পাশফেল ফিরলেও গতে বাঁধা শিক্ষা থেকে বেরিয়ে মূল্যায়নে বেশ জোর দিতে হবে
পাশফেল প্রথা চালু হলে স্বাভাবিকভাবেই পড়ুয়ারা পড়াশোনাকে আরও বেশি গুরুত্ব দেবে
- Total Shares
সবার জন্য সমান শিক্ষার অধিকার দিতে হবে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে পাশফেল নিয়ে রাজ্যসভা একটি সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পর রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা করেছেন। রাজ্য সরকার যে পাশফেল প্রথা ফিরিয়ে আনতে চাইছে তাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক রয়েছে সরকারি ও প্রশাসনিক বিভিন্ন স্তরে।
জানান হয়েছে যে পাশফেলের পাশাপাশি পড়ুয়াদের জন্য একটি বিজ্ঞানসম্মত মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি এবার চালু করতে চায় শিক্ষা দপ্তর। অনেককে আবার পাশফেল না থাকলেও মূল্যায়নের ব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন। এই প্রথা ফিরিয়ে আনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা।
২০০৯ সাল থেকে পাশফেল প্রথা ধীরে ধীরে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমার মতে স্কুলগুলোতে পাশফেলের প্রথা ফিরিয়ে নিয়ে আসা উচিত। যদিও শিক্ষকমহলের একাংশের অনেককে আবার মনে করছেন পাশফেল না থাকলেও একটা মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
ছাত্র মূল্যায়নে অনেক বেশি জোর দিতে হবে
পাশফেল প্রথা চালু হলে স্বাভাবিকভাবেই পড়ুয়ারা পড়াশোনাকে আরও বেশি গুরুত্ব দেবে। শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নয় অভিভাবক এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তাঁদের দায়িত্বের প্রতি অনেক বেশি সচেতন হবেন।
পেডাগগিতে 'লার্নিং আউটকাম' বলে একটা কথা আছে। একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকা যিনি কোনও একটি বিষয় শিক্ষাদান করেন তিনি সেই বিষয়টি পড়ানোর পর পরীক্ষার মাধ্যমে পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করেন, দেখার জন্য যে ছাত্রছাত্রীরা ঠিক কী শিখলো। কিন্তু দেখা গেল হয়তো সেই পরীক্ষায় কোনও ছাত্র বা ছাত্রী ভালো ফল করল না। ফলে পাশফেল না থাকায় সেই পড়ুয়া পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ন হয়ে গেল। অর্থাৎ সেই পড়ুয়া আসলে সম্পূর্ণ শিক্ষা পেল না। এভাবে বহু ছাত্রছাত্রীর যথার্থ শিক্ষা পেলো না।
তাহলে শিক্ষার তথা শিক্ষা দানের মূল উদ্দেশ্যটাই হারিয়ে যাবে। আমি আমার শিক্ষক জীবনে এমন বহু ছাত্রছাত্রী দেখেছি যারা পড়াশোনায় একটু দুর্বল বলে সব সময়ই একটা ফেল করার ভীতির মধ্যে থাকে। তাই পাশফেল না থাকলে এই ধরণের ছাত্রছাত্রীদের নিঃসন্দেহে সুবিধা হবে কিন্তু এদের ভবিষৎটা ঠিক কেমন হবে সে বিষয় একটা বিরাট প্রশ্নবাদক চিহ্ন রয়ে যাচ্ছে।
পড়ুয়াদের জন্য একটি বিজ্ঞানসম্মত মূল্যায়নের পদ্ধতি চালু করতে চায় শিক্ষা দপ্তর
তাই সার্বিক বিষয়টিকে মাথায় রেখেই এমন একটা পদ্ধতি প্রণয়ন করতে হবে যাতে শুধুমাত্র একটি পরীক্ষার ভিত্তিতে পাশফেল নির্ধারণ করাটা ঠিক হবে না। বার্ষিক পরীক্ষার আগে সারা বছর ধরে যতগুলো পরীক্ষা হবে তার ভিত্তিতেই একজন পড়ুয়ার মূল্যায়ন করা উচিত। তারপর যদি দেখা যায় যে কোনও পড়ুয়া কোনও একটি বিষয় বেশ দুর্বল তখন তাকে আলাদা করে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। মোটামুটি তিন মাসের মতো সময় নিয়ে তাকে সেই বিষয় আরও ভালো করে তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। তারপর পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে যদি দেখা যায় যে সেই পড়ুয়া সত্যি ভালো ফল করেছে তখন তাকে পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করানো যেতে পারে।
তবে এখানে আবার একটা বড় অসুবিধাও দেখা দিতে পারে। সেটা হল এই ক্ষেত্রে সেই ছাত্র পরবর্তী ক্লাসে তিন মাস পিছিয়ে যাবে। সেই ব্যাপারে নজর দিকে হবে এবং আলাদা করে ছুটির দিনগুলো কয়েকঘন্টা করে ক্লাস নিয়ে সেই ঘাটতিটা পূরণ করতে হবে।
এখানে শিক্ষক-শিক্ষিকারও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। একজন শিক্ষকে এমন কোনও পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষা দিতে হবে যাতে ছাত্রছাত্রীদের কাছে সেটা দুর্বোধ্য না হয়ে ওঠে। একে 'রেমিডিয়াল টিচিং' বা প্রতিকারের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা বলা যেতে পারে।
কারণ কেউ কেউ চাইছেন এই প্রথাটি প্রথম শ্রেণীর থেকে চালু না করে চতুর্থ শ্রেণী থেকে ফিরিয়ে আনা হোক। আবার কিছু মানুষ চাইছেন এখন ঠিক যেমনটা আছে তেমনটাই চলুক। অন্যদিকে আবার একাংশের বিশেষজ্ঞারা বলছেন যে দ্বাদশী শ্রেণী পর্যন্ত পাশফেল তুলে দেওয়া হোক।
এখানে আমি মনে করি নিৰ্দিষ্ট কোনও একটি রাজ্যে বহু বোর্ড থাকে তাই শিক্ষা দপ্তরের এমন কোনও একটি নিয়ম প্রণয়ন করা উচিত যার ফলে সেই রাজ্যে সব কটি বোর্ডের নিয়মগুলো যেন মোটামুটি একই রকমের হয়। যদি কোনও বোর্ড পাশফেল প্রথা চালু রাখে তাহলে যেন সেই রাজ্যের বাকি সব বোর্ডেও একই ধরণের নিয়ম মানে।
এর ফলে সবকটি রাজ্যের সবকটি বোর্ডকে একই মানদন্ডে রাখা যাবে।
পাশফেল চালু হলে পড়ুয়ারা পড়াশোনাকে গুরুত্ব দেবে
তাই মনে রাখতে হবে পাশফেল মানে কোনও পড়ুয়াকে শিক্ষাজগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া নয় বরং এমন ভাবে পুরো বিষয়টির পরিকল্পনা করতে হবে যাতে পড়ুয়ারা শুধুমাত্র পড়াশোনা করে কোনও মতে পরীক্ষায় পাশ করার পেছনে না ছুটি তারা যা পড়ছে সেটা যেন সঠিক ভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে।

