কানে ব্যথা ও পুঁজ হলে বাড়িতে পড়ে থাকা ড্রপ ব্যবহার করা উচিত নয়

অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড জাতীয় ড্রপ কানের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে

 |  4-minute read |   06-08-2018
  • Total Shares

বর্ষাকালে কানের হরেকরকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। বর্ষাকালে ঠান্ডা হাওয়া এবং বৃষ্টির জল ঢুকে কানের সংক্রমণ অনেক গুণ বেড়ে যায়। আর্দ্র জলবায়ুর কারণে কানে সংক্রমণ হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রেও এই সময় নানা সমস্যা দেখা দেয়।

সেই সব সমস্যা নিয়েই আলোচনা করব আজ।

কানে ব্যথা: নানা কারণে কানে ব্যথা হতে পারে। বর্ষাকালে কানে ব্যথার প্রধান কারণ কানে ছত্রাক বা ফাঙ্গাসের আক্রমণ, স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া এরা বংশবৃদ্ধি করে। অ্যাপারজিলাস নাইগার ও ক্যানডিড অ্যালবিকানস প্রধানত এ জন্য দায়ী। সংক্রমনটি কর্ণকুহর জুড়ে ছড়ায়। এর ফলে কান বন্ধ হয়ে যায় এবং কানে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। এ ছাড়াও কান চুলকায়। তাই এ ধরণের কোনও সমস্যার সম্মুখীন হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এই ধরণের সমস্যা দূরে রাখতে সবসময় কান পরিষ্কার রাখুন এবং কোনও ভাবে কানে জল ঢুকে গেলে কান পরিষ্কার করে ফেলুন। যদি তাতেও সমস্যা থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

body1_080618020816.jpgকানে ব্যথা বা পুঁজ হলে যে কোনও ইয়ার-ড্রপ ব্যবহার করা উচিত নয়

আমার কাছে এমন বহু রোগী আসেন যাঁরা কানে ব্যথা হলে দোকান থেকে যে কোনও কানের একটা ড্রপ কিনে সেটা ব্যবহার করেন। এটা কোনও কাজের কথা নয়, এতে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হতে পারে। দোকানে কানে দেওয়ার জন্য নানা রকম অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড জাতীয় ড্রপ পাওয়া যায় এবং সাধারণ মানুষ সেই সব ড্রপ ব্যবহার করেন। এর থেকেও ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে বা কানে কোনও সংক্রমণ থাকলে তা আরও বেড়ে যেতে পারে। ফলে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে যত্রতত্র কানের ড্রপ ব্যবহার করলে বিপত্তি হতে পারে। অনেক কানে ব্যথা বা পুঁজ হলে বাড়িতে থেকে যাওয়া পুরোনো কানের ড্রপ ব্যবহার করেন। এটিও একটা বদ অভ্যাস। কানের যন্ত্রণার আসল কারণটা না জেনে কখনও কোনও ড্রপ ব্যবহার করা উচিত নয়।

ছত্রাক ছাড়াও বর্ষাকালে কানের যন্ত্রণার অন্যান্য কারণ থাকে যেমন কানে ঠান্ডা লাগা, কানে ফোঁড়া এবং কানে ময়লা জমে যাওয়া। বর্ষায় বৃষ্টিতে ভিজলে হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে জল পড়ার সঙ্গে কানেও ব্যথা শুরু হয়। সঙ্গে সামান্য জ্বরও হতে পারে।

কানে ময়লা জমে থাকলে এবং তা নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ফোঁড়া হতে পারে। কানে ময়লা জমে থাকলে সেরুক্লিন অথবা ওয়াক্সিল জাতীয় কানের ড্রপ চার ফোঁটা করে তিন থেকে চারবার কানে দিলে উপকার পাওয়া যায়। এর ফলে ময়লা নরম হয়ে যায় এবং তা সহজেই পরিষ্কার করে ফেলা যায়। তবে আমি আবার বলব সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

body3_080618021016.jpgকানের সমস্যার থেকে মাথাও ঘুরতে পারে

কানে দম ধরা: বর্ষাকালে কানে ঠান্ডা লাগে অহরহ যার ফলে কান বন্ধ হয়ে যায়। কানের ভেতরে শব্দ হয় এবং ব্যথাও হয়। শুনতেও অসুবিধা হয়। অন্য সময়ও এই অসুবিধাটা হতে পারে তবে বর্ষাকালে এর প্রবণতাটা একটু বেড়ে যায়। আমাদের কানের সঙ্গে নাকের যে সংযোগ নালিটি আছে তার নাম হল ইউস্টেশিয়ান টিউব। ঠান্ডা লাগলে জল বা সর্দি জমে এটা বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যাটা ফেলে না রেখে দ্রুত চিকিৎসা করেন না হলে এই জল বা সর্দি কানের পর্দা ফুটো করে দিতে পারে। এর ফলে কান থেকে পুঁজ বা জলও গড়াতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আগে খুব অসুবিধা হলে নাক এবং মুখ বন্ধ করে ঢোক জেলার চেষ্টা করুন, তাতে সাময়িক উপকার হতে পারে। এটা এই অসুখের এক ধরণের ব্যায়াম।

কানে জল বা পুঁজ: এটা একটা অতি পরিচিত সমস্যা। বর্ষাকালে এটা বেশি হয়। দেখা যায় কারো ও কারও সারা বছর হয়ত কান ভালো আছে কিন্তু যত গন্ডগোল হয় এই সময়। প্রধানত ঠান্ডা লেগে এই অসুবিধার সৃষ্টি হয়, সে কথা আগেই বলেছি। এ ছাড়াও কানে নোংরা জল প্রবেশ করলে, নাক ও বুকে সর্দি লেগে থাকলে, বারে বারে টনসিলাইটিস বা ফ্যারিনজাইটিস হলে কিংবা হঠাৎ করে কোনও কারণে কানের পর্দা ফেটে গেলেও কানে জল দেখা দিতে পারে। এর ফলে ধীরে ধীরে পুঁজ তৈরি হয়। নাক, গলা, দাঁত, সাইনাস বা বুক যে কোনও স্থানে সংক্রমণ হতে পারে। এ ছাড়াও যথেষ্ট পুষ্টিকর না খেলে, নোংরা পরিবেশে বসবাস করলে, কোনও রকম অ্যালার্জি এবং নোংরা জলে দীর্ঘদিন স্নান করলে এই সমস্যা হতে পারে।

body2_080618020931.jpgশিশুদের ক্ষেত্রেও বর্ষাকালে কানের নানা সমস্যা দেখা দেয়

যে সব শিশু জন্মাবার পর থেকেই নানা অসুখে ভোগে তাদের মধ্যে এই অসুখটা বেশি হয়। অসাবধানে কানে দুধ ঢুকে গেলেও এই সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘদিন কান থেকে পুঁজ পড়া মানে কানের পর্দা ফুটো হয়ে গেছে কী না সেটা দেখতে হবে। অনেকেই ইটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামান না। এর ফলে বিভিন্ন সমস্যা খাড়া হয় যেমন কানে কম শোনা, মাথা ঘোরানো, মাথায় যন্ত্রণা, হাড়ের অসুখ কিংবা স্নায়ুর কোনও সমস্যা। এমনকি এর থেকে জীবন সংশয় হতে পারে।

তাই বেশি সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারও করতে হতে পারে। তাই ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি নিজেকেও সচেতন হতে হবে এবং সতর্ক হতে হবে। ঠান্ডা লাগাবেন না, বাইরের থেকে এসেই ফ্রিজের ঠান্ডা জল খাবেন না, জমা বা নোংরা জলে স্নান করবেন না, কোনও জলাশয় স্নান করার সময় কানে কিছুটা তুলো ঢুকিয়ে স্নান করুন, দিনে দু' থেকে তিন বার তুলো দিয়ে কান পরিষ্কার করুন তবে বেশি খোঁচাখুঁচি করতে যাবেন না। কানের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন সেই সমস্যা ফেলে রাখবেন না।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

DR. AMITAVA BHATTACHARYYA DR. AMITAVA BHATTACHARYYA

EAR NOSE THROAT (ENT) SPECIALIST

Comment