রাজ্যে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের আধুনিক ওষুধের প্রশিক্ষণ চালু হচ্ছে না সরকারি দীর্ঘসূত্রতায়
স্বাস্থ্যবিভাগ আইএমএর ও এলোপ্যাথি চিকিৎসকদের বিরাগভাজন হতে চাইছে না
- Total Shares
সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ান মেডিসিন (সিসিএআইএম) আয়ুর্বেদ পাঠক্রম ঠিক করা ও সামগ্রিক পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। আধুনিক ওষুধ বা মডার্ন মেডিসিন যেমন অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, প্যথোলজি, ইনভেস্টিগেশন, অস্ত্রোপচার প্রভৃতি পাঠক্রমের একটি বিরাট অংশ এবং বেশ বিস্তারে পড়ানো হয়।
বিভিন্ন রাজ্যে যেমন কেরল ও মহারাষ্ট্রে মোটামুটি ভাবে ৭০ থেকে ৮০টি কলেজে আয়ুর্বেদ পড়ানো হয় থাকে। কারণ ওখানকার চিকিৎসাশাস্ত্র অনেকটাই আয়ুর্বেদ ওষুধের উপর নির্ভরশীল। তাই সিসিএআইএম অনেক আগেই একটি নিয়ম করেছিল, যে সব আয়ুর্বেদ চিকিৎসক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত কলেজ থেকে আয়ুর্বেদে স্নাতক করবেন, শুধুমাত্র তাঁরা আধুনিক ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা করতে পারবেন।

কিন্তু আমাদের রাজ্যে চিকিৎসকরা ঠিক কোন ওষুধ চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করতে পারবেন তার কোনও নির্দেশিকা ছিল না। এই বিষয়টি নিয়ে এখানকার আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনও চালাচ্ছেন।
২০১১ সালে রাজ্য সরকার একটি কমিটি তৈরি করে (HA/O/AYUSH/606/1A/44/2011 dated 9-2011), কমিটির সুপারিশক্রমে ২০১৩ সালে একটা বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। নির্দেশিকাতে ছিল যে একটি ওষুধের তালিকা তৈরি করা হবে যে ওষুধগুলো ব্যবহার করে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা চিকিৎসা করতে পারবেন। তবে ক্যান্সারের চিকিৎসায় যে ২২টি ওষুধ ব্যবহার করা হয় সেগুলো ছাড়া তালিকার বাকি ওষুধগুলো ব্যবহার করা যাবে।

যে তালিকাটি প্রকাশ হল তাতে দেখা গেল মোট ১২টি ওষুধ আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা ব্যবস্থার করতে পারবেন। আরও বলা হল যে পরবর্তী সময় তালিকাটিকে বাড়ানোর চিন্তাভাবনাও রয়েছে।
এখানেই দেখা দিল সমস্যা। কারণ চিকিৎসকদের যখন প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা করতে হয় তখন শুধুমাত্র তালিকাভুক্ত ১২টি ওষুধে কাজ চলে না। আপতকালীন অবস্থায় রোগীদের যে কোনও ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। তখন কী উপায় হবে? তাহলে কী রোগীকে ওষুধ না দিয়েই ছেড়ে দিতে হবে?
তাই আমরা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্ৰকাশ করি। কেন্দ্রীয় সরকার একটি বিল আনতে চেয়েছিলেন যাতে একটি ধারায় বলা হল যে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের একটা স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ (ব্রিজ কোর্স) করতে হবে তা হলেই তাঁরা আধুনিক ওষুধগুলোর সাহায্যে চিকিৎসা করতে পারবেন। কিন্তু ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল (আইএমএ)-এ বিলটির বিরোধিতা করল। যদিও সেই বিলটি সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে পাঠানোর পরে সেটি এখন হিমঘরে।

রাজ্য সরকারও তালিকাটিকে বাড়ানোর ব্যাপারটা ঝুলিয়ে রেখে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে তাই আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
বহু পাশ করা চিকিৎসক চাকরি পাচ্ছেন না। ইতিমধ্যে কমিউনিটি স্বাস্থ্য আধিকারিকের প্রায় ২৫০০ শূন্য পদের নিয়োগ করা শুরু হয়। কিন্তু সেখানে আয়ুর্বেদ চিকিৎসদের কোনও সুযোগই থাকে না কারণ বলা হয়েছিল যে নার্স ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের এই পদে নিয়োগ করা হবে তবে তার জন্য একটি ছ'মাসের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। কিন্তু দেখা গেল শুধু নার্সদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের জন্য প্রশিক্ষণটি এখনও চালু করা হয়নি।
তাই রাজ্যের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের দাবি অবিলম্বে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আয়ুর্বেদ চিকিৎসদের জন্যেও শুরু করা হোক। তা হলে তারাও এই শূন্য পদে আবেদন করতে পারবেন এবং এই যে একটা বিরাট বেকারত্বের সৃষ্টি হয়েছে সেটাও কিছুটা ঘুচবে। আমাদের রাজ্যে প্রায় চার বছরেরও বেশি সময় ধরে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের শূন্য পদের নিয়োগ বন্ধ হয় রয়েছে।

এর ফলে সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে চিকিৎসক মহলে অসন্তোষ ও বিক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।
আমার অনুমান রাজ্যের নীতিনির্ধারণ কমিটি কয়েকটি কারণে হয়তো আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে এই প্রশিক্ষণ এখনও চালু করেনি। প্রথমত, স্বাস্থ্য বিভাগ আইএমএর ও এলোপ্যাথি চিকিৎসকদের বিরাগভাজন হতে চাইছে না। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্য বিভাগ হয়তো প্রশিক্ষণটির সাফল্য বিচার করার জন্য এই পাইলট প্রজেক্টটি নার্সদের দিয়ে চালু করেছে। তবে এই নিয়ে কথাবার্তা অনেকটাই জাগিয়েছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আমি মনে করি আমরা যাঁরা আয়ুর্বেদ চিকিৎসক রয়েছি আমরা আয়ুর্বেদের চিকিৎসাশাস্ত্রে উন্নতির জন্য আরও গবেষণা করে যাব তবে এমন কোনও পরিস্থিতি যেখানে কোনও অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক নেই সেখানে কোনও রোগীর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আমাদের যদি ওই তালিকার বাইরে গিয়ে কোনও ওষুধ দিতে হয় সেই প্রক্রিয়াটিকে বৈধতা দেওয়া উচিৎ।

পাশাপাশি আমি মনে করি যেসব আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা এই বৈধতা পাবেন তাঁরা যেন সম্পূর্ণ ভাবে অ্যালোপ্যাথি নিয়েই মত্ত হয়ে না যায়।
পশমবঙ্গে চিকিৎসকদের সংখ্যা যেহেতু ঘাটতি রয়েছে তাই আমার মনে হয় দক্ষ আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সাধারণ মানুষের সেবার কাছে ব্যবহার করা উচিৎ।

