বাঙালির হাত ধরে স্কুলপর্যায় থেকেই ঐতিহ্য-শিক্ষায় উদ্যোগী হরিয়ানা
মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রমে ঐতিহ্য সংরক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব
- Total Shares
ঐতিহ্য বাঁচাতে হলে দরকার সচেতনতা। শৈশব ও বাল্যকাল থেকে সচেতনতার পাঠ দিলে, তারা যখন বড় হবে তখন ঐতিহ্যকে বাঁচাতে উদ্যোগী হবে, ঐতিহ্য রক্ষায় আগ্রহী হবে। এ জন্য হরিয়ানায় মাধ্যমিক স্তর থেকেই পাঠ্যক্রমে ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
আমি চণ্ডীগড়ে থাকি। বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা ঐতিহ্য রক্ষায় ব্রতী হয়েছি। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পেরেছি। আমাদের অফিসের শুধু নয়, আমার-সহ বেশ কয়েকজনের মোবাইল ফোন নম্বর বিভিন্ন গ্রাম-শহরের মানুষের কাছে এখন রয়েছে। কেউ হয়তো অন্যরকম কোনও মুদ্রা দেখতে পেলেন, যোগাযোগের নম্বর থাকার ফলে তাঁরা দ্রুত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাতে সেই নিদর্শনটি অক্ষত অবস্থায় আমাদের হাতে আসে। অনেক সময় দেখা যায় সেটি হয়তো মুদ্রা নয় বা আদৌ কোনও পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন নয়, কিন্তু লোকে তো সেটি ফেলে দিচ্ছে না বা নষ্ট করছে না।
প্রাচী শিবমন্দির, কুরুক্ষেত্র
তারপরেই একবারে বিদ্যালয়-স্তর থেকে সচেতন করার ভাবনা আসে। পরিকল্পনা করি। তারপরে তা নিয়ে অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের সঙ্গে আলোচনা করি। প্রস্তাবটি তাঁর পছন্দ হয়। সরকার উদ্যোগী হয়ে ঐতিহ্যকে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য।
পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা কোনও ঐতিহ্যস্থল পরিষ্কার রাখতে পারবে, সৌন্দর্যায়নের জন্য সেখানে তারা ছোট ছোট গাছ লাগাতে পারবে। সেখানে বসে তা ছবি আঁকতে পারবে, ছবি তুলতে পারবে এবং যে ভাবে বিভিন্ন বিষয়ের সাইটেশন পেপার তৈরি করতে হয়, তাদের সেই কাজও করতে হবে। তবে এ জন্য নির্দিষ্ট নম্বর বরাদ্দ থাকবে কিনা এখনও সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রতিটি স্কুলের সেরা ছাত্রছাত্রীকে শংসাপত্র বা সর্টিফিকেট দেওয়া হবে।
ডেহরা মন্দির, ফিরোজপুর
নিজের জেলার মধ্যেই তাদের এই কাজ করতে হবে। যে সব শিক্ষকশিক্ষিকা এই কাজে সহায়তা করবেন, তাঁদের সার্ভিস রেকর্ডে এটি যুক্ত হবে। রাজ্যের সব স্কুলেই এই প্রকল্প চালু হবে, তবে একেবারে প্রাথমিক ভাবে আমরা মডেল স্কুলগুলি থেকেই তা চালু করব।
এ ছাড়া স্কুলে স্কুলে একটি করে হেরিটেজ কর্নার থাকবে। সহজ ভাবে বলতে গেলে, দেওয়াল পত্রিকা যেমন হয়, সেই ভাবে এখানে জেলার বা হরিয়ানা রাজ্যের কোনও নিদর্শন নিয়ে লেখা থাকতে পারে। স্কুলটি হরিয়ানা জেলায় অবস্থিত, সেই ইতিহাস থাকতে পারে। কোনও প্রত্নস্থলের রেপ্লিকাও থাকতে পারে। ধরা যাক কোনও একটি জেলা গঠনের পর থেকে ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার সময় পর্যন্ত সেই জেলার ইতিহাস লেখা রইল, বা কখনও কোনও একটি বিশেষ পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সম্বন্ধে লেখা হল।
ওল্ড বাদশাহী ব্রিজ, উঁচাসিওয়ান
আমরাও স্কুলে স্কুলে গিয়ে উৎসাহ দেব, প্রশিক্ষণ দেব, তাদের কাজে সহায়তা করব। এ জন্য যা খরচ হবে তা সরকারই বহন করবে।
আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। এ দেশের ইতিহাসও সমৃদ্ধ। কিন্তু অনেক সময়ই উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলি নষ্ট হয়ে যায়। নিদর্শন নষ্ট হয়ে যাওয়ার বড় কারণ হল অসচেতনা। আমরা চাই ছাত্রাবস্থা থেকেই সকলে সচেতন হোক। তাতে দেশের ঐতিহ্য রক্ষিত হবে।