উচ্চশিক্ষার সুযোগ সঙ্কুচিত করে কেবল বিজ্ঞাপন দিয়ে সরকারি চিকিৎসক মেলে না
রাজ্যে প্রতিবছর অ্যালোপ্যাথিতে মোটামুটি ২৫০০ স্নাতক ও ১৫০০ স্নাতকোত্তর হচ্ছেন
- Total Shares
ন্যাশনাল হেলথ মিশন, ২০১৮ (National Health Profile-2018)-এর হিসাব অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে গ্রামীণ হাসপাতালের সংখ্যা হওয়া উচিত ৩৪৯। পাশাপাশি ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথের মাপকাঠি অনুযায়ী প্রত্যেকটি হাসপাতালে পাঁচজন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা। এই পাঁচজনের মধ্যে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, একজন মেডিসিনের চিকিৎসক, একজন অস্ত্রোপচার বিশেষজ্ঞ, একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও একজন অ্যানাস্থেটিস্ট। অর্থাৎ ৩৪৯টি হাসপাতালে মোট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৭৪৫ জন। তাই বাস্তবে যতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা তা না থেকে রয়েছেন মাত্র ১১৭ জন চিকিৎসক।
অর্থাৎ ৯৩.২ শতাংশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ ফাঁকাই রয়েছে।
প্রত্যেক বছর মোটামুটি ২৫০০ এমবিবিএস এবং ১৫০০ স্নাতকোত্তর চিকিৎসক পাস করে বেরোচ্ছেন
পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মী এবং আনুষঙ্গিক পরিকাঠামোর ঘাটতির ফলে ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে শয়ে শয়ে রোগী 'রেফার' হয়ে মহকুমা হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হয়ে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলোতে গিয়ে হাজির হচ্ছেন। ফলে সেখানে ভিড় উপচে পড়ছে।
যে রোগীর মহকুমা হাসপাতাল বা জেলা স্তরের হাসপাতালেই চিকিৎসা করা যেতে পারত সেখানেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী-সহ পরিকাঠামোর ঘাটতির জন্য রোগীদের বড় অংশকে অন্যত্র পাঠাতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। মহকুমা হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলোতেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ঘাটতি ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
ফলে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করে শেষ পর্যন্ত রোগীদের একাংশই শুধু হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন, আর যাঁরা পারেন না তাঁদের একটা বড় অংশ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে অবশেষে কর্পোরেট হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে বাধ্য হন।
৯৩.২ শতাংশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ ফাঁকাই রয়েছে
তিন বছর গ্রামে সরকারি চাকরি করলে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির পরীক্ষায় বসা যায়। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সেই সব মেডিক্যাল অফিসারের পদের ১০ শতাংশ চিকিৎসককে সরকার সবেতন দুই বা তিন বছরের জন্য এমডি, এমএস এবং ডিপ্লোমা (MD/MS/Diploma) পড়তে সুযোগ দেয়। পাস করার পর এই চিকিৎসকরা পাঁচ বছর গ্রামে পরিষেবা দেবেন এই মর্মে চুক্তিবদ্ধ হন। যে সব চিকিৎসক কমপক্ষে তিন বছর গ্রামে চিকিৎসা করেছেন এবং উচ্চশিক্ষার পরেও গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়োগ করা হলে চিকিৎসা করবেন বলছেন, সেই সব চিকিৎসকে উচ্চ শিক্ষায় বাধা দেওয়া, গ্রামের গরিব মানুষ ও চিকিৎসকের স্বার্থের পরিপন্থী নয় কি?
২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন ভাবে সরকার ট্রেনি রিজার্ভ বা টিআর দিয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকার যে তাদের তৈরি নিয়ম লঙ্ঘন করেছে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালেও তা প্রমাণ হয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন দিয়েও গ্রামের জন্য চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না অতএব যে সব চিকিৎসক গ্রামেচিকিৎসা করছেন তাঁদের বাদ দিলে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবা যেটুকু আছে তাও ধরে রাখা যাবে না।
এটা ঠিক যে মুদির দোকানে চিকিৎসক পাওয়া যায় না। তবে রাজ্যে প্রত্যেক বছর মোটামুটি ২৫০০ এমবিবিএস এবং ১৫০০ স্নাতকোত্তর চিকিৎসক পাস করে বেরচ্ছেন। তাঁরা কেন সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আসতে চাইছেন না তার কারণ খুঁজে সমাধানের চেষ্টা না করে কেবল বিজ্ঞাপন দিয়ে চিকিৎসক পাওয়া যাবে না।
বাস্তবে যতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা তা না থেকে রয়েছেন মাত্র ১১৭ জন চিকিৎসক
পরিকাঠামো, লোকবল, কাজের সুস্থ পরিবেশ, চিকিৎসকদের সঠিক বেতনের ব্যবস্থা, কাজের জায়গার নিরাপত্তা ও স্বেচ্ছাবসরের সুযোগের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার আশায় নবীন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ স্বাস্থ্য পরিষেবায় যোগ দেন।
তাই উচ্চশিক্ষার সুযোগ সঙ্কুচিত করে কেবল বিজ্ঞাপন দিয়ে চিকিৎসক পাওয়া যাবে না।

