বিজেপি শাসিত রাজ্যের পড়ুয়ারা মিড ডে মিলে ডিম থেকে কেন বঞ্চিত?
সামাজিকই বা অর্থনৈতিক, সমস্যাই যাই হোক, মিড ডে মিলে দ্রুত ডিম পরিবেশন করতে হবে
- Total Shares
"সানডে হো ইয়া মানডে, রোজ খাও আন্ডে।' ন্যাশনাল এগ কমিশনের এই বিজ্ঞাপনী গানটা সকলেই নিশ্চয়ই শুনেছেন। বিজ্ঞাপনের বার্তাটাও বেশ পরিষ্কার: ডিম স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে দেশের বেশ কয়েকটি বিজেপি শাসিত রাজ্য এই বার্তাটি খুব ভালো মনে গ্রহণ করেনি।
ইন্ডিয়া স্পেন্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী: "বিজেপি শাসিত ১৯টি রাজ্যের মধ্যে ১৪টি রাজ্যের স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়িগুলোতে বাচ্চাদের ডিম পরিবেশন করা হয় না।" গবেষক তথা খাদ্য অধিকার সংক্রান্ত প্রচারকর্মী স্বাতী নারায়ণ সরকারি তথ্য ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের উপর ভিত্তি করে অনেকদিন ধরেই বোঝাতে চাইছেন যে দেশের স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়িগুলোতে ডিম পরিবেশন করা কতটা জরুরি।
ইন্ডিয়া স্পেন্ডের এই রিপোর্টে তিনটি উল্লেখযোগ্য কথা বলা হয়েছে। দেশের যে ১০টি রাজ্যের লোক সবচেয়ে বেশি অপুষ্টিতে ভোগেন সেগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটে রাজ্যে (বিহার, ঝাড়খণ্ড ও কর্নাটক) বাচ্চাদের ডিম দেওয়া হয়। দুই, বিজেপি শাসিত ১৯টি রাজ্যের মধ্যে মাত্র পাঁচটি রাজ্যে বাচ্চাদের ডিম দেওয়া হয়। আর তিন নম্বর, বেশ কয়েকটি অবিজেপি শাসিত রাজ্যেও (পঞ্জাব, মিজোরাম ও দিল্লি) মিড ডে মিলে বাচ্চাদের ডিম দেওয়া হয় না। কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর মতো তা কোনও ভাবেই নিরামিষাশী ভাবাবেগকে সুড়সুড়ি দেওয়ার জন্য নয়।
শেষ বিষয়টি কিন্তু সত্যিই আলোচনা করবার মতো বিষয়। বিজেপির কি সত্যিই কোনও নিরামিষাশী তৈরি করবার নীতি রয়েছে?

স্বাস্থ্য দপ্তরের কাজকর্ম দেখলে তো মনে হয় সত্যি সত্যিই এই ধরণের নীতি রয়েছে। এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফ থেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতে একটি অপুষ্টিকর ছবিতে জাঙ্ক ফুড ও আমিষ খাবারের ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল। অন্যদিকে একটি স্বাস্থ্যবান শরীরের ছবিতে নিরামিষ খাবারের ছবি ব্যবহৃত হয়েছিল। এই ছবি থেকে যে তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছিল তা নিঃসন্দেহে বিভ্রান্তিকর।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধরণের কর্মসূচির প্রয়োজন পড়ছে কেন? এই নয় যে ভারতে নিরামিষাশী হয়ে ওঠার কোনও প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে। ২০১৪ সালে রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সেনসাস কমিশনারের তরফ থেকে একটি সমীক্ষায় জানানো হয়েছিল যে ১৫ বছরের বেশি বয়সের ভারতীয়দের মধ্যে ৭১ শতাংশই আমিষ খান।
সমাজবিজ্ঞানী সূর্যকান্ত ওয়াগমোরের মতে, "অল্পসংখ্যক সংখ্যালঘু হিন্দুদের নৈতিকতার মধ্যেই এ দেশে নিরামিষাশী হওয়ার প্রবণতা বিরাজ করছে। আর সেই প্রবণতাই আমিষ খাওয়া লোকেদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু নতুন প্রজন্মের সমাজ এতটাই আধুনিক যে সেখানে নিরামিষ খাওয়ার প্রবণতা এতটা সহজে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।"
মিড ডে মিল বা অঙ্গনওয়াড়ির খাবারে নিরামিষ পরিবেশন করাটা কোনও কাজের কথা নয়। পুষ্টিবিদ মানসী প্যাটেলের মতে, "গবেষণা বলছে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের থেকে প্রাণিজ প্রোটিনে পুষ্টি বেশি থাকে। তাই বাচ্ছাদের ডিম দেওয়াটা সবসময় শ্রেয়।"
ভিটামিন বি-২, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন বি-১২-এর মতো পুষ্টি ও আয়রন, জিঙ্ক ও কপারের মতো খনিজ ডিমে পাওয়া যায়। ডিমের কুসুমে অবশ্য কোলেস্টেরল ও স্নেহ পদার্থে দ্রাব্য ভিটামিন এ, ডি, ই, কে লিকিথিনে পরিপূর্ণ থাকে।
নিরামিষাশী করে তোলা ছাড়াও এর পিছনে আরও একটি কারণ থাকতে পারে - খরচ। উত্তরপূর্ব ভারতে ডিম যথেষ্ট খরচ সাপেক্ষ। অরুণাচল প্রদেশের ২০১৮-১৯ মিড ডে মিল নীতিতে লেখা হয়েছে, "সবুজ আনাজ ও তরতাজা ফল গ্রামীণ এলাকাগুলোতে খুব কম দামে পাওয়া যায়। তাই মিড ডে মিলে এই খাবারগুলো পরিবেশন করা হয়। কিন্তু ডিম পাওয়া দুষ্কর এবং যথেষ্ট খরচ সাপেক্ষ।"প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব কে সুজাতা রাও ইন্ডিয়া স্পেন্ডকে জানিয়েছেন, "খরচের কারণে মিড ডে মিলে ডিম অন্তর্ভুক্ত করা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না।"
সামাজিকই হোক বা অর্থনৈতিক সমস্যাই হোক, ডিমকে দ্রুত মিড ডে মিলে অন্তর্ভুক্ত করাটা নিতান্ত জরুরি।

