আপনার সব গোপন ইমেল পড়ছে গুগল ও ফেসবুক? জেনে রাখুন কী ভাবে সেটা রোখা যায়

গুগল ফেসবুক ইমেল থার্ডপার্টি ব্যক্তিগত তথ্য চুরি

 |  4-minute read |   20-07-2018
  • Total Shares

টেকনোলজির দুনিয়ায় গোপনীয় তথ্যগুলি ঠিক কতটা গোপনীয় থাকে? আসল ব্যাপারটা হল টেকনোলজির দুনিয়ায় গোপনীয় কোনও তথ্যই আর গোপন থাকে না। অন্তত যেসব তথ্যগুল এখন ‘মেঘ’ যাকে ইনটারনেটের ভাষায় ‘ক্লাউড’ বলা হয় সেখানে যে তথ্যগুল আপলোড করা হয় সেই তথ্যগুলর কোনও রকম নিরাপত্তা থাকে না। আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য কিংবা আমাদের সমস্ত মেসেজ এমনকি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল তথ্য যা ইমেল বক্স-এ থাকে সেগুলও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত নয়। সেগুল যে শুধু আমাদের চোখই দেখতে পাচ্ছে এমনটা নয়।

তবুও, গুগল আমাদের সব ব্যক্তিগত তথ্যগুল খুব সহজেই জেনে ফেলতে পারে কিংবা অন্য কোনও সংস্থা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যে নাক গলাতে পারে। এই ধরনের সব প্রতিবেদন পড়ে সাময়িকভাবে বিরক্তি প্রকাশ করলেও পরক্ষনেই অনান্য আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা চিন্তিত হয়ে পরি তাও এক বারও ভেবে দেখি না যে এই ডিজিটাল দুনিয়ায় নিজের তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য প্রথমেই কয়েকটা সহজ পদক্ষেপ আমাদের করা উচিত।

সম্প্রতি কয়েকটি হাই প্রফাইল ঘটনা সন্দেহটাকে আরও বদ্ধমূল করেছে। অভিযোগ ওঠে যে ফেসবুক তার প্রায় ২৫০ মিলিওন ব্যবহারকারির অ্যাকাউন্ট তাঁদের নাকের ডগার নিচে থেকে তথ্য কেমব্রিজ এনালিটিকা বলে একটি সংস্থার কাছে ফাঁস করে দিয়েছিল। এই সংস্থাটি যারা ভোটের প্রফাইলিং করে।

এই ঘটনাটিকে ঘিরে মেনলো পার্ক-এর এই দৈত্যবৎ বিশাল সংস্থাটিকে তখন কঠোর সমালোচনার মুখে পরতে হয়েছিল এবং সংস্থার সিইও মার্ক জুকারবারগকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দিয়ে সেই সমালোচনার আগুণকে নেভাতে হয়েছিল।

body_072018083314.jpg

অতি সম্প্রতি ওয়াল্ল স্ট্রিট জারনালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে এমন বহু বহিরাগত সংস্থা রয়েছে যাঁদের গুগল অনুমতি দিয়েছে যাতে তাঁদের প্রয়জনে তাঁরা গুগল অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদের জাবতিয় তথ্য দেখতে পান।

তবে ঘটনাটাকি সত্যিই এতটা পরিষ্কার ঠিক যেমনটা সমস্থ সংবাদ মাধ্যমগুলো দেখাচ্ছে?

গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে না

আমার অনেকেই যেটা বিশ্বাস করতে চাই না কিন্তু সংবাদ মাধমের শিরোনামের খবরগুলো ঠিক যেটা আমাদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করে। ফেসবুক-কেমব্রিজ এনালিটিকা ও জিমেলের ক্ষেত্রে এই বড় সংস্থাগুলি কোনও রকম লোভের বশবর্তী হয়ে তথ্য চুরি করেছেন এমনটা নয় বরং যেই সংস্থার ইমেল অ্যাকাউন্ট আমরা ব্যবহার করে থাকি তারা ব্যবহারকারীর তথ্যকে গোপন রাখার বিষয় যথেষ্ট তৎপর ছিল না।

তার মানে এটা নয় যে আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত তথ্যগুলো চুরি যাওয়ার জন্য ফেসবুক বা গগল দায়ে কম নয়। কোনও ভাবেই কথাটা অস্বীকার করা যাবে না যে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য যাতে চুরি না যায় সেই বিষয় এঁদের যত্নবান হতে হবে পাশাপাশি অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদেরও আরও সচেতন হতে হবে। আমরা যাঁরা এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছি তাঁদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে এবং নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্যগুলোকে সুরক্ষিত রাখার জন্য পদক্ষেপ করতে হবে।

তথ্য চুরি কিংবা হ্যাকিং-এর বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করার উপায়টা হয়তো কিছুটা সময় সাপেক্ষ তবে অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই নিজেদের ইমেল বা ব্যক্তিগত তথ্যকে বিভিন্ন সংস্থার ও যাঁরা এই ধরণের সফটওয়্যার সৃষ্টি করেন তাদের হাত থেকে রাখা করা সম্ভব।

নিজের ব্যক্তিগত তথ্যকে কী ভাবে রক্ষা করবেন?

এই বিষয় কিছু বলার আগে একটা কথা বলে রাখি – বড় টেকনোলোজিক্যাল সংস্থাগুলি কখনওই বহিরাগত কোনও সংস্থাকে একাউন্ট ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যকে ব্যবহার করার বা দেখার অনুমতি দেয় না। যেসব সংস্থার একাউন্ট সাধারণ মানুষ ব্যবহার করছেন সেই সন্থাৰ অনুমতি ছাড়া বহিরাগত সংস্থাগুলি একাউন্ট ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ইমেল, ছবি কিংবা কন্টাক্ট দেখতে পারে না। আমাদের মোবাইল ফোনে আমরা যখন কোনও তথ্য সংগ্রহ করে রাখি তখন আসলে সেটা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি ক্লাউডে গিয়ে সঞ্চিত থাকে।

তাই আমরা যখন আমাদের স্মার্টফোনে কোনও এপ্লিকেশন ডাউনলোড করি তখন প্রথমে কয়েকটি বিষয় আমাদের অনুমতি চাওয়া হয় যেগুলো আমরা অনেকেই ভালো করে না দেখে এপ্লিকেশনটা ঝটপট ডাউনলোড করে ফেলি, সেটা করলে চলবে না ডাউনলোড করার সময় এগুলো বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিতে হবে। ডাউনলোড করার সময়ই আমাদের থেকে অনুমতি আমাদের ফোন থাকা সমস্থ তথ্য প্রয়োজনে সেই সংখাটি যে তা ব্যবহার করতে পারবে সে অনুমতি আমাদের থেকে নিয়ে নেওয়া হয়।

তবে অ্যাপলিকেশনটিকে ডাউনলোড করার সময় যেখানে অনুমতির কথা লেখা থাকে সেখানে গিয়ে প্রয়োজনীয় অদলবদল করে নেওয়া সম্ভব।

যেহেতু অ্যান্ডরয়েড ফোনে বিভিন্ন ধরণের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় তাই কয়েকটি ফোনের ক্ষেত্রে নিয়মটির সামান্য রদবদল হতে পারে তবে মোটের ওপর যে নিয়মগুলো এখানে দেওয়া হলো সেটা সমস্থ ফোনের ক্ষেত্রে মোটামুটি একরকম।

আপানর অনেক সময় আমরা আমাদের জি-মেল অ্যাকাউন্ট-এর মাধ্যমে বিভিন্ন থার্ডপার্টি এপ্লিকেশনের সঙ্গে নিজের একোয়ান্টকে যুক্ত রাখবেন না।

আপনি আপনার গগল অ্যাকাউন্ট-এর মাধ্যমে কোন কোন থার্ডপার্টি অপ্প্লিকেশনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সেটা গগল দেখে।

সেখানে গিয়ে অ্যাপএর ট্যাবটিতে গিয়ে একাউন্ট একসেসে গিয়ে সাইন-ইন ও সিকিউরিটি সেটিং-এ গিয়ে প্রয়োজনীয় অদলবদলগুলো করুন। গগল অক্কোউন্টের সঙ্গে যেকটি এপ্লিকেশন ও ওয়েবসাইট যুক্ত রয়েছে সেগুলির একটি তালিকা ওখানে দেওয়া থাকে। সেই তালিকার সবকটি এপ্লিকেশন একে একে দেখে প্রয়োজনীয় রোদবদলগুলো করে নিন।

ফেসবুকের ক্ষেত্রে কী করণীয়?

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিন।

ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয় পেয়েও যদি আপনি আপনার আকাউন্টটিকে ত্যাগ করতে না পারেন তাহলে যেসব ফিচারগুলো ব্যক্তিগত তথ্য যাতে চুরি না হয় সেই দিকগুলো দেখে সেই ফিচারগুলোর কর্মক্ষমতা আরও বাড়িয়ে রাখুন। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটিকে অন্য কোনও থার্ডপার্টি বা বাইরের অন্য কোনও অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত করে রাখবেন না। আপনার অ্যাকাউন্টটি যেখানে আছে সেই সফ্টওয়ারের সঙ্গে থার্ডপার্টি বা বহিরাগত কোনও অ্যাপের কোনও যোগ থাকে তাহলে সেটা বন্ধ করে রাখুন। এর ফলে সেই থার্ডপার্টি আপনার অ্যাকাউন্ট-এ প্রবেশ করতে পারবে না।  

ন্যাভিগেশন বারের উপর যে প্রশ্নবাদক চিহ্নটির পাশে যে ছোট অ্যারোটি নিচের দিকে মুখ করে রয়েছে তার উপরে ক্লিক করে সেটিং-এ যেতে হবে। সেখান থেকে জেনারেল অ্যাকাউন্ট সেট্টিনেরস- এ যেতে হবে সেখান থেকে অ্যাপ মেনুতে যেতে হবে। এবার ওখানে অ্যাপ, ওয়েবসাইট ও প্লাগিন্স এবং এডিটের উপর ক্লিক করুন তারপর ওখানে ডিসএবল প্লাটফর্ম বাটন বলে একটি নীল রঙের ট্যাব রয়েছে তাতে ক্লিক করতে হবে।

লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment