কর্কট রোগের সচেতনতা এবার পুজোর থিমে

গুটকা, পান, সিগারেট, বিড়ি দিয়ে মণ্ডপটিকে সাজানো হয়েছে

 |  3-minute read |   27-09-2018
  • Total Shares

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর অন্তর্ভুক্ত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ক্যান্সার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ (এনআইসিপিআর) রিপোর্ট অনুসারে আমাদের দেশে প্রতি আট মিনিটে একজন মহিলা সারভাইক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ ছাড়াও ভারতে যে সব মহিলার স্তনক্যান্সার ধরা পড়ে তাঁদের প্রতি দু'জনের মধ্যে একজন মহিলা মারা যান। প্রত্যেকদিন তামাক সেবনের ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মোটামুটি ২,৫০০ জন। পাঁচজন ধূমপায়ী পুরুষের মধ্যে একজন পুরুষ মারা যান এবং যে সব মহিলা ধূমপান করেন এমন ২০ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়।

সারা বিশ্বে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গোটা বিশ্ব জুড়ে রোগটি একটা মহামারীর আকার নিয়েছে। তাই সর্বত্র চলছে কর্কট রোগের বিরুদ্ধে সচেতনতা।

body2_092718041759.jpgপ্যান্ডেলটিকে সাজিয়ে তুলেছেন সব্যসাচী পাল এবং তপন মাজি (নিজস্ব চিত্র)

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সচেতনতার লড়াইয়ে একবার সামিল হয়েছে দুর্গাপুজো। বাঘাযতীন বি অ্যান্ড সি ব্লকের দুর্গোৎসব কমিটির ৬৮ তম বর্ষে এবার কর্কট রোগের ব্যাপারে সচেতনতাই উঠে এসেছে পুজোর থিমে। এখানে থিম হল- 'কর্কট ক্রান্তি' এবং বার্তা হল "ক্যান্সার হ্যাজ অ্যানসার"। পুজোর মাধ্যমে জন সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে এখানে।

body1_092718041702.jpgগুটকা, পান, সিগারেট, বিড়ি প্রভৃতি নেশার সরঞ্জাম ও কাঁকড়ার প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়েছে (নিজস্ব চিত্র)

বাঘাযতীন বি অ্যান্ড সি ব্লকের দুর্গোৎসব কমিটি যখন এই বিষয় বেঙ্গল অঙ্কোলজি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তখন আমরা তাঁদের সাধু উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই এবং পুজোর থিম তৈরি ও সাজসজ্জার ক্ষেত্রে তাঁদের সাহায্য করি। যদিও বেঙ্গল অঙ্কোলজি ফাউন্ডেশন এই ধরণের সচেতনতার কাজ অনেকদিন ধরে চলে আসছে। আমরা মনে হয় যে সাধারণ মানুষকে যদি বোঝাতে হয় যে ক্যান্সার মানেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয় তাহলে দুর্গা পুজো হল আদর্শ স্থান কারণ দুর্গাপুজো এমনই একটা উৎসব যার মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষকে সচেতন করা সম্ভব যে ঠিক সময় ধরা পড়লে এবং ঠিক মতো চিকিৎসা করানো হলে রোগটি  সম্পূর্ণ সেরে যেতে পারে। ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তি বহু বছর বেঁচেও থাকেন। ক্যান্সারের নাম শুনলে আমরা সবাই খুব ভয় পেয়ে যাই। সময় থাকতে যদি এই রোগীটি ধরা পড়ে তাহলে রোগী সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ হয়ে ওঠেন সেই বার্তাই রয়েছে প্যান্ডেল সজ্জার আনাচেকানাচে।

body3_092718041822.jpgঅসুর বধ না করে মা দুর্গা এখানে একটি কাঁকড়াকে বধ করছেন (নিজস্ব চিত্র)

প্যান্ডেলটিকে সাজিয়ে তুলেছেন সব্যসাচী পাল এবং তপন মাজি। মণ্ডপটিকে সাজাতে দড়ি, বাঁশ এবং লোহা ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও গুটকা, পান, সিগারেট, বিড়ি প্রভৃতি নেশার সরঞ্জাম ও কাঁকড়ার প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়েছে। মণ্ডপে থাকছে প্ল্যাকার্ড, হোর্ডিং, বিলবোর্ড প্রভৃতি। এই মণ্ডপে দর্শনার্থীদের চোখে পড়বে একটা অদ্ভুত জিনিস: অসুর বধ না করে মা দুর্গা এখানে একটি কাঁকড়াকে বধ করছেন। এছাড়াও এই মণ্ডপে দর্শনার্থীদের হ্যান্ডবিল বিলি করা হবে যেখানে রোগটি এবং তার প্রতিকার সম্বন্ধে খুঁটিনাটি লেখা থাকবে।

চলতি বছরের ১৫ই আগস্ট থেকেই সচেতনতা প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেদিন একটি মিছিলও আয়োজন করা হয় যেখানে বহু মানুষ আমাদের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে মিছিলে হাঁটেন। যদিও দুর্গাপুজো আনন্দের সময় বলে অনেককেই হয়তো এই সময় ক্যান্সারের মতো মারণ রোগের সম্বন্ধে খুব একটা কিছু শুনতে চাইবেন না, তবুও আমার মনে হয় আমরা সবাই যদি বিভিন্ন মাধ্যমে সমাজকে সচেতন করতে পারি তা হলে রোগটিকে অনেকখানি ঠেকানো সম্ভব হবে। পুজোয় যেমন আমরা সবাই আনন্দ করব তেমনই কঠিন বাস্তবকে একেবারে ভুলে গেলে চলবে না।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

DR. GAUTAM MUKHOPADHYAY DR. GAUTAM MUKHOPADHYAY

Surgical Oncologist

Comment