যে পাঁচটি কারণের জন্য জনপ্রিয় প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর জীবনসঙ্গী রবার্ট ওয়াড্রা

তাঁর গাড়ি ওভারটেক করেছিল বলে দিল্লির এক চালকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছিল

 |  3-minute read |   25-01-2019
  • Total Shares

আসুন রবার্ট ওয়াড্রার সঙ্গে পরিচয়টা সেরে ফেলি। কংগ্রেসের নতুন নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী যাঁর অর্ধাঙ্গিনী।

১৯৯৭ সালে অত্যন্ত ঘরোয়া একটি অনুষ্ঠানে দু'জনে শুভপরিণয়ে আবদ্ধ হয়েছিলেন। যা কংগ্রেসের মতো দলের একজন সেলিব্রিটি কন্যার পক্ষে মাননসই নয়। রবার্ট ওযাড্রার অবশ্য কোনও দিনও কোনও রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। দলের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায় কংগ্রেসের অনেকেই প্রিয়াঙ্কার 'রবার্ট' পছন্দে খুশি ছিলেন না।

তবে তথ্যটি গুজব হোক বা সত্যি হোক, দু'জনের সম্পর্কে শেষ পর্যন্ত প্রেম জয়লাভ করেছে - তাঁদের চার হাত এক হয়েছে।

এর পরেই জমি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হলেন রবার্ট এবং তাঁকে দ্রুতই কংগ্রেসের সামনের সারি থেকে সরিয়ে দেওয়া হল।

body_012519051147.jpg৯৭ সালে শুভপরিণয় আবদ্ধ হয়েছিলেন দু'জনে [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]

কিন্তু এর পরেও রবার্ট ওযাড্রা একজন অদ্ভুত চরিত্র হিসেবে জনমানসে রয়ে গেলেন।

আপনি তাঁকে গুরুত্ব না দিতেই পারেন, তিনি যা বলেন তা কখনই দলের সরকারি বক্তব্য হতে পারে না। বহু কংগ্রেস নেতাই এই কথাটি আমাদের বারংবার মনে করেই দিয়েছেন। তা সত্ব্বেও, সোশ্যাল মিডিয়া হঠাৎ উদয় হওয়া তাঁর প্রাতঃভ্রমণের ছবিগুলো মোটেই সহজে অস্বীকার করা যায় না।

এই কারণেই রবার্টের ব্যক্তিগত জীবনের পুঙ্খনাপুঙ্খ বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়েছে।

ফেসবুক তাঁর রক্তে রয়েছে

তিনি এমন একটা প্রজন্মের প্রতিনিধি যে প্রজন্ম 'সুপ্রভাত' বার্তায় চরম বিশ্বাসী। নিশ্চিত ভাবে বলা যেতে পারে, যে সমস্ত হোয়াটস অ্যাপ গ্রূপের তিনি সদস্য সেই সমস্ত গ্রূপেই তিনি নিয়ম করে সুপ্রভাত বার্তা পাঠান। ফেসবুকে তো নিয়মিত তিনি তাঁর ছবি সহ সুপ্রভাত বার্তা পোস্ট করেন।

body1_012519051240.jpgপোষ্যদের সঙ্গে ওয়াড্রা [সৌজন্য: ফেসবুক]

এছাড়া তাঁর কাছে বেশ কযেকটি শুভেচ্ছা বার্তা সর্বদা তৈরি করাই থাকে। জন্মদিনে শাশুড়ি সোনিয়া গান্ধীকে শুভেচ্ছা, নির্বাচনে জিতলে শালা রাহুলকে শুভেছা বা রাজনীতিতে যোগদানের জন্য স্ত্রী প্রিয়াঙ্কাকে শুভেচ্ছা - বিভিন্ন ধরণের শুভেচ্ছা পাঠাতে তিনি সিদ্ধহস্ত। এছাড়া শিশুদিবস, দীপাবলি, দুর্গাপুজো কিংবা স্বাধীনতা দিবসে ফেসবুক পোস্ট তো রয়েছেই।

এর উপর আবার নিয়মমাফিক কিছু পোস্ট করেন তিনি। এই পোস্টগুলোতে তিনি মোদী সরকারকে আক্রমণ করেন, দিল্লির শপিং মলে বন্দুকধারী কাউকে দেখতে পাওয়ার বিষয়ে নিজের মতামত দেন কিংবা দিল্লির ট্রাফিক নীতি নিয়ে তাঁর বক্তব্য পেশ করেন।

আংশিক সময়ের ফিটনেস ট্রেনার

ফিটনেস সংক্রান্ত প্রতিটি বিষয়ে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাবে। হাঁটা, দৌড়, লম্ফঝম্ফ, সাইক্লিং সমস্ত কিছুতেই আছেন তিনি। গোটা বিশ্বকেই তিনি বলে বেড়ান এই বিষয়গুলোর উপকারিতা কী। যাঁরা তাঁকে দিল্লির রাস্তায় সাইকেল চালাতে দেখেছেন তাঁরা নিশ্চয় তাঁর সঙ্গে থাকা সুরক্ষা ব্যবস্থাও দেখেছেন।

body2_012519051319.jpgনিজেকে পছন্দ করেন তিনি [ভিডিও গ্র্যাব]

বাইরের পরিবেশ দূষণের মাত্রা যদি বিপদসীমিয়া ছাড়িয়ে যায় তাহলে তিনি জিমে যান। আর, এক্সারসাইজ করার মুহূর্তগুলো ভিডিওবন্দি করে রাখেন।

আরও একটি কাজ তিনি করে থাকেন -- লোকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার -- অন্তত তাঁর ফেসবুক তো সেই কথাই জানান দিচ্ছে।

আম তাঁর ভীষণ পছন্দের

২০১২ সালের কথা। দিল্লিতে তখন কংগ্রেস ক্ষমতায়। দেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত কিছু লোক ওয়াড্রা ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। এর কিছুদিন বাদে ওয়াড্রা ফেসবুকে পোস্ট করলেন: "ম্যাঙ্গো পিপল ইন ব্যানানা পলিটিক্স"।

এর মানে বের করা যথেষ্ট দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি কি প্রতিবাদীদের কটাক্ষ করলেন, নাকি দিল্লি বা কেন্দ্রীয় সরকারকে? এমনও হতে পারে, তিনি আম ও কলাকে কটাক্ষ করেছিলেন।

এর পরেই তিনি 'ম্যাঙ্গো পিপল' হতে চাইলেন।

body3_012519051527.jpgমায়ের সঙ্গে রবার্ট ভদরা [সৌজন্যে: ফেসবুক]

একদিন সকালে তাঁর ইচ্ছে হল 'ম্যাঙ্গো পিপল' অর্থাৎ 'আম আদমি' বা সাধারণ মানুষ হওয়ার। বিভিন্ন বিমানবন্দরের ভিভিআইপি তালিকায় তাঁর ছিল। অনেকেই এর বিরুদ্ধে মুখ খুললেন।

এর পর তিনি জানিয়ে দিলেন যে তিনি তাঁর নাম সেই তালিকায় আর চান না। অবশ্যই ফেসবুকে জানিয়েছিলেন তিনি: "আমার এই সুবিধার প্রয়োজন নেই। কোনও দিনও এই ধরণের সুবিধায় আমি স্বচ্ছন্দ বোধ করিনি। কিন্তু আমি নিজে প্রতিটি বিমানবন্দরে গিয়ে নিজের নাম কাটতে পারব না। আমি একজন সাধারণ মানুষ। এক হয় আমার নাম ভিভিআইপি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হোক। নয়তো প্রতিটি ভারতীয়র নাম সেই তালিকায় তুলে ধরা হোক।"

তবে একটা কথা অনস্বীকার্য। প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে যখন তিনি বিমানে চাপেন তখন তাঁকে খুব একটা নিরাপত্তার ঝক্কি সামলাতে হয় না।

গাড়ি চাই গাড়ি, আরও গাড়ি

বিএমডাব্লিউ, পোর্শে, জাগুয়ার - বাকি নামগুলোর আর কোনও প্রয়োজন নেই। তবে যে কোনও দিল্লিবাসী জানেন যে তিনিও কতটা কেতাদুরস্ত। রোদচশমা থেকে শুরু করে স্যুট এমনকি গাড়িও - সবকিছুই তাঁর ফিটফাট। দিল্লির গাড়ি মেলাগুলোতে তাঁকে তো নিয়মিত দেখা যায়।

body4_012519051421.jpgদিল্লির গাড়িমেলায় নিয়মিত তিনি [সৌজন্য: টুইটার]

তাঁর নাইটক্লাবের কিছু গল্প তো লোকগাথা হয়ে গিয়েছে। তবে একটি লোকগাথা কিন্তু বহুচর্চিত - দিল্লির ওমর কলোনিতে তাঁর গাড়িকে ওভারটেক করার জন্য এক চালকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছিল।

সত্যিই এমন রঙীন মানুষের খোঁজ সচারচর পাওয়া যায় না।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment