স্কুলে ভর্তিতে লটারির বন্ধ হলে পরীক্ষার ফল ভালো হবে এবং স্কুলের শিক্ষার মানও বাড়বে
১৯৯৫ সাল থেকে সরকারি ও সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন স্কুলে লটারির মাধ্যমে ভর্তি চালু হয়
- Total Shares
সরকারি ও সরকার অনুমোদিত সবকটি স্কুলে লটারির মাধ্যমে ভর্তি তুলে দেওয়ার পরিকল্পনার করছে রাজ্য সরকার। বিধানসভার চলতি অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে এমন একটি প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যদিও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি।
শিক্ষকমহলের একাংশের মতে সরকারি স্কুলের ভর্তিতে লটারি ব্যবস্থা তুলে দিলে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। কারণ শিক্ষার অধিকার বিষয়ক আইনে পরিষ্কার বলা রয়েছে যে ভর্তির সময় প্রবেশিকা নেওয়া যাবে না।
১৯৯৫ সাল থেকে সরকারি ও সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন স্কুলে লটারির মাধ্যমে ভর্তি চালু হয়
তবে তর্ক-বিতর্ক যাই থাকুক না কেন শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি যে স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে লটারি ব্যবস্থা কোনও কাজের কথা নয়। আমার মনে হয় লটারি করে ভর্তির কারণে বহু নাম করা স্কুলের মান দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। যেহেতু লটারিতে ভর্তির পুরো ব্যাপারটাই ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিতে হয় তাই দেখা যাচ্ছে যে অনেক সময় বহু মেধাবী পড়ুয়ার হয়তো নামই উঠল না এবং সে যতগুলো ভালো স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন পত্র জমা দিয়েছিল দুর্ভাগ্যবশত তার একটিতেও নাম উঠল না লটারিতে।
তখন অগত্যা তাকে একটি বেসরকারি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে বহু টাকা খরচ করে ভর্তি হতে হচ্ছে। অনেক সময় অভিভাবকদের চূড়ান্ত আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়েও সন্তানকে দামী ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করতে হয়।
১৯৯৫ সাল থেকে সরকারি ও সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন স্কুলে লটারির মাধ্যমে ভর্তি চালু হয়। লটারি ব্যবস্থার কারণে কলকাতার স্কুলগুলো থেকে সাম্প্রতিক কালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কোনও স্কুলই প্রথম দশের মধ্যে বেশির ভাগ সময় স্থান অধিকার করতে পারে না।
আগে চতুর্থ শ্রেণীতে বিত্তি পরীক্ষার চল ছিল
আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন চতুর্থ শ্রেণীতে বিত্তি পরীক্ষার চল ছিল, ঠিক তেমন একটি বিত্তি পরীক্ষার সাহায্যে একটি মেধা তালিকা বানিয়ে সেই মেধা তালিকার ভিত্তিতে সকরারি স্কুলগুলিতে ভর্তির পরিকল্পনা করা যেতে পারে। তারপর কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের পছন্দমতো স্কুলে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে আর একটা সুবিধা যেটা হবে সেটা হল একটি স্কুলে তখন ভালো পড়ুয়াদের পাশাপাশি দুর্বল পড়ুয়ারাও ভর্তির সুযোগ পাবে এর ফলে সেই স্কুলের শিক্ষার মানও উন্নত হবে।
আমার মনে হয় ভর্তির ক্ষেত্রে আগে যেমন চতুর্থ শ্রেণীর পর একটা বিত্তি পরীক্ষা হতো ঠিক তেমন ভাবেই ভর্তির যদি প্রবেশিকা নেওয়া হয় তাহলে ভর্তির বিষয়টা অনেকটা স্বচ্ছতা পাবে।
সরকারি স্কুলের ভর্তিতে লটারি ব্যবস্থা তুলে দিলে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে
একটি স্কুলের মোট আসনের মধ্যে অসংরক্ষিত আসনের সংখ্যা হল ২২ শতাংশ তফসিলি জাতি, ৬ শতাংশ তফসিলি উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী-এ র ক্ষেত্রে সংখ্যাটা হল ১০ শতাংশ এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী-বি- র ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ ও প্রতিবন্ধী কোটার জন্য বরাদ্দ রয়েছে তিন শতাংশ।
এই ব্যবস্থা উঠে গেলে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় যেমন একটা আমল পরিবর্তন ঘটবে তেমনই অন্যান্য জেলাগুলোর মতো কলকাতার সরকারি স্কুলেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলে হতে শুরু করবে বলেই আমার আশা।
আর এর ফলে যেসব অভিভাবকদের ঘটিবাটি বিক্রি করেও নিজেদের সন্তানদের বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করতে হতো যেখানে লটারি সিস্টেম নেই সেসব মেধাবী ছাত্রছাত্রীরাও আবার সরকারি স্কুল মুখী হবে।

