গালি বয়: ত্রুটি খুঁজতে চাইলে রণবীর সিং ও আলিয়া ভাট কিন্তু বহুৎ হার্ড

যদি রীমা আর জোয়াকে সাধুবাদ জানাতে হয় তাহলে রণবীর ও আলিয়া ভাটকেও কুর্নিশ জানাতে হবে

 |  3-minute read |   15-02-2019
  • Total Shares

সিনেমা: গালি বয়

অভিনয়: রণবীর সিং, আলিয়া ভাট, বিজয় রাজ

পরিচালনা: জোয়া আখতার, রীমা কাগতি

গালি বয় একটা জিনিস নিশ্চিত করেছে। আমাদের সামনে এমন একটি বিশেষণ উপস্থাপন করেছে যা আমরা যে কোনও ভালোবাসার বস্তুর ক্ষেত্রেই ব্যবহার করতে পারি।

একটি গান। একটি সিনেমা। একটি অনভূতি। সব মিলিয়েই গালি বয় সৃষ্টি হয়েছে।

রীমা কাগতি ও জোয়া আখতার বরাবরই এমন কিছুর সৃষ্টি করে থাকে যা একদিকে যেমন খাঁটি তেমন উপাদেয়ও। আর 'তালাশ'-এর মতোই গালি বয়ও জমে যাওয়া নর্দমা, পুঞ্জীভূত জঞ্জাল, টিনের চালের বাড়ি ও ঘামে ভেজা জামা নিয়ে একশো শতাংশ খাঁটি।

আমাদের বেশিরভাগের কাছেই এই দু'ঘণ্টা তেত্রিশ মিনিট ব্যাপী সিনেমায় যে বিশ্বকে দেখানো হয়েছে তা আমাদের বাস্তব থেকে অনেকটাই ভিন্ন। কিন্তু, একই কথা তো 'দিল ধরকানে দো'-র ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদিও তার সঙ্গে কোথাও একটা জানি সংযোগ ছিল। কারণ স্বল্প পরিসরেও সেটি একেবারে খাঁটি ও বাস্তব ছিল।

রণবীর সিং যেভাবে মুরাদ থেকে গালি বয় হয়ে উঠলেন তা সত্যিই উৎসাহিত করার মতো। যদিও এ সেই চিরাচরিত ছেড়া ন্যাকড়া থেকে পয়সাওয়ালা হয়ে ওঠার গল্প, তাও আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন না। আপনি তাঁর সঙ্গে কাঁদবেন, তাঁকে সমর্থন করবেন, হাসবেন, ভালোবাসবেন, আবেগতাড়িত হয়ে চুম্বন করবেন এবং আসবেস্টসের দেওয়ালে জোরে জোরে ঘুষি মারবেন।

আর, এর জন্য যদি রীমা আর জোয়াকে সাধুবাদ জানাতে হয় তাহলে রণবীর ও আলিয়া ভাটকেও কুর্নিশ জানাতে হবে।

পর্দার ভিতরে ও পর্দার বাইরে দু'জায়গাতেই ফ্ল্যাম্বোয়ান্ট বলে রণবীর প্রসিদ্ধ। মাঝে মাঝে তিনি চরিত্রের মধ্যে এতটাই ঢুকে পড়েন যে সাফল্য আসতে বাধ্য। আমার মতে, গালি বয়ের চরিত্রটি তাঁর সঙ্গে একেবারে মনোনসই। এই চরিত্রে তিনি তাঁরা সম্পর্কে ঘোষিত যাবতীয় লেবেলগুলো ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়েছেন।

body_021519053336.jpgগালি বয়: আমাদের বড় বড় স্বপ্নগুলোকে দেখতে শেখায় [সৌজন্যে: ইউটিউব]

এই সিনেমায় আলিয়া অনেকটা নোঙরের ভূমিকা পালন করেছে। ঠিক যেমনটি তাঁর অভিনীত সাফিনা চরিত্রটি মুরাদের জীবনে করেছে। তাঁর স্বভাব চরিত্র একেবারেই ভালো নয়। তাঁকে যদি হুমকি দেওয়া হয় তাহলে তিনি স্বচ্ছন্দে বিয়ারের বোতল ছুড়ে মাথায় মারতে পারেন। তাঁর হাত-পা খুব তাড়াতাড়ি চলে। তাই তাঁকে খেপিয়ে তোলার সাহস কেউই সচরাচর দেখান না।

একটি জনপ্রিয় বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ জানায় গালি বয়। সাইজ বুঝে নিজের কোটের মাপ দাও। বাস্তবে যদি আমরা আমাদের বড় বড় স্বপ্নগুলো দেখতে ভয় পাই তাহলে মুরাদকে দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত কী ভাবে নিজের ক্ষমতার বাইরে বেরিয়ে স্বপ্ন পূরণে বুদ হয়ে থাকতে হয়।

তবে এই একটি মাত্র সংগ্রামের কথাই এই সিনেমায় বলা হয়নি।

সাফিনা একজন 'সাধারণ' মহিলার মতো জীবন যাপন করতে পারেন না। তিনি বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করতে পারেন না, ছেলে বন্ধুদের নিয়ে মায়ের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন না। যতই তিনি বাস্তবপরায়ণ হোন না কেন দিনের শেষে তিনি এক গোড়া মুসলমান পরিবারের বিবাহযোগ্যা মেয়ে।

মুরাদের বাবা শাকির (বিজয় রাজ) গাড়ি চালক। তিনি মুম্বাইয়ের বিলাসবহুল অঞ্চলের অভিজাত্যদের গাড়ি চালান। কিন্তু মার্সেডিজের চালকের আসনের থেকে পিছনের আসনের তফাৎটা তিনি ভালোই জানেন। তিনি যে সারাজীবন ধরেই চালকের আসনে বসে গেলেন।

খুব কষ্ট হলেও মুরাদের মা রাজিয়া (অম্রুতা সুভাষ) মেনে নিয়েছেন যে তারা বিবাহিত জীবনে আর কোনও ভালোবাসা বেঁচে নেই। তাঁর স্বামী যে তরুণী বেগমের প্রতি বেশি আকৃষ্ট তা তিনি পরিষ্কার দেখতে পান।

আরেক দরিদ্র পরিবারের সন্তান শের (সিদ্ধার্থ চতুর্বেদী) খুবই মুহ্যমান। তিনি তাঁর নেশাগ্রস্ত অভদ্র বাবাকে কিছুই বলতে পারেন না কারণ তিনি নিজেও একজন পিত। মুরাদের বন্ধু মঈন (বিজয় শর্মা) বেশ ভালোভাবেই জানেন যে তাঁর মতো অনাথ শিশুদের পেটের ভাত জোগাড় করতে হলে তাঁকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য পাচার করতেই হবে।

এই সিনেমার কাহিনী কি প্রতি গল্পের প্রতি ন্যায়সঙ্গত?

হ্যা, তাই।

সিনেমা শেষ হতেই আপনি বুঝতে পারবেন যে একটি বাজে দিন কিংবা সকাল সকাল ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে ঝগড়া আসলে আপনার জীবনের অতি তুচ্ছ ঘটনা।

জীবন "বহুৎ হার্ড" - কিন্তু ইচ্ছে থাকলেই তাকে সহজ করে নেওয়া যায়।

গালি বয়েকে আমরা পাঁচে চার দিলাম।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

 

 

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment