। বিভিন্ন সম্রাট বা রাজাদের নিজস্ব পরমর্শদাতা ছিল যাদের উপর এই সম্রাট বা রাজারা ভীষণ নির্ভরশীল ছিলেন।  চাণক্য, কালিদাস, আর্যভট্ট, তানসেন, বীরবল, মির্জা গলিব, রাজা রবি বর্মা, স্বামী বিবেকানন্দ এঁদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

পৌরাণিক গল্পগুলোতে আমরা এমন কয়েকটি চরিত্রের উল্লেখ পাই, যাঁরা আজ জনমানসে ঈশ্বরের জায়গায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন।

উন্নতমানের প্রযুক্তি ও সংবাদমাধ্যমের বাড়বাড়ন্তের যুগে শিল্পী-সাহিত্যিক, গায়ক-গায়িকা এমনকি রাজনৈতিক নেতানেত্রীরাও সেলিব্রিটি হয়ে উঠেছেন। সিনেমা ও বেতার সম্প্রচারের যুগে এই ধরণের বিশাল বিশাল চরিত্রগুলো আমাদের হৃদয়ে জায়গায় করে নিচ্ছে। তাঁরা খুব দ্রুত তারকা হয়ে উঠছেন।

অনেক আগে থেকেই সংবাদপত্র মানুষের জীবন ও জীবনের ঘটনাবলি নিয়ে খবর করে আসছে। আমরা অনেকেই মনে করি যে পেজ থ্রি সংস্কৃতি এ যুগে আমদানি হয়েছে। ধারণাটা একবারেই ভুল। মানুষ বরাবরই প্রচারের আলোয় থাকতে পছন্দ করে। 

body_032018045023.jpgটুইটারে যার ফলওযার বেশি তিনি তত বড় সেলিব্রিটি

মানুষের এই প্রচারের আলোয় থাকার ইচ্ছে পূরণের মাধ্যম হয়ে উঠেছিল গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এবং হু'স ইজ হু মতো বইগুলো। এমনকি নাইট উপাধি বা পদ্মশ্রীর মতো জাতীয় সম্মান কিংবা অস্কার ও গ্র্যামির মতো পুরস্কারগুলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে গেছে। টেলিভিশন ও রেডিয়োর জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনেও একই মানসিকতা কাজ করছে। বর্তমানে রিয়েলিটি শোগুলো নতুন তারকা তৈরি করবার মঞ্চ হয়ে উঠছে।

বিগ বসের আদলে তৈরি বিগ ব্রাদার অনুষ্ঠানটি শিল্পা শেট্টিকে যতটা জনপ্রিয় করে তুলেছে, শুধুমাত্র ছবিতে অভিনয় করে শিল্পা শেট্টির পক্ষে এতটা জনপ্রিয় হওয়া সম্ভব হত না।

একই ভাবে অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা গায়ক-গায়িকারাও মাত্র এক দুটো পুরষ্কার লাভ করেই রাতারাতি তারকা হয়ে উঠেছেন।

ডিজিটাল যুগে সেকেন্ডেরও ভগ্নাংশে শুধুমাত্র টুইট করেই এক একজন তারকা বনে যাচ্ছেন।

কিছু লোক তো এখন কোনও কারণ ছাড়াই সেলিব্রিটি। কার্দেসিয়ান ভগ্নিদ্বয় তো এর জ্বলন্ত উদাহরণ। সোশ্যাল মিডিয়া এখন ঠিক করে দিচ্ছে কে সেলিব্রিটি আর কে সেলিব্রিটি নন। টুইটারে যাঁর ফলোয়ার যত বেশি তিনি তত বড় সেলিব্রিটি।

body1_032018045102.jpgবর্তমানের সেলিব্রিটিরা তাই টেকসই নয়

এই মুহূর্তে সেলিব্রিটি তৈরি হওয়াটাও একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। ঘৃণা বা ভালোবাসা সহযোগে তৈরি হন এই সব সেলিব্রিটিরা। লেখক অ্যালেক্স ক্রোতোস্কির মতে, "এই মুহূর্তে স্মার্টফোন ও ওয়াইফাই হাতে জনগণই শ্রেষ্ঠ বিচারক। তাই তো বর্তমান সেলিব্রিটিরা খুব বিপজ্জনক।"

সমাজ বিজ্ঞানী পি ডেভিড মার্শালের মতে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাটাছেঁড়ার প্রবণতা গত ১৫ বছর ধরে চালু রয়েছে। সম্প্রতি শ্রীদেবীর মৃত্যুর পরেও একই ঘটনা ঘটেছে।সংবাদমাধ্যম বা নিছকই একটা টুইট বা ফেসবুক পোস্ট আগুনে ঘৃতাহুতি দিতে পারে। তারকারা এই ইন্ধন জোগাতে সিদ্ধহস্ত। মালয়লম অভিনেত্রী প্রিয়া প্রকাশ ভ্যারিয়ারের একটি চোখ মারার ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় তুলেছিল।

সংবাদমাধ্যম সেলিব্রিটিদের উপর নির্ভরশীল। উল্টোদিকে সংবাদমাধ্যমই সেলিব্রিটিদের ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তারকা তৈরি করে দেয়। আমরা এখন এমন একটি ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছি যেখানে শুধুমাত্র নাম বেঁচেই পয়সা রোজগার করা যায়।

সরকার যখন আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়ের উপর হস্তক্ষেপ করে আমরা ক্ষোভে ফেটে পড়ি, কিন্তু সেলিব্রিটিরা যখন প্রচারের লোভে নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনকে সংবাদ মাধ্যমে উজাড় করে দেন তখন কেউই প্রতিবাদ জানাই না। বিরাট কোহলি আর অনুষ্কা শর্মা অবশ্য খুব পরিকল্পিত ভাবে বিবাহ অনুষ্ঠানের খবরের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে যাঁরা সেলিব্রিটি হতে চান, তাঁরা মাত্র দু'মিনিটের জন্য সেলিব্রিটি হয়ে উঠতে কখনই পিছপা হন না। কেউই ভেবে দেখেন না যে সত্যিকারের সেলিব্রিটি হয়ে থাকার ঝক্কি অনেক। তাই তো আধুনিক যুগের সেলিব্রিটিদের সঙ্গে বেলুনের তুলনাটা বাঞ্ছনীয়। তারা দ্রুত আকাশে উড়ে যান আবার ঠিক ততটাই দ্রুততার সঙ্গে মাটিতে খেয়ে পড়ে।

বর্তমানের সেলিব্রিটিরা দীর্ঘদিন সেলিব্রিটি থাকতে পারেন না।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

AMIT KHANNA AMIT KHANNA @amitkhanna

Over 45 years.Films,TV, Music,Radio,Theatre,Print,Digital. The art & science of Media & Entertainment

Comment