পাক্কা পাকিস্তানি শত্রু: নামে ইন্ডিয়া থাকায় নির্বিচারে হত্যা বস্টার্ডকে

শুধু সেনা ও সাধারণ নাগরিককে নয়, বিপন্ন গ্রেট ইন্ডিয়ান বস্টার্ডকে় মারছে পাকিস্তান!

 |  2-minute read |   24-02-2019
  • Total Shares

এখন আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন, নামে কী যায় আসে।

ব্যাপারটা হল, এখন গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে গ্রেট ইন্ডিয়ান বস্টার্ড পাখিটি নিজেকে গোদওয়ান বস্টার্ড নামে পরিচিত করাতে পারে, এই নামেই পাখিটিকে স্থানীয় লোকজন চেনে।

গ্রেট ইন্ডিয়ান বস্টার্ড হল অতি চমৎকার প্রজাতির পাখি – এটি ভারতীয় উপমহাদেশেরই পাখি। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে হলে, এটা শুধুমাত্র ভারতের থর মরুভূমিতেই দেখা যায়, এ ছাড়া অতি অল্প সংখ্যায় দেখা যায় গুজরাটের কচ্ছে (মেরেকেটে বারোটা মতো হবে, তাদের মধ্যে কোনও পুরুষ পাখি না থাকায় প্রজনন সম্ভব হচ্ছে না)। এক সময় দাক্ষিণাত্যের মালভূমিতে তাদের বিপুল সংখ্যায় দেখা গেলেও তারা এখন সেখান থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অফ নেচারের লাল তালিকা (বিশ্বের কোন প্রাণীর এখন প্রকৃত অবস্থা কী তা জানার ব্যাপারে বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরয়োগ্য তালিকা) অনুযায়ী গ্রেট ইন্ডিয়ান বস্টার্ড হল চরম বিপন্ন প্রাণী।

তাদের সংখ্যা যদি বিচার করা হয় (মোটামুটি ১০০টি মতো – দু’একটা বাড়াতে বা কমাতে পারেন) তা হলে এ কথা বলা যায় যে তারা এখন অবলুপ্তির অপেক্ষায়।

bust_022419083830.jpg নামে ভারতীয় শব্দটি থাকায় গ্রেট ইন্ডিয়ান বস্টার্ডকে মেরে ফেলেছে পাকিস্তানিরা (ছবি: রয়টার্স)

স্বাভাবিক বাসস্থান হারিয়ে যাওয়া তাদের সংখ্যা কমে যাওয়া একটি আবশ্যিক কারণ হলেও, হাইটেনশন বিদ্যুতের তার, শিকারী প্রাণীদের ভয় এবং চোরাশিকারীদের দাপট হল তাদের এত দ্রুত কমে যাওয়ার কারণ। রাজস্থানের এই রাজ্য-পাখিকে ভারতের এক নম্বর তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে – এটি হল সেই তফসিল যেখানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ও গির অরণ্যের সিংহের চোরাশিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুতরাং  দেশে চোরাশিকারের কোনও প্রশ্নই উঠতে পারে না।

সে যাই হোক, আমাদের প্রতিবেশী দেশটির এ নিয়ে কোনও বিবেকের দংশন নেই।

পাখিটি উড়ে যায় পাকিস্তানের সীমান্ত পার করে – কারণ তাদের স্বাভাবিক বাসস্থানের একাংশ সে দেশেও আছে বলেই তারা মনে করে, তা ছাড়া মানুষ যে সীমান্ত নির্ধারণ করেছে সেটা বোঝার মতো বোধ-বুদ্ধিও এই পাখির নেই। তবে একবার যদি তারা সীমান্ত পার করে ফেলে, তা হলে তাদের মূর্খামির সাজা ভোগ করতেই হয় এবং তাদের নামও এ জন্য দায়ী।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অফ নেচারের ২০১৭ সালের লাল তালিকা পাকিস্তানে বিপুল ভাবে এই পাখির চোরাশিকার নিয়ে সতর্কবাণী শুনিয়ে বলেছিল, যে ভাবে চোরাশিকার হচ্ছে তাতে ভারতের পশ্চিমে তাদের যে সংখ্যা রয়েছে তা ১৫-২০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তাদের ব্যাখ্যায় দেখা গেছে যে, গ্রেট ইন্ডিয়ান বস্টার্ড পাখিটি কচ্ছের নালিয়া দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করে (সম্ভবত কচ্ছ ও পশ্চিম রাজস্থানে এই পখিটির যে সংখ্যা বলা হয় তার মধ্যে পাকিস্তানের সংখ্যাও ধরা হয়), যেখানে গত চার বছরে ৬৩টি পাখির মধ্যে ৪৯টিকে মেরে ফেলা হয়েছে।

আমাদের প্রতিবেশী দেশটি শুধু যে নির্বিচারে সেনা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে তা নয়, তারা নির্বিচারে হত্যা করে নিরীহ পাখিকেও – তবে এই পাখির মাংস খাওয়ার জন্য বা খেলাচ্ছলে তাদের মারে না, তাদের মারে কারণ তাদের নামে ইন্ডিয়ান শব্দটি রয়েছে।

এই ধরনের মানসিকতার সঙ্গে অতল অন্ধকার গহ্বরের তুলনা করা চলে, আর সেই মানসিকতার মূল্য চোকাচ্ছে গ্রেট ইন্ডিয়ান বস্টার্ড।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment