বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য রুখতে এবার কৃত্রিম বুদ্ধি কাজে লাগবে ফেসবুক
এর আগেও ফেসবুক কাজটি জন্য এআই-এর ব্যবহার করেছে
- Total Shares
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় গত কয়েক বছরে বিদ্বেষপূর্ণ উক্তি এবং মন্তব্য নিয়ে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। টুইটর ও ফেসবুকের মাধ্যমে কিছু সংখ্যক মানুষ এই ধরণের উক্তি করে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে এবং মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। কখনও লেখার মাধ্যমে, কখনও ভিডিও আবার অনেক সময় বিশেষ ধরণের কিছু ছবি বা মিম (meme) ব্যবহার করে কোনও ব্যক্তি বা কোনও সম্প্রদায়কে আক্রমণ করছে।
পাঠকদের জানিয়ে রাখি, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরণের বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য ও তার বিস্তার আটকাতে ফেসবুক এবং টুইটার নিজেদের নীতি-নিয়ম প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। ফেসবুক সংস্থায় বিশেষ একটি দল আছে যাঁরা ব্যবহারকারীদের সবকটি মন্তব্যের উপর সতর্ক নজরদারি চালাচ্ছেন এবং কোনও বিদ্বেষপূর্ণ বা আক্রমণাত্মক মন্তব্য থাকলে তা তৎক্ষণাৎ বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিমাসে প্রায় দুই বিলিয়নের কাছাকাছি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন। প্রত্যেকদিন লেখা, ছবি ও ভিডিও মিলিয়ে কোটি কোটি মেসেজ বা পোস্ট যাচ্ছে তাই যাঁরা এসব মেসেজের উপরে নজর রেখে চলেছেন তাঁদের পক্ষে ফেসবুকের মাধ্যমে এই ধরণের মেসেজ বা জাল খবর ছড়িয়ে পড়া সবসময় রোখা সম্ভব হয় না।
জাল খবর এবং আক্রমণাত্মক বিষয়বস্তু রুখতে রোসেট্টা
সমস্যাটা হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে ফেসবুক এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিকে কাজে লাগাবার কথা ভাবছে। সম্প্রতি সংস্থাটি তাদের অফিসিয়াল ব্লগে লিখেছে যে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে ব্যবহারকারীরা প্রত্যেকদিন যে কোটি কোটি ছবি বা ভিডিও পোস্ট করছে সেগুলির থেকে বেশ কয়েকটি বিদ্বেষপূর্ণ মিম ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিওকে সনাক্ত করা হয়েছে যা মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কাজটি করার জন্য রোসেট্টা পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে, এটি একটি কৃত্রিম বুদ্ধি।

এর আগেও ফেসবুক এই কাজটি করার জন্য এআই-এর ব্যবহার করেছে। যদিও আগে যে সব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা রোসেট্টা। দেখা যাক এই রোসেট্টা ঠিক কী ভাবে কাজ করে।
কী ভাবে কাজ করে রোসেট্টা?
এধরণের বাকি পারম্পরিক পদ্ধতি অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রেকগনিশন সিস্টেম (ওসিআর)-এর উপর ভিত্তি করে কাজ করে। অর্থাৎ এই পদ্ধতির দ্বারা কোনও মেসেজ পড়া গেলেও সেটির সঙ্গে যে ছবিটি যুক্ত রয়েছে সেটা বুঝতে পারে না। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম মিলিয়ে যে কোটি কোটি ছবি ও ভিভিও বিভিন্ন ভাষায় পোস্ট হয় রোসেট্টার সাহায্যে সেগুলোকে নিরীক্ষণ করে তার থেকে বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট ও ভিডিও চিহ্নিত করা হবে।
পদ্ধতিটি নিজের বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে সমস্ত ছবি ও ভিডিও থেকে যেগুলি বিদ্বেষপূর্ণ সেগুলিকে আলাদা করবে।
যদিও ফেসবুক এই প্রথমবার ওসিআর পদ্ধতি যুক্ত এআই ব্যবহার করতে চলেছে। তাই রোসেট্টাকে ঠিক কতটা দক্ষভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে সে বিষয় নানা ভাবনাচিন্তাও করছে ফেসবুক।
এটা একটা সঠিক পদক্ষেপ কেন?
প্রযুক্তির দিক থেকে দেখতে হলে যেমন রোসেট্টার ব্যবহার নিঃসন্দেহে ফেসবুকের জন্য একটা বিরাট পদক্ষেপ ঠিক তেমন ভাবেই মার্ক জুকারবার্গ ও তাঁর সহকর্মীদের জন্যেও এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ আজ বেশ কিছু বছর হল ব্যবহারকারীরা ফেসবুককে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য এবং জাল খবর ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করেছে বলে ফেসবুককে বিভিন্ন সময় সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। মূলত এই কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, বিপুল অৰ্থ ব্যয় হয়েছে এবং বিভিন্ন ঘটনার দ্বারা প্রবলভাবে মানুষের অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে।
মায়ানমার থেকে শুরু করে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত ফেসবুকে বারে বারে এই ধরণের বিদ্বেষপূর্ণ উক্তি ছড়িয়ে পড়েছে যা সংস্থাটি রুখতে পারেনি। ফলত বড় বিপদও ঘটে গেছে। তাই এই ধরণের কার্যকলাপকে রোখার জন্য পাশাপাশি এআই-এর মতো প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ফেসবুক যদি মানুষের সাহায্যে লাগতে পারে তবে সেটা নিঃসন্দেহে একটা সঠিক পদক্ষেপ।
লেখাটা ইংরেজিতে পড়ুন

