রাজ্যে চিকিৎসা পরিকাঠামোর সার্বিক উন্নতি না হলে রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কের উন্নতি ঘটবে না
এই উদ্যোগের মাধ্যমে চিকিৎসকদের আন্দোলনের জয় হয়েছে
- Total Shares
গত প্রায় দেড় বছর ধরে একাধিক চিকিৎসকদের সংগঠনের যৌথ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ২ এপ্রিল ২০১৮ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আমাদের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক তথ্য চিকিৎসাকর্মী নিগ্রহ বন্ধ করতে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশ রাজ্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত সমস্ত সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক নিগ্রহ বিরোধী প্রচার করতে ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে প্রচারের কাজ শুরু করেছে।
আমি মনে করি এই উদ্যোগের মাধ্যমে চিকিৎসকদের যৌথ আনদোলনের জয় হয়েছে।
তবে এখনও অনেক দাবিই পূরণ হয়নি। তাই চিকিৎসক ও চিকিৎসককর্মীদের নিগ্রহের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা সহ চিকিৎসকদের উপর ৩০৪, ৩০৪এ, পকসো প্রভৃতি বিভিন্ন ধারার অপপ্রয়োগের বিরুদ্ধে, চিকিৎসক, চিকিৎসককর্মীদের বিপুল ঘাটতি পূরণের দাবি এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যের দাবি সহ পরিকাঠামোর উন্নতির দাবিতে চিকিৎসক সংগঠনগুলোর যৌথ ও লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
যদিও কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে এই ডিসপ্লে বোর্ডগুলো কবে থেকে লাগানো শুরু হবে সে বিষয় এখনও আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে চিকিৎসকরা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন
এ বার এই বিষয়টির দুটো দিক রয়েছে। এই ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ সচেতন হবেন কিন্তু এই ধরণের সাবধান বার্তা সমস্ত হাসপাতালেই বড় বড় করে দেওয়ালগুলোতে লেখা রয়েছে কিন্তু তারপরেও চিকিৎসক নিগ্রহ বন্ধ হয়নি। তবে কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে এটা একটা নতুন উদ্যোগ। তবে সত্যি সত্যি যে চিকিৎসকদের গায়ে হাত দিলে শাস্তি হয় না, সেটা রাজ্যের মানুষ জানেন কারণ সেই ভাবে কোথায়ও কোনও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
দ্বিতীয়ত, যতদিন আমাদের রাজ্যের হাসপাতালগুলোর পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি না হবে ততদিন এই মারপিট কমবে না। ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের মাপকাঠি অনুসারে একটি ১০০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসক সংখ্যা থাকা উচিৎ ২৯, কিন্তু সেখানে আসলে দেখা যাচ্ছে যে সেই হাসপাতালে চিকিৎসক সংখ্যা শয্যা-সংখ্যার অনুপাতে অনেক কম। আবার একটি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে ১১ জন চিকিৎসক থাকা প্রয়োজন, এমন জায়গায় রয়েছে যেখানে দু'জন কি তিনজন দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। ফলে চিকিৎসক নেই, নার্স নেই কিংবা চিকিৎসা কর্মীর অভাব ফলে সাধারণ মানুষ যাঁরা চিকিৎসা করতে আসছেন তাঁদের যেমন চূড়ান্ত অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে আর তাঁদের পুরো ক্ষোভটা গিয়ে পড়ছে চিকিৎসকদের ওপরে। তাই পরিকাঠামো ঠিক না করে শুধু মাত্র আইন প্রণয়ন করলে কোনও কাজের কাজ কিছুই হবে না।
পরিকাঠামো ঠিক না করে শুধু মাত্র আইনপ্রণয়ন করলে কোনও কাজের কাজ কিছুই হবে না
আমাদের অন্যান্য দাবিসমূহ, যেগুলো আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরি, সেগুলি হল: চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কয়েকটি আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে, কারণ এই সব আইনগুলো প্রয়োগ করার আগে একটি বিশেষ কমিটির মাধ্যমে যাচাই করে নিতে হবে যে সেই যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে সেগুলো কতটা ঠিক। এই বিশেষ কমিটিটি থাকলেও তার কোনও প্রয়োগ নেই।
উচ্চশিক্ষা বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ফলে এখন অনেক চিকিৎসক স্বেচ্ছায় গ্রামের হাসপাতালগুলোতে আর যেতে চাইছেন না।
সাবধান বার্তা সমস্ত হাসপাতালেই বড় বড় করে দেওয়ালগুলোতে লেখা রয়েছে
একদম শেষে অবসর নেওয়া পরে তাঁদের কোনও রকম সুবিধা দেওয়া হয় না। কিংবা কোনও চিকিৎসক অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি অবসর চাইলে তাঁকে অবসর দেওয়া হচ্ছে না, যাকে আমরা ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট বলে থাকি।

